মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বিশ্বখ্যাত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ, ভাষাবিদ এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ইমেরিটাস অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি বলেছেন যে, সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বহন করছে। দ্য ইকোনমিস্টের আমন্ত্রণে আমেরিকান শক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চিন্তাবিদদের ধারাবাহিক মতমতের অংশ এমন্তব্য করেছেন ১৫০টিরও বেশি বইয়ের লেখক চমস্কি। দ্য ইকোনোমিস্টে প্রকাশিত তার লেখাটি ৩ পর্বে তুলে ধরা হ’ল।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার কয়েক সপ্তাহ পর অক্টোবরে আফগানিস্তানের তালেবান বিরোধী প্রতিরোধের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব আবদুল হকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এই অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ আনাতোল লিভেন। আবদুল হক যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এতে অনেক আফগানের প্রানহানি ঘটবে এবং শিকড় থেকে তালেবানকে উৎখাতের প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার পেশী দেখানোর, বিজয় অর্জনের এবং বিশ্বের সবাইকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তারা আফগানদের দুর্ভোগের কথা বা আমরা কত মানুষকে হারাবো, চিন্তা করে না।’
দেখা যাচ্ছে যে, হকের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রাম্সফেল্ডের কার্যকলাপ থেকে খুব বেশি দূরের ছিল না। ২০০১ সালে যখন তালেবান আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছিল, তার ২০ বছর পর হকের মন্তব্য সত্য প্রমানিত হয়েছে। যদি ওসামা বিন লাদেনকে ধরার কারণ থাকত (যেটা তখন স্পষ্ট ছিল না, সে তখন শুধুমাত্র একজন সন্দেহভাজন ছিল), তাকে ধরার সঠিক পদ্ধতি ছিল তালেবানদের সম্ভাব্য সহযোগিতায় একটি পুলিশী অভিযান (তারাও তার থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিল)। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পেশীশক্তি প্রদর্শনী করার ছিল, যা দেশটি সাম্প্রতিক সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে একটি নৌবহর পাঠিয়ে করে যাচ্ছে। এবং বিশ^বাপি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রদর্শনী চলছে তো চলছেই।
মার্কিন শক্তির ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন একটি অত্যন্ত অনিশ্চিত উদ্যোগ। দুনিয়া যে দুর্যোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তা নিয়ে মাথাব্যাথার অবকাশ নেই যুক্তরাষ্ট্রের। যদি নেতিবাচক রিপাবলিকান পার্টি ক্ষমতায় ফিরে আসে, তাহলে পরিবেশ ধ্বংস রোধে দায়িত্বশীল নীতি অনুসরণ করার সম্ভাবনাগুলি দ্রুত হ্রাস পাবে। ততক্ষণে, আমরা অন্তত মার্কিন শক্তির প্রধান ভিত্তিগুলিকে চিহ্নিত করতে পারি। যেমন, বৈশ্বিক শৃঙ্খলার অবস্থা, আমেরিকার শক্তির গতিপথ এবং আমেরিকার ক্রিয়াকলাপ বৈধতা দিতে উত্থাপিত যুক্তি সমূহ।
প্রথমেই আসে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা। বিশে^ সামরিক শক্তির ভারসাম্যহীনতা এতটাই চরম যে, মন্তব্যের প্রয়োজন খুব কমই বলে মনে হয়। এসআইপিআরআই অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে ৭ শ’ ৭৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, যেখানের চীনের সামরিক ব্যয় ২ শ’ ৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ভারতের নিচে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ৬২ বিলিয়ন ডলার। প্রতিপক্ষের সীমান্তে কথিত হুমকি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কোনও বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখোমুখি নয়। তারপেরও, বিশ্বজুড়ে ৮ শ’ সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের রয়েছে। সেদিক থেকে চীনের একটি মাত্র বিদেশী ঘাঁটি রয়েছে জিবুতিতে।
জরুরী প্রয়োজনে অর্থের অভাবপূর্ণ বিশ্বে এই উন্মাদনা পরিবেশ ধ্বংসে যথেষ্ট অবদান রাখছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম পরিবেশ দূষণকারী। তারা বেশি তরল জ্বালানি ব্যবহার করে এবং অধিকাংশ মাঝারি আকারের দেশের তুলনায় জলবায়ুর বিপর্যকারী গ্যাস নির্গমন করে।
যুকক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার অর্থনৈতিক ভিত্তি আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত বৈশি^ক জিডিপির ৪০ শতাংশ ছিল, যা অনিবার্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু সিটি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ শন স্টার্সের ২০১৪ সালের গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনেক ব্যবসায়িক খাতে বহুজাতিক মার্কিন মুনাফা ৫০ শতাংশের বেশি, এবং অধিকাংশ খাতে শীর্ষ (কখনও কখনও দ্বিতীয়) স্থান পেয়েছে; অন্যরা এর থেকে অনেক পিছিয়ে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।