চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আমাদের সমাজে নানান রকমেরর অপরাধ হয়ে থাকে। এগুলোর ভয়াবহতা নির্ণয় করা হয় একেকটা অপরাধের ধরণ হিসেবে। তবে বর্তমান সমাজে স্পষ্টভাবে বলার মত যেই কয়টা অপরাধ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল, ওয়ারিশদের সম্পত্তি আত্মসাৎ। জামি-জামার বিরোধ সর্বত্রই রয়েছে। জামি-জামার বিরোধকে কেন্দ্র করে সমাজে নানান ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। কোন কোন জায়গায় হতাহতের মতো ঘটনাও ঘটে। দুনিয়াতে এতকিছু হওয়ার পরও এই অপরাধটা এতো নরমাল হয়ে গেছে যে, মানুষ এই জঘন্য অপরাধটা করার সময় এতটুকুনও ভাবছে না যে, পরকালে এর পরিণতি কী হবে?
ওয়ারিশদের মধ্য হতে বর্তমানে বেশি অবহেলিত হচ্ছে মেয়েরা-বোনেরা। অর্থাৎ- মৃতব্যক্তির মেয়েরা। বিয়ের পর যখনই মেয়ে বা বোন স্বামীর বাড়ি চলে যায়; তখনই ভাইয়েরা ঐবোনের সম্পদ লোটে খাওয়া শুরু করে। বিভিন্ন উপায়ে তাদেরকে বঞ্চিত করার পায়তারা করে। অথচ পবিত্র কোরআনুল কারীম তাদেরকেও অংশ দিয়েছে। কোরআনের ভাষায় দুই মেয়েকে এক ছেলের সমপরিমাণ সম্পদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তাদের সম্পদও আজ ভাইয়েরা এভাবে লোটে খাচ্ছে যে, ভাবছে এতে কোন গুনাহই নেই। বিষয়টি খুবই নরমাল করে দেখছে তারা।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের উপর দুই ধরণের হক রয়েছে। এক হল, আল্লাহর হক। দুই হল, বান্দার হক। এই দুটি হকের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে - আল্লাহর হক। আর সবচেয়ে জটিল হচ্ছে - বান্দার হক। মানুষ যদি আল্লাহর কোন হক নষ্ট করে তাহলে আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তা মাফ করে দেন। পক্ষান্তরে কেউ যদি অন্যকোন মানুষের হক নষ্ট করে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ বান্দা তা মাফ না করবেন ততক্ষণ স্বয়ং আল্লাহও মাফ করবেন না। মূলতঃ এই জন্যেই ইসলাম ধর্মে বান্দার হককে এতো গুরুত্ব দিয়েছে। এক হাদিসে নবিজি সা. বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা শহীদের যাবতীয় অন্যায় মাফ করে দেন। কিন্তু ঋণ মাফ করবেন না। কেননা, এটা বান্দার হক।
এখানে চিন্তা করে দেখার বিষয় হচ্ছে, একজন শহীদ যার সকল অপরাধ মাফ করে দেয়া হয়। শাহাদাত বরণের সাথে সাথে যে জান্নাতে প্রবেশ করে। তার ক্ষেত্রে যদি বিষয়টি এমন হয় যে, সাধারণ একজন মানুষের হক নষ্ট করার অপরাধ আল্লাহ্ মাফ না করেন; তাহলে সাধারণ একজন মানুষ যদি কাছের কোন মানুষের হক নষ্ট করে তাহলে কী অবস্থা হবে(?) তার পরিণতি কতটুকু ভয়াবহ আর ভয়ানক হবে তা কল্পনাও করা যায় না। মানুষ যেন এই পরিণতির শিকার না হয় এজন্য আল্লাহ্ তায়ালা সতর্ক করেছেন। বলেছেন, আর যারা অন্যায়ভাবে এতীমদের সম্পদ আত্মসাৎ করে তারা মূলত তাদের পেটে আগুন ঢুকাচ্ছে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরা নিসা: আয়াত ১০)
হযরত আয়েশা সিদ্দিকী রা. সূত্রে বর্ণিত, মহানবি সা. বলেছেন- যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত পরিমাণ সম্পত্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবর (স্তর) জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী ২৪৫৩, মুসলিম ১৬১২)
প্রিয় পাঠক! একজন মুমিন, ভয়ানক এ অপরাধ থেকে ফিরে আসার জন্য আরো কোন সতর্কবাণীর প্রয়োজন আছে কি? একজন মুমিন-মুসলমান সাধারণ এই দুনিয়ার জন্য কিভাবে এই জঘন্য অপরাধ করতে পারে? কিভাবে পারে নিজেরই রক্তের হক আত্মসাৎ করতে? আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।