Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের স্থান দখল করে সহিংস মৌলবাদ

মার্কিন শক্তির ভবিষ্যৎ

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে বিপর্যস্ত হয়ে প্রস্থান করেছে। এখন তারা সামাজিক মেরুকরণ থেকে শুরু করে পরিবেশ বিপর্যয় পর্যন্ত বড় ধরনের উদ্বেগের মুখোমুখি। ঔপন্যাসিক এবং প্রাবন্ধিক অরুন্ধতী রায় তার সাম্প্রতিক লেখায় এমনটাই মন্তব্য করেছেন। দ্য ইকোনোমিস্টের আমন্ত্রণে মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চিন্তাবিদদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে অরুন্ধতী রায়ের লেখাটি ৩ পর্বে হুবহু তুলে ধরা হল।

১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে শেষ সোভিয়েত ট্যাঙ্কটি বেরিয়ে আসে। আফগান মুজাহিদিন জোট, যারা মার্কিন এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের অর্থায়নে এবং অনুপ্রেরণায় প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র ছিল, তাদের কাছে সোভিয়েত বাহিনী প্রায় দশকব্যাপী শাস্তিমূলক যুদ্ধে পরাজিত হয়। সেই বছরের নভেম্বরের মধ্যে বার্লিনের প্রাচীর ভেঙে পড়ে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত হতে শুরু করে। যখন স্নায়ূ যুদ্ধের অবসান ঘটে, তখন যুক্তরাষ্ট্র এক ধারার বিশ্ব ব্যবস্থার নেতৃত্বে আসীন হয় এবং মুহূর্তেই বিশ্ব শান্তির জন্য সবচেয়ে আসন্ন হুমকি সমাজতন্ত্রের স্থান দখল করে ফেলে সহিংস মৌলবাদ।

১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আমাদের জানা রাজনৈতিক বিশ্ব নিজ অক্ষে আমূল ঘুরে যায়। সেই অক্ষের মূল ভরটি আফগানিস্তানের রুক্ষ পাহাড়ের কোথাও অবস্থিত বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে ন্যাক্কারজনকভাবে প্রস্থান করায়, দেশটির ক্ষমতার পতন, চীনের উত্থান এবং বাকি বিশ্বের ওপর এর প্রভাবগুলো সম্পর্কে আলোচনা হঠাৎ করে জোরালো হয়ে উঠেছে।

ইউরোপের জন্য এবং বিশেষ করে ব্রিটেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি একটি সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা প্রদান করেছে, যা কার্যকরভাবে তাদের বর্ণগত ঠাঁট বজায় রেখেছে। এর মধ্যে, শীর্ষস্থান বুঝে নেওয়ার জন্য ডানা মেলে অপেক্ষমাণ একটি নতুন ও আপোষহীন শক্তি নিঃসন্দেহে তাদের গভীর উদ্বেগের উৎস। বিশ্বের অন্যান্য অংশে, যেখানে তাদের বর্ণগত আধিপত্য অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে, সেখানে আফগানিস্তানের খবর কম শঙ্কাজনক।

যেদিন তালেবানরা কাবুল দখল করে, আমি তোষা ময়দানের আলপাইন ঘাসভর্তি কাশ্মীরের একটি উঁচু পাহাড়ে ছিলাম, যা ভারতীয় সেনা এবং বিমানবাহিনী কয়েক দশক ধরে আর্টিলারি এবং আকাশ-বোমা হামলার জন্য ব্যবহার করেছে। তৃণভ‚মির এক প্রান্ত থেকে আমরা নীচের উপত্যকার দিকে তাকাতাম। সেখানে শহীদদের কবরস্থান রয়েছে, যেখানে কাশ্মীরের স্বার্বভৌমত্বের সংগ্রামে নিহত হাজার হাজার কাশ্মীরি মুসলিমদের সমাহিত করা হয়েছে।

ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ৯/১১-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ইসলাম বিদ্বেষকে উপজীব্য মুসলিম-বিরোধী গণহত্যার এই রক্তাক্ত ঢেউ তুলে চালাকি করে ক্ষমতায় এসেছিল, যার মধ্যে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এরা নিজেদের যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর মিত্র বলে মনে করে।

ভারত তালেবানদের বিজয়কে দেখছে তার চিরশত্রু পাকিস্তানের জয় হিসাবে, যারা মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তালেবানদের ২০ বছরের যুদ্ধকে গোপনে সমর্থন করেছে। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সচেতন যে, তালেবানের বিজয় কাশ্মীরকে সামনের রেখে উপমহাদেশের ক্ষতিকারক রাজনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনবে, যার মধ্যে তিনটি পারমাণবিক শক্তি: ভারত, পাকিস্তান এবং চীন জড়িত।

ভারতের মূলধারার বেশিরভাগ সামাজিক ও গণমাধ্যম বিব্রতকরভাবে বিজেপির অধীনে ধারাবাহিকভাবে তালেবানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে অভিহিত করে আসছে। ভারতের মূল ভূখন্ডের ১৭৫ মিলিয়ন মুসলিম জনসংখ্যা, যারা ইতোমধ্যেই পাশবিকতার শিকার এবং বস্তিবাসী ও ‘পাকিস্তানি’ হিসেবে কলঙ্কিত, তারা এখন ‘তালেবান’ হিসাবে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং নিপীড়নের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বহু কাশ্মীরি, যারা কয়েক দশক ধরে অর্ধ মিলিয়ন ভারতীয় সৈন্যের বন্দুকের আগায় জীবনযাপন করছেন, তারা তাদের অন্ধকার এবং নিগ্রহের জগতে আলো আসার ছিদ্র খুঁজছিলেন। তারা এখন আফগানিস্তানের খবরটি ভিন্নভাবে পড়েন ইচ্ছে করে। যদিও প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানে যা ঘটছে তার বিবরণ, খুঁটিনাটি এখনও স্পষ্ট নয়। (চলবে)



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    ধন্যবাদ আপনার এই মতামতের জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Rana ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৫৮ এএম says : 0
    তালেবান বৈষয়িক কোনো স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ কোনো দল বা গোষ্ঠী নয়। তালেবানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ উদ্ধার নয় বরং মানবতার মুক্তি। অতএব কোনো শক্তির পক্ষে তালেবানকে ধ্বংস করা সহজ হবেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Faruque Ahmed ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৫৮ এএম says : 0
    অসাধারণ বিশ্লেষণ। ধন্যবাদ লেখককে
    Total Reply(0) Reply
  • Mezba Ahmed ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
    চমৎকার লিখেছেন, আগামীতে এই ধারা যেন অবহ্যত থাকে
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Alamin ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
    আমেরিকার দূর্বলতার কথা আর যাই বলেন-আল্লাহ কিন্তু বলেছেন: তারা কৌশল ধরেছে, আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।ব্যস,কথা এখানেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Ch Tanvirul Islam ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
    নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী। (সূরা আনফাল, ৩০)
    Total Reply(0) Reply
  • Robe Khan ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
    আমেরিকা চেয়েছিল আফগানিস্তানে বসে এই অঞ্চলের বড় ভাই হয়ে একটা কিছু করতে তাদের সেই মিশনের নায়ক তৈরী করেছিলো পারভেজ মুশারফ সাবেক পাক প্রেসিডেন্ট। যদি পাকিস্তান আফগানিস্তান যুদ্ধে চুপ থাকতো তা হলে আমেরিকা আফগান যুদ্ধ আগেই হেরে যেতো।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahid M S Zaman ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
    যে জন বহে ইসলাম ধর্মের বাণী তার তরে নিরাপদ বিশ্ব ধরণী
    Total Reply(0) Reply
  • Nayeemul ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪১ এএম says : 0
    Thank you for telling the truth and particularly how current Indian government is forcefully suppressing human rights among minorities especially when it comes to the muslims.
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৭ এএম says : 0
    আসলে আমার একান্ত বিশ্বাস আমার মনে বলতেছে,এক মাত্র তালেবানদের দিয়েই আমাদের ইসলাম ধর্মের মান সম্মান সব কিছু রক্ষা করা যাবে,একদিন সারা বিশ্বে মুসলমানদের বিজয় হবে,তালেবানদের পক্ষে সম্ভব হবে,তারাই আলোকিত সত্য বাদী ইসলামীক মুক্তি যোদ্ধা,এদের সাহায্যে ইনসআললাহ ফিলিস্টিনদের কাশ্মীরের ভারতের বাংলাদেশের মুসলমানদের শক্তি যোগাড় করতে পারবে,যেমন এখন বাংলাদেশ 90% মুসলমান থেকে ও ভারত হিন্দু পন্থীদের অত্যাচার অবিচারের সম্মুখীন যেমন কি ইসলামের কথা বললেই অত্যাচার অবিচার আশাকরি অন্তত এই 90মুসলমান তালেবানদের একটু হলেও সহযোগিতা পাবে,এবং কি ভারতের মুসলমানদের শক্তি যোগাড় করতে পারবে,তাই সবাই তালেবানদের মেসেজ করে বলুন উনারা যেন নাগরিক অধিকারের পতি সম্মান দেখান,তার পর সবাই বুঝবে আসলেই আমাদের ভুল, আমরা তালেবানদের বিরোধিতা করে ভুল করেছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdur Rahman ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:৪৫ এএম says : 0
    বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ