Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবেশ নিয়ে মোদিকে চাপে রাখতে আন্দোলন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:১১ পিএম

পরিবেশ-কেন্দ্রিক উন্নয়নের জন্য মানুষকে বোঝাতে ও মোদি সরকারকে চাপে রাখতে আন্দোলন শুরু ভারতে। দেশটিতে পরিবেশ-কেন্দ্রিক উন্নয়ন হচ্ছে না, বরং উন্নয়নে জন্য পরিবেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

একসময় কে এন গোবিন্দাচার্য ছিলেন বিজেপি-র সব চেয়ে বড় তাত্ত্বিক নেতা এবং আরএসএসের প্রচারক। কিন্তু তিনি বিজেপি এবং আরএসএস ছেড়ে দিয়েছেন অনেক দিন হলো। গোবিন্দাচার্য এখন গঙ্গা-যমুনা-নর্মদা যাত্রা করছেন। উদ্দেশ্য, ভয়ংকর দূষণের হাত থেকে নদীগুলিকে বাঁচানো। দূষিত গঙ্গা-যমুনার কথা মানুষকে বলা এবং তাদের কী কর্তব্য আছে যমুনাকে বাঁচাতে, সেই কথাটা পরিষ্কারভাবে জানানো। শুধু এটুকুই নয়, তারা মানুষকে বোঝাচ্ছেন, পরিবেশকেন্দ্রিক উন্নয়ন না হলে ভারত কতটা বিপাকে পড়বে।

এই যাত্রা শেষ হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর, প্রয়াগে। এখানেই গঙ্গার সঙ্গে মিশেছে যমুনা। এখানেই শেষ নয়। দেশকে পরিবেশ ও জলবায়ুর ভিত্তিতে ১২৭টি এলাকায় ভাগ করেছেন তারা। সেই প্রতিটি জায়গায় গোবিন্দাচার্য সহ আন্দোলনের নেতারা যাবেন। মানুষকে বোঝাবেন। সরকারের উপর চাপ তৈরি করবেন। ডয়চে ভেলেকে গোবিন্দাচার্য বলেছেন, ‘গত কয়েকশ বছর ধরে পরিবেশের তোয়াক্কা না করে শুধু মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেল নিয়ে কাজ হয়েছে। এর ফলে পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তার প্রভাব মানুষের জীবনে পড়েছে। প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এখন উন্নয়নের মডেলের বিপুল পরিবর্তন দরকার। এখন পরিবেশ-কেন্দ্রিক উন্নয়নের দিকে আসতে হবে।’

গোবিন্দাচার্য জানিয়েছেন, ‘জল-জঙ্গল-জানোয়ার, জমিকে বাঁচিয়েই উন্নয়ন করতে হবে। সেখানে জলের অনুকূল জীবন হওয়া দরকার। এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য এবং সাধারণ মানুষ যাতে এই অন্য উন্নয়ন মডেলে সামিল হতে পারেন এবং নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্যই এই প্রয়াস।’ এখানে গোবিন্দাচার্য একা নন। তার সংগঠন স্বাভিমান আন্দোলন তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে প্রচুর ছোট-বড় সংগঠন, যারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নিজেদের সাধ্যমতো এই কাজ করছে। এখন তাদের সংঘবদ্ধ করে দেশজুড়ে বড় আকারে এই আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন গোবিন্দাচার্যরা। ইতিমধ্যেই শতাধিক সংগঠন একজোট হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরো সংগঠনকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার কাজ চলছে।

পরিবেশবিদ ও নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকারের মতে, ‘একদিনে তো এটা বদলানো সম্ভব নয়। একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হবে।’ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘এখন যে সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সেখানে স্কুল পর্যায় থেকে বাচ্চাদের সচেতন করতে হবে। না হলে, প্রয়োজনীয় সচেতনতাহবে না।’ তার মতে, ‘কর্পোরেটগুলিকে আরো বেশি করে নজরে আনতে হবে। না হলে, শুধু শিক্ষার মধ্যেই বিষয়টা সীমিত থাকবে। বাস্তবায়িত হবে না। তাছাড়া জাতীয় নীতি বদলাতে হবে। কর্পোরেটের হাতে পুরো কাঠামো চলে যাচ্ছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।’

পরিবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উপর প্রবল বিদেশি চাপ রয়েছে। চলতি বছরের গোড়ায় জি২০ বৈঠকেও এই চাপ এসেছে। ভারত যাতে জিরো এমিশনের লক্ষ্যপূরণে একটা তারিখ জানায়, সে নিয়ে চাপ আসছে। নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের মডেলে পরিবেশ খুব একটা গুরুত্ব পায় না বলে অতীতে দেশের ভিতরে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। মোদী অবশ্য পরিবেশ রক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। ইলেকট্রিক গাড়িতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। বিকল্প জ্বালানিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদি জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলেছেন। ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশনের কথা বলেছেন। প্রশ্ন উঠছে, এটা কি যথেষ্ট? মোদি ক্ষমতায় এসে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সাত বছর পরেও গঙ্গায় সেরকম কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বায়ুদূষণের তালিকায় সব চেয়ে খারাপ শহরের তালিকায় দিল্লি একেবারে উপরের দিকে আছে। জিরো এমিশনের কোনো তারিখ ভারত দিতে পারেনি।

গোবিন্দাচার্যরা বলছেন, একদিনে এই কাজ হবে না, সেটা তাদের জানা। তারা এখন মানুষকে সচেতন করার জন্য দেশজুড়ে প্রয়াস চালাচ্ছেন। কারণ, পরিবেশরক্ষায় সরকার ও সাধারণ মানুষ দুই তরফেরই দায়িত্ব আছে। মানুষ সচেতন না হলে বদল আসবে না। মানুষ সচেতন না হলে সরকারের উপর চাপ তৈরি হবে না। তারা দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি নিয়েই চলছেন। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ