মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আমি যাদের সাথে কথা বলেছি, তাদের মধ্যে কয়েকজন আফগানিস্তানে তালেবানের জয়কে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইসলামের বিজয় হিসেবে মনে করেন এবং অন্যরা এটিকে এই উদাহরণ হিসাবে যে, পৃথিবীর কোন শক্তিই প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামকে নস্যাৎ করতে পারে না। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বা তারা বিশ্বাস করতে চায় যে, তালেবানরা পুরোপুরি বদলে গেছে এবং তাদের বর্বরতার পথে ফিরে আসবে না। তারাও দেখেছে যে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন হিসেবে কী ঘটেছে। তারা আশা করে যে, এটি কাশ্মীরিদের কিছুটা শ্বাস নেওয়ার জায়গা দেবে, কিছুটা মর্যাদার দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে।
বিড়ম্বনাটি ছিল এই যে, আমরা এই কথোপকথনগুলি বোমায় ক্ষত বিক্ষত একটি তৃণভূমিতে বসে করেছিলাম। তখন ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস এবং বিক্ষোভ ঠেকাতে কাশ্মীরে লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল। এক সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী উত্তেজনাপূর্ণভাবে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। অন্যদিকে, নিকটবর্তী লাদাখে চীনা সেনাবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখন্ডে শিবির স্থাপন করেছিল। আফগানিস্তানকেও খুব কাছ থেকে অনুভূত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার জন্য বহুসংখ্যক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে একের পর এক অশে^তাঙ্গ দেশগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদীদের মুক্ত করেছে, লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, নব্য গণতন্ত্রগুলিকে উৎখাত করেছে এবং অত্যাচারী এবং নৃশংস সামরিক দখলদারিত্ব গড়ে তুলেছে। এরা ছলে বলে কৌশলে সভ্যকরণের নিঃস্বার্থ অভিযানের নামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার একটি আধুনিক সংস্করণ স্থাপন করেছে। ভিয়েতনামের সাথে এরকমই হয়েছিল। আর আফগানিস্তানের সাথেও। ইতিহাসের কোথায় জয়টিকা রাখতে চায়, তার উপর নির্ভর করে সোভিয়েত, আমেরিকান এবং পাকিস্তান সমর্থিত মুজাহিদীন, তালেবান, উত্তরের জোট, অকথ্য হিংস্র এবং বিশ্বাসঘাতক যুদ্ধবাজ নেতাগণ এবং মার্কিন ও ন্যাটো সশস্ত্র বাহিনী আফগান জনগণের হাড় জ্বালিয়ে রক্তের স্যুপে পরিণত করেছে। অব্যতিক্রমভাবে প্রত্যেকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। তারা সবাই আল-কায়েদা, আইএসআইএস এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে পরিচালনার জন্য মাটি ও আবহাওয়া তৈরিতে অবদান রেখেছে।
যদি নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের নিজের পরিবার ও সমাজ থেকে তাদের রক্ষা করার মতো সম্মানজনক ‘উদ্দেশ্য’ সামরিক আক্রমণের কারণগুলির অন্যতম হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সোভিয়েত এবং আমেরিকানরা উভয়ই সঠিকভাবে দাবি করতে পারে যে, শহুরে আফগান মহিলাদের আবারও মধ্যযুগীয় নারীবিদ্বেষের কুয়াতে ফেলে দেওয়ার আগে, তারা তাদের একটি ছোট অংশকে বড় করে তুলেছে, শিক্ষিত করেছে এবং ক্ষমতায়ন করেছে। কিন্তু গণতন্ত্র বা নারীবাদ কোন দেশেই বোমা বর্ষন করে ফলানো যায় না। আফগান নারীরা তাদের নিজস্ব সময়ে, তাদের পন্থায় তাদের স্বাধীনতা এবং তাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করেছে এবং করে যাবে।
মৃত্যুকূপ, না সাম্রাজ্যবাদ, আফগানিস্তান কি সেই পুরোনো ধ্যান-ধারণা অনুসরণ করবে? সম্ভবত না। তবে কি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রস্থান তার আধিপত্যের সমাপ্তির সূচনা? কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ সন্ত্রাস সত্তে¡ও, আফগানিস্তান থেকে প্রতাহারের পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি খুব সম্ভবত তত বড় আঘাত নয়, যতটা এটিকে মনে করা হচ্ছে। আফগানিস্তানে ব্যয় করা সেই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশিরভাগই মার্কিন যুদ্ধ শিল্পে ফেরত দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অস্ত্র প্রস্তুতকারক, ভাড়াটে যোদ্ধা, রসদ এবং অবকাঠামো প্রতিষ্ঠান এবং অলাভজনক সংস্থাগুলি।
আফগানিস্তানে মার্কিন আক্রমণ এবং দখলে যেসব আফগান প্রাণ হারিয়েছেন(ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা অনুমানে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার), তারা হানাদারদের চোখে স্পষ্টতই খুব নগন্য। কুমিরের কান্না বাদ দিলে, সেখানে নিহত ২৪ শ’ মার্কিন সৈনাও হানাদারদের দৃষ্টিতে ব্যয় যোগ্য। পুনর্জাগরিত তালেবান যুক্তরাষ্ট্রকে অপমানিত করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ২০২০ সালে উভয় পক্ষের স্বাক্ষরিত দোহা চুক্তি তারই প্রমাণ। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে অর্থ ও সামরিক শক্তিকে আরও ভালভাবে মোতায়েন করার জন্য মার্কিন সরকারের কঠোর হিসাবেরও উদাহরণ। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।