পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একসময় যে দেশটি তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে আখ্যায়িত ছিলো এখন বলা হচ্ছে ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে দেশটি এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হতে তিনটি শর্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ তিনটি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও তিনটি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয় দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পর পর দুটি ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ সেই সুপারিশ পেয়েছে। জাতিসংঘের তিনটি শর্তের প্রথমটি হচ্ছে, মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন।
শুরুতে কৃষিখাত বড়ো ভূমিকা রাখলেও ৮০’র দশক থেকে মূল ভূমিকা রাখতে শুরু করে শিল্পখাত। কৃষিনির্ভরতার পাশাপাশি দেশ এখন শিল্পনির্ভরতার দিকে এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের সহায়তায় বেসরকারি খাতের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপিতে শিল্পের অবদান প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বাংলাদেশ আজ এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। পরপর তিনটি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশ। দেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়, শিল্পসমৃদ্ধ দেশ গঠনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হবে বলে, আশা করা যায়।
করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় দেশে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প এবং মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সে মোতাবেক রাজধানীর মধ্যেই নয়, ঢাকার বাইরেও শিল্প বিকাশে মনোযোগী সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বেসরকারি খাতের বিকাশে দেশের শিল্পখাতে ঘটছে বিপ্লব। ক্ষুদ্র, ছোটো, মাঝারি, বৃহৎ, এমনকি ভারি শিল্পের বিকাশ ঘটছে বেসরকারি খাতের মাধ্যমেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠছে ক্লাস্টারভিত্তিক ছোটো ছোটো শিল্পকারখানা। স্বাধীনতার পর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উল্লেখ করার মতো একমাত্র শিল্প ছিল পাটশিল্প। এরপর পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠেছে তৈরি পোশাকশিল্প, যা এখনো মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। এখাতে সরাসরি অন্তত ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজসহ প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান এখাতের ওপর নির্ভরশীল, যার পুরোটাই বেসরকারি খাতের ওপর দাঁড়িয়ে। আর কৃষিভিত্তিক শিল্প, রড, সিমেন্ট, বিভিন্ন ধরনের রং, রাসায়নিক, ওষুধ, জাহাজভাঙা ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ বহু শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে সময়ের ব্যবধানে। গত এক দশকে শিল্পায়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে কয়েক গুণ। বেড়েছে কর্মসংস্থান। ফলে আমূল পরিবর্তন এসেছে রপ্তানি খাতে। গত এক দশকে রপ্তানি আয় বেড়েছে কয়েক গুণ। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) তত্ত্বাবধানে সারাদেশে গড়ে উঠছে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল। শুধু চট্টগ্রামের মিরেরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী জুড়ে ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে উঠছে সুপরিকল্পিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী।
২০৩০ সালের মধ্যে এটির কাজ শেষ হবে। অবশ্য চলতি বছরের মধ্যেই অন্তত ২০টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি উৎপাদনে যেতে কারখানা স্থাপনের কাজ করছে অবিরাম। একসময়ের কৃষিপ্রধান দেশ হতে যাচ্ছে শিল্পসমৃদ্ধ। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের মতে, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বড়ো ভূমিকা রাখবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। বড়ো বড়ো উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর হবে দেশের সবচেয়ে সুন্দর শিল্পশহর। বৈচিত্র্যময়, আধুনিক ও সবুজ এ শিল্পনগরে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসবেন উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী ২০০০-০১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে শিল্পখাতের অবদান ছিল ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
দেশের কর্মক্ষম সাড়ে ৮ কোটি মানুষের অন্তত ৮০-৮৫ শতাংশেরই জীবিকা জড়িত বেসরকারি খাতের সঙ্গে। ফলে বেসরকারি খাতই হয়ে উঠেছে শিল্পের চালিকাশক্তি। দেশে শিল্পের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৮ হাজারের বেশি। এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত আড়াই কোটি মানুষ। এর পুরোটাই বেসরকারি খাতের হাত ধরে প্রসারিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড এসএমই ফোরামের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের হাত ধরে ৭৮ লাখ শিল্পের মধ্যে ৬০ লাখ ৮০ হাজারই কুটিরশিল্প। এ ছাড়া ক্ষুদ্র শিল্প ১ লাখ ১০ হাজার, ছোটো শিল্প ৮ লাখ ৫০ হাজার, মাঝারি শিল্প ৭১ হাজার আর বৃহৎ শিল্প রয়েছে ৫২ হাজার। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পঞ্চম স্থানে থাকা বাংলাদেশ এসএমই শিল্পসংখ্যায় বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। এখন দেশে এসএমই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭৩ লাখ। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী জুড়ে ৩০ হাজার একরের বেশি জমিতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী। বৃহত্তম এ শিল্পনগরীতে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এখানে ৬২টি কোম্পানিকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পোশাক খাতের ৪১টি এবং এর বাইরে আরো ১০টি কোম্পানির সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন জমি ভরাটসহ প্রাথমিক কাজ করছে। এসব জায়গায় এবছর আরো ২০টি শিল্প নির্মাণের কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছে। এখানেই অন্তত ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে, আশা করা হচ্ছে। এ শিল্পনগরীতে বড়ো বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে চীনের জিয়াংসু ইয়াবাং, জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি), সিসিইসিসি বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার এইচএ টেক, ভারতের রামকি এনভার সার্ভিস, জার্মান ও ভারতের যৌথ অংশিদারিত্বে ফরটিস গ্রুপ, নেদারল্যান্ডসের লাইজার্ড স্পোটর্স, সিঙ্গাপুরের ইন্টার এশিয়া গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানি। দেশি কোম্পানির মধ্যে মেট্রো স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং ও টেক্সটাইল, সামুদা ফুড, উত্তরা মোটরস, বিজিএমইএ, সায়মান বিচ রিসোর্ট, ম্যাফ সুজ, বিজিএপিএমইএ, এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক, ইফাদ অটোস, রানার মোটর, সাইফ পাওয়ার, ডেল্টা ফার্মা, এশিয়া কম্পোজিট মিলসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। আর এর সবই বিস্তৃত হবে সরকারি সহায়তায় বেসরকারি খাতের হাত ধরে। এদিকে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে পোশাকপল্লিতে যাচ্ছে ৪১ কোম্পানি। এসব কোম্পানির ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।