মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপরাধের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সত্ত্বেও, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ‘নিয়মিতভাবে’ সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনাগুলো কদাচিৎ স্বীকার করে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে দেখা গিয়েছিল যে, একটি আতঙ্কিত ছোট মেয়ে তার মুসলিম পিতাকে জড়িয়ে ধরেছিল যখন হিন্দু জনতা তাকে আক্রমণ করেছিল। ৪৫ বছর বয়সী ওই অসহায় রিকশাচালকটিকে অনেক মানুষ মিলে মারতে মারতে কানপুর শহরের রাস্তায় প্যারেড করাচ্ছিল। এ সময় তার কন্যা তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল।
হামলাকারীরা রিক্সা চালককে ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ বা ‘দীর্ঘজীবী ভারত’ এবং ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে বলেছিল। এটি একটি জনপ্রিয় ‘স্লোগান’ যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম নির্যাতনের সময় নিয়মিত ব্যবহার করে আসছে। তিনি মেনে নিলেও তাকে হিন্দুত্ববাদীরা মারতে থাকে। লোকটি এবং তার মেয়েকে অবশেষে পুলিশ উদ্ধার করে। এই হামলার জন্য গ্রেফতার তিন জনকে একদিন পর জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কিছু দিন পরে, আরেকটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় যে, একজন মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে ইন্দোর শহরে হিন্দু জনতা চড়, লাথি ও ঘুষি মারছে। হামলাকারীদের তসলিম আলীকে গালিগালাজ করতে এবং ভবিষ্যতে হিন্দু এলাকা থেকে দূরে থাকার কথা বলতে শোনা যায়। পুলিশ অভিযোগে, ভিকটিম পরে বলেছিলেন যে, ‘হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় চুড়ি বিক্রির জন্য তাকে পাঁচ-ছয়জন লোক মারধর করেছিল, যারা তাকে সাম্প্রদায়িক গালাগালি করেছিল এবং টাকা, তার ফোন এবং কিছু নথি লুট করেছিল।’
কিন্তু ঘটনা এক অদ্ভুত মোড় নেয় যখন জানা যায়, পরের দিন আলি নিজেই গ্রেফতার হন। কারণ তার বিরুদ্ধে তার উপরে হামলাকারীদের একজনের ১৩ বছর বয়সী কন্যা শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিল। তবে তার পরিবার এবং প্রতিবেশীরা এই অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। তারা বলেছিল, এটা অকল্পনীয় যে পাঁচ সন্তানের বাবা বাবা আলী এমন কিছু করবে। এরপর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উদ্ধৃত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তার উপর হামলা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করা হচ্ছে।
আগস্ট মাসে মুসলিম-বিরোধী সহিংসতার কয়েকটি দৃষ্টান্তের মধ্যে এই দুটি হামলাও ছিল। কিন্তু ভারতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী মুসলিম, যাদের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি, তাদের জন্য মাসটি কোনোভাবেই আলাদা ছিল না। বিবিসি রিপোর্টে যোগ করা হয়েছে, আগের মাসগুলোতেও একই ধরনের হামলার খবর পাওয়া গিয়েছিল - এবং অনেক ঘটনা সংবাদ শিরোনামে এসেছিল। ‘সহিংসতা অপ্রতিরোধ্য। এটা ব্যাপক, সাধারণ এবং খুব গ্রহণযোগ্যও,’ একজন স্বাধীন সাংবাদিক আলিশান জাফরিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আলিশান গত তিন বছর ধরে ভারতীয় মুসলমানদের উপর আক্রমণের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করছেন। তিনি ‘প্রতিদিন এরকম তিন-চারটি ভিডিও’ পেয়েছেন তবে তিনি কেবলমাত্র একটি বা দুটি যাচাই করতে সক্ষম হয়েছেন যা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন বলে আলিশান জানিয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে সমালোচকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে ২০১৪ সাল থেকে মুসলিম বিরোধী সহিংসতা বেড়েছে। ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একটি সাম্প্রতিক ঘটনা নয়, কিন্তু এটি ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের কৌশল এবং রাজনৈতিক সংহতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে ‘ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক তানভীর আইজাজ বলেন, ‘অবিশ্বাস সবসময়ই ছিল কিন্তু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ এবং জাতি-জাতীয়তাবাদ দ্বারা এখন ফাটলগুলো তীক্ষ্ণ হয়েছে।’
মোদির প্রথম ক্ষমতায় থাকাকালীন রিপোর্টে বলা হয়েছিল, গরুর মাংস খেয়েছে, অথবা তারা গরু পাচারের চেষ্টা করছে এমন গুজব ছড়িয়ে তথাকথিত ‘গরু রক্ষীদের’ দ্বারা মুসলিম নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের হামলাকে সমর্থন করেননি, কিন্তু দ্রুত বা কঠোরভাবে তাদের নিন্দা না করার জন্য সমালোচিত হন। ২০১৯ সালে, ভারতে ‘ঘৃণা অপরাধ’ গণনা করা একটি ফ্যাক্ট-চেকার ওয়েবসাইট জানিয়েছে যে, গত ১০ বছরে নির্যাতনের শিকার হওয়াদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মুসলিম। এবং এই হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। অভিযোগ রয়েছে যে, তারা মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ভোগ করছে। এর আগে মোদির একজন মন্ত্রী একজন মুসলিমকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত আটজন হিন্দুকে মালা দিয়েছিলেন।
বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সোশ্যাল মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর হাসিবা আমিন বলেন, ‘আমাদের দেশে এই ধরনের হামলা আজ খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে এবং শুধুমাত্র এই ঠগরা দায়মুক্তি ভোগ করার কারণে। আজ ঘৃণা মূলধারায় চলে গেছে। তাদের ধারণা মুসলমানদের উপর হামলা চালানো ভালো। ঘৃণাকারীরা তাদের কাজের জন্য পুরস্কৃতও হয়।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মোদির ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে মুসলিম-বিরোধীরা সহিংসতার পরিধি বাড়িয়েছে। মুসলিম নারীরাও রেহাই পায়নি। জুলাই মাসে, তাদের মধ্যে অনেকজনকে অনলাইনে বিক্রির জন্য দেখানো হয়। মে মাসে, কংগ্রেস পার্টির হাসিবা আমিন সহ তাদের অনেককে একটি নকল অনলাইন ‘নিলামে’ তোলা হয়েছিল। আগস্টে, দিল্লিতে একজন সাবেক বিজেপি নেতা আয়োজিত একটি সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা স্লোগান দিয়েছিল যাতে মুসলমানদের হত্যা করার আহ্বান জানানো হয়।
প্রফেসর আইজাজ বলেন, শ্রমিক শ্রেণীর মুসলমানদের উপর আক্রমণ, যেমন দর্জি, ফল বিক্রেতা, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার এবং চুড়ি বিক্রেতা, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং চাকরির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার একটি প্রচেষ্টা। ‘অন্য প্রক্রিয়া হল এই ধারণা প্রচার করা যে, আমরা যদি অন্যকে ধ্বংস না করি তবে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। সুতরাং আপনি ঘৃণা সৃষ্টি করেন, ভয় তৈরি করেন এবং সহিংসতা এই বৃহত্তর বিবরণের অংশ।’ তিনি বলেছেন, এটি একটি বিপজ্জনক ধারণা যা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সূত্র : ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।