বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
‘প্রতিবাদের মুখে পেছাতে পারে বগুড়া সদর বিএনপির সম্মেলন’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় শুক্রবার বিকেলে দৈনিক ইনকিলাবের অনলাইন সংস্করণে। সংবাদটি যখন বগুড়া বিএনপির কিছু নেতা কর্মী সংগঠক ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য করছিল ঠিক তখন বগুড়া সদর বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির নেতারা বগুড়া সদরের হাজরাদিঘী গ্রামের সম্মেলন ভেন্যু পরিদর্শন করছিলেন।
বাদ মাগরিব বগুড়া শহর বিএনপির কার্যালয়ে বগুড়া সদরের এক প্রাক নির্বাচনী সভা চলাচলে বিএনপির সিনিয়র নেতা ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা যেকোন মূল্যে ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখেই সম্মেলন হবে এবং যারা (তার ভাষায়) এই সম্মেলন বানচাল করার চেষ্টা তাদেরকে তিনি কুকুরের সাথে তুলনা করেন। সভায় কয়েকজন নেতা গোপন ব্যালটে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ভোট আয়োজনের ব্যবস্থা করার কথা বলার চেষ্টা করলে তাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে বক্তব্য থামিয়ে দেওয়া হয়।
তবে শনিবার সকালেই বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ ঢাকা থেকে টেলিফোনে বগুড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাড সোলায়মান আলীকে জানিয়ে দেন, হাইকমান্ড ২৮ তারিখের বগুড়া সদরের সম্মেলন স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। একই কথা তিনি বগুড়া সদর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আলী আজগর হেনা এবং বগুড়া সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির সভাপতিকেও জানিয়ে দেন ।
শনিবার দুপুরে দৈনিক ইনকিলাব বগুড়া ব্যুরোর পক্ষ থেকে এ্যাড সোলায়মান আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় বগুড়া সদরের সম্মেলন স্থগিত করার ঘটনা সত্য কি না? জবাবে এ্যাড, সোলায়মান জানান, ঘটনা সত্য। সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। তবে কেন সম্মেলন স্থগিত করা হল তা’ তিনি জানেননা।
বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকও জানান , জেলা আহ্বায়ক তাদেরকে ফোনে সম্মেলন স্থগিত করার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে ঠিক কি কারণে হঠাৎ করে বিএনপি বগুড়া সদরের সম্মেলন ঘোষণা আবার তা’ স্থগিত করা হল সেটা অনুসন্ধান কালে জানা যায় তিন বছর আগে বগুড়া জেলা বিএনপির বিদ্যমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে জ্যৈষ্ঠ নেতা জি এম সিরাজকে জেলা আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি করে দেওয়া হয় । পাশাপাশি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে দলের সব অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন করে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নতুন পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয় ।
সেই অনুযায়ী, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, কৃষকদল সহ প্রায় সব অঙ্গ সংগঠনের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি দলের নতুন আহ্বায়ক জিএম সিরাজের বিরোধিতা করায় বেশ কয়েকজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে বগুড়া সদর সংসদীয় আসনের এমপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদে যোগদান না করায় তার আসনটি শূন্য ঘোষিত হয় এবং বগুড়া সদর আসনের জন্য জিএম সিরাজকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় বিএনপি হাই কমান্ড। ফলে নির্বাচন জনিত কারণে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়।
এরপর তিন বছর পার হলেও বগুড়া জেলা বিএনপি বা এর কোন অঙ্গদলরেই নির্বাচন বা সম্মেলন কোনটাই করা হয়নি। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডে ক্ষোভ সৃষ্টি হলে সম্প্রতি বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভায় আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব অঙ্গদল ও জেলার সম্মেলন ও নির্বাচন করার কর্মসূচি নেওয়া হয়।
কর্মসূচি অনুযায়ী বগুড়া সদরের জন্য একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয় এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রত্যেক ইউনিয়ন কমিটি গোপন ব্যালটে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠনের দিক নির্দেশনা দেওয়া হলেও সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে ইউনিয়ন গুলোতে পকেট কমিটি গঠন করে হঠাৎ ২৮ তারিখে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনের দিন ঘোষণা করা হয় । তবে এজন্য কোন নির্বাচনী কমিটি গঠন বা তফসীল ঘোষণা না করে একতরফাভাবে কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া সম্মেলনের দিনে যেন হাঙ্গামা বা সংগঠিত প্রতিবাদ হতে না পারে সেজন্য জেলা সদরের বাইরে নুনগোলার হাজরা দিঘী গ্রামে সম্মেলনের ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর এসব জানতে পেরে বগুড়া সদর বিএনপির সিনিয়র নেতা যথাক্রমে মাইদুল ইসলাম গফুর, আমিরুল ইসলাম, ফার্মার রফিকুল ইসলাম ও শামীম রেজা পৃথক পৃথকভাবে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের দাবি করলে দলের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই তথ্যগুলো সংবাদ আকারে ইনকিলাব সহ একাধিক মিডিয়ায় প্রকাশ হলে বিব্রত হয় দলের হাইকমান্ড। যার ফলশ্রুতিতে হঠাৎ ঘোষিত সম্মেলনের তারিখ নাটকীয়ভাবে স্থগিত হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।