বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আজ শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে আসনের ১৪৯টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয় ভোগটগ্রহণ। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে সকালে ভোটারদের তেমন ভিড় না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়বে বলে মনে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক, বিএনপি থেকে বহিস্কৃত ও সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই মাস ৮ দিন সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা আসন জুড়ে চালিয়েছেন প্রচারনা। নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে সাধারণ ভোটারের কাছে ভোট ও দোয়া চেয়েছেন সবাই। প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ছাড়া বাকি ৩ জনই (হাবিব-আতিক-শফি) ছিলেন প্রচারনায় এগিয়ে। এর মধ্যে রিলাক্স মুডে প্রচারনা চালিয়েছে নৌকার হাবিব। পরিবেশ পরিস্থিতি তার অনুকূলে থাকায়, প্রচারনায় কোন বেগ পেতে হয়নি তাকে। অনেকটা গা-ডাকা দিয়ে প্রচারনা করতে হয়েছে লাঙ্গলের কর্মী সমর্থকদের। ভয় ভীতি ছিল তাদে মধ্যে। চলতি বছরের ১১ মার্চ করোনায় সংক্রমিত অবস্থায় সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটির এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ এর দফা (৪) অনুযায়ী, উক্ত শূন্য আসনে ৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও করোনার কারণে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় শূন্য আসনটিতে ৮ জুন পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করে ইসি। সেই তফসিল অনুযায়ী গত ২৮ জুলাই এই আসনের উপনির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এর দুদিন আগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন আদালত। পরবর্তীতে ৪ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের দিন ধার্য্য করে ইলেকশন কমিশন। উপনির্বাচনে লড়াই করতে গত ১৫ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেন মোট ৬ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাহমিদা হোসেন লুমা ও শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম।
এর মধ্যে ফাহমিদা ও মাসুম ছাড়া সবার মনোনয়নপত্র ১৭ জুন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন অফিস। দাখিলকৃত মনোনয়নে ভোটারদের তথ্য যথাযথ না পাওয়ায় ফাহমিদা ও মাসুমের মনোনয়নপত্র ঘোষণা করা হয় বাতিল। পরে তারা আপিল করলেও আগের রায় বহাল রাখে নির্বাচন কমিশন। ফলে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সুযোগ হয়নি এ দুজনের। বহাল থাকা ৪ প্রার্থীর প্রার্থীর মধ্যে ২৫ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরী মোটরগাড়ি (কার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ডাব প্রতীক পান। এর মধ্যে শফি আহমদ চৌধুরী ছাড়া বাকি ৩ জনের প্রতীক দলীয়।
সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পর রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তারা পালন করবেন দায়িত্ব। নরাপত্তার স্বার্থে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী এলাকার ৩ উপজেলা- দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে সম্পূর্ণরূপে। ৩ দিন অর্থাৎ- রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২ পর্যন্ত এ নির্দেশ জারি থাকবে। অপরদিকে, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, কার ও জিপ চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতিসাপেক্ষে প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যটকক ও গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল থাকবে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে থাকবে না এ নিষেধাজ্ঞা।
শুক্রবার বিকেলে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)সহ নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম প্রতি কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়। রাতের মধ্যেই ভোট প্রদানের নির্জন বুথ তৈরি সহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখেন সংশ্লিষ্টরা । শনিবার সকাল ৮টা থেকেই সকল কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। নির্বাচনকালীন সময়ে সকল অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে ২ সদস্যবিশিষ্টি একটি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিটিতে রয়েছেন সিলেটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তাসলিমা শারমিন ও সিনিয়র সহকারী জজ নির্জন কুমার মিত্র। এছাড়া আসনটির ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রজমান ভূঁঞাকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, অঞ্জন কান্তি দাসকে বালাগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেটের মেট্রোপলিট্রন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়াকে ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নির্বাচনের আগে দুইদিন, পরে দুইদিন ও নির্বাচনের দিন- অর্থাৎ ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচদিন নির্বাচনী মাঠে পালন করছেন দায়িত্ব । আসনের সাধারণ ভোটকেন্দ্রে রয়েছে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়োজিত রয়েছেন ১৮ থেকে ১৯ জন সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশ আর অঙ্গিভূত আনসার সদস্যের কাছে অস্ত্র রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছেন ভোটকেন্দ্রের। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ড। বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা মোকাবেলায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।