পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
লকডাউন উঠে যাওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছুই খুলে যায়। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, গণপরিবহন ইত্যাদি সচল হওয়ায় সেই পুরনো সমস্যা যানজট রাজধানীসহ সড়ক-মহাসড়কে মারাত্মক আকার ধারণ করে। কিছুদিন আগে রাজধানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় একটি ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে মহাখালি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে কয়েক ঘণ্টা ধরে যানজট লেগে থাকে। এর প্রভাবে সারা শহরে সারাদিন ধরে অব্যাহত থাকে যানজট। মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগের সীমা-পরিসীমা থাকে না। এখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা একটা কারণ বটে; তবে কারণ ছাড়াই প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। শুধু রাজধানীতে নয়, সড়ক মহাসড়কগুলোতেও প্রায় প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। কয়েক ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে, দিন-রাত পর্যন্ত কাবার হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, এতদিনেও যানজট পরিস্থিতির এতটুকু ইতরবিশেষ হয়নি। গতকাল থেকে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, অতঃপর যানজট, বিশেষকরে রাজধানীতে, ভয়াবহরূপ ধারণ করতে পারে। যানজট মানুষের উৎপাদনশীলতা ও কর্মক্ষমতার ওপরই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলায় না, আর্থিকভাবেও তাদের অপূরণীয় ক্ষতির শিকারে পরিণত করে। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে, প্রতিদিন যানজটে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এক কর্মঘণ্টায় ক্ষতি হয় প্রায় ৭০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য ক্ষতিও আছে। ওই ইন্সটিটিউটের হিসাবে, প্রতিবছর টাকার অঙ্কে ক্ষতি হয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এত বিপুল ক্ষতি আমাদের বহন করতে হচ্ছে সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, ট্রাফিক শৃঙ্খলার অভাব এবং সড়কের স্বল্পতা ও অপ্রসারতার কারণে। রাজধানীর অপরিকল্পিত বিস্তার, রাস্তাঘাটের অপ্রতুলতা, মেগাপ্রকল্পের কাজের দীর্ঘসত্রিতা বিভিন্ন সেবাসংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি এর যানজটের প্রধান কারণ।
রাজধানীতে মেট্রোরেল, বিআরটি ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে প্রায় ১০ বছর ধরে। ঠিকমতো কাজ হলে এতদিন এসব মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যেতো। ধীরগতি ও গাফিলতির কারণে কাজ শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে, নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, কাজ শেষ হতে আরো কয়েক বছর লাগতে পারে। ইতোমধ্যে প্রকল্পগুলোর ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি মানুষের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনারও কোনো শেষ নেই। ওদিকে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন ইত্যাদি সেবাসংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে। সারাবছর ধরেই চলে। এজন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, প্রায় ৬শ’ কিলোমিটার রাস্তা এ মুহূর্তে খোঁড়াখুঁড়ি ও কাটা-ছেঁড়া অবস্থায় রয়েছে। রাস্তা মেরামত সংস্কার করা হয়নি; ফেলে রাখা হয়েছে। যারা মেগাপ্রকল্পের কাজ বিলম্বিত করেছে কিংবা ভাঙা-চোরা, খানাখন্দকেভরা রাস্তা ফেলে রেখেছে, তাদের কোনো অসুবিধা নেই। তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছে, উপরি পাওয়ার অভিযোগও আছে। কাজে ধীরতা ও কাজ ফেলে রাখলে বরং তাদের লাভ। নিয়মিত জবাবদিহিতার ব্যবস্থা যদি থাকত, দুর্নীতি বা কর্তব্যে অবহেলার জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা যদি নিশ্চিত হতো, তাহলে এ ধরনের অবস্থা কখনোই তৈরি হতো না। প্রশাসনের কর্মকর্তা হোক, পুলিশের হোমরা-চোমরা হোক কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তা হোক, তারা রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুবিধাভোগী শ্রেণী। তাদের সব ক্ষেত্রে এক ধরনের গ্যারান্টি আছে। অথচ তাদের মধ্যেই এমন কিছু লোক আছে, যারা অন্যায়,অপকর্ম, দুষ্কৃতি, অর্থলোপাট, কর্তব্যে অবহেলা ইত্যাদি অপরাধ অবলীলায় করে যাচ্ছে। এজন্য তারা কোনো নৈতিক দায়বদ্ধতা অনুভব করে না। সরকারের তরফেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানজট, জনগণের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে আনা মোটেই অসম্ভব নয়। সড়ক-মহাসড়কে থেকে অলিগলি পর্যন্ত সর্বত্র দখল ও প্রতিবন্ধকতা মুক্ত করা গেলে এটা সম্ভব। রাজধানীর যানজট নিরসনে যত দ্রুত সম্ভব মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে হবে। যানজট মোচনের জন্যই মেগা প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে। অথচ সেগুলো সমাপ্ত না হওয়ায় মানুষ তাদের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। কাজেই, জরুরি ভিত্তিতে মেগাপ্রকল্পগুলো শেষ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সেবাসংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ অবিলম্বে শেষ করতে হবে। ভাঙা-চোরা রাস্তা সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে অনেক দিন ধরে অভিযোগ করা হচ্ছে। এর কোনো প্রতিকার নেই। ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ, টেলিফোন বিভাগ প্রভৃতি তাদের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। এজন্য দুই সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে তারা অনুমতি নিয়ে থাকে। এ কাজের তত্ত্বাবধায়ক দুই সিটি করপোরেশন। তারা বিভিন্ন সংস্থার কাজের মধ্যে কার্যকরভাবে সমন্বয় সাধন করতে পারলে রাস্তা ও গলি-উপগলির ভগ্ন ও বেহাল দশা সৃষ্টি হতে পারতো না। এক্ষেত্রে সমন্বিত কার্যব্যবস্থা জরুরি এবং অবশ্যই তা করতে হবে। পাশাপাশি পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি বিধান করতে হবে। এসব করা গেলে যানজট এবং যানজটজনিত দুর্ভোগ ও ক্ষতি কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।