Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নির্যাতনের শিকার ভারতের মুসলিমরা

অনলাইন বিবিসিতে গীতা পান্ডের লেখা প্রতিবেদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

কোনো প্ররোচনা ছাড়াই ভারতে মুসলিমদের ওপর হামলা চালায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এ বিষয়টি এখন নিয়মিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকে কোনো নিন্দা জানানো হয় না বললেই চলে। অনলাইন বিবিসিতে গীতা পান্ডের লেখা এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে তিনি আরো লিখেছেন, গত মাসে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের একদল মানুষ একজন মুসলিম পিতাকে নির্যাতন করছে। এ সময় ভয়ে তার ছোট্ট মেয়েটি তাকে আর প্রহার না করার আকুতি জানাচ্ছে। হতাশাজনক এই ফুটেজে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরের রাস্তায় ৪৫ বছর বয়সী একজন রিক্সাচালককে প্যারেড করানো হচ্ছে। এ সময় তাকে প্রহার বন্ধ করতে চিৎকার করে কান্না করছে তার ছোট্ট মেয়েটি। হামলাকারীরা ওই মুসলিম রিক্সাচালককে হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ অথবা ভারত দীর্ঘজীবী হোক, জয় শ্রীরাম বা প্রভু রামের জয়— এসব সেস্নাগান দিতে বলে। ওই ব্যক্তি এসব সেস্নাগান দেয়া সত্ত্বেও তাকে প্রহার করতেই থাকে তারা। আক্রমণের শিকার ওই মুসলিম এবং তার মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ হামলার জন্য গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। তবে পরের দিনই তাদেরকে জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর কয়েক দিন পরে আরো একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, চুড়ি বিক্রেতা একজন মুসলিম তসলিম আলিকে থাপড়, লাথি ও ঘুষি মারছে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক। এ ঘটনা ঘটে মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে। প্রহার করতে করতে তাকে ভবিষ্যতে হিন্দুদের এলাকা থেকে দূরে থাকার সতর্কবার্তা দেয়। পরে পুলিশের কাছে দেয়া অভিযোগে তিনি বলেন, তাকে ৫ থেকে ৬ জন ব্যক্তি প্রহার করেছে। এ সময় হিন্দুপ্রধান এলাকায় চুড়ি বিক্রির জন্য সম্প্রদায়ের আঘাত দিয়ে কথা বলেছে। তার অর্থ, মোবাইল ফোন ও কিছু ডকুমেন্ট তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। পরেরদিনই হামলাকারীদের ১৩ বছর বয়সী একটি কন্যাকে তসলিম আলি যৌন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অভিযোগ তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তসলিম ৫ সন্তানের পিতা। তিনি এ কাজ করতে পারেন, এটা তারা মোটেও বিশ্বাস করেন না। ভারতীয় প্রেসে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তসলিমকে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে প্রহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে কন্যার ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সাজানো হয়েছে। আগস্টে মুসলিম বিরোধী সহিংসতার কয়েকটি ঘটনার সাথে জড়িত এই হামলার দু’জন। একই রকম অনেক হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে এবং সেগুলো সংবাদ শিরোনাম হয়। মার্চে ১৪ বছর বয়সী একটি মুসলিম বালক হিন্দুদের মন্দিরে প্রবেশ করেছিল পানি পানের জন্য। এ অপরাধে তাকে ভয়াবহভাবে প্রহার করা হয়েছে। জুনে হিন্দু প্রধান এলাকায় ফল বিক্রি করতে যাওয়ার অপরাধে একজন ফেরিওয়ালে দিল্লিতে প্রহার করা হয়েছে। গত তিন বছর ধরে ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলাকে ডকুমেন্ট আকারে ধারণ করছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক আলিশান জাফ্রি। তিনি বলেন, ব্যাপক সহিংসতা হচ্ছে। এর ব্যাপকতা যেন সাধারণ বিষয়। মেনেও নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন তিনি এমন তিন থেকে চারটি ভিডিও ধারণ করেন। এর মধ্যে একটি বা দুটি যাচাই করে তবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। সমালোচকরা বলেন, ধর্মীয় বিরোধ ভারতে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। ২০১৪ সালের পর মুসলিম বিরোধী সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দিল্লি ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর তানভীর ইজাজ বলেন, সম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্প্রতিক ঘটনা নয়। তবে ক্ষমতাসীনদের কারণে তা বেড়েছে এবং রাজনৈতিক মোবিলাইজেশনের জন্য তা বেড়েছে। সব সময়ই অবিশ্বাস ছিল। কিন্তু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ এবং জাতিগত জাতীয়তাবাদের দ্বারা এখন এর কিছু অংশের প্রকাশ ঘটেছে। গীতা পান্ডে আরো লিখেছেন, মোদির প্রথম মেয়াদে ক্ষমতার সময়ে মুসলিম নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। বিশেষ করে কথিত ‘কাউ ভিজিল্যান্টিস’ ইস্যুতে এই হামলা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কেউ গরুর মাংস খেয়েছেন অথবা কেউ গরু পাচারের চেষ্টা করেছেন অথবা গরু জবাই করেছেন— এমন অভিযোগে হামলা হয়েছে। ওইসব হামলার কোনো নিন্দা জানাননি প্রধানমন্ত্রী। দ্রুততার সাথে এবং দৃঢ়তার সাথে এর নিন্দা না জানানোর সমালোচনা হয়েছে। বিজেপির সিনিয়র নেতা প্রকাশ জাভেদকর বিবিসিকে বলেছেন, সরকার বিশ্বাস করে কাউকে এভাবে প্রহার করা খারাপ। তবে রাজ্যে আইন শৃংখলা একটি বিষয়। এটা তাদের মেনে চলা উচিত। এ পর্যায়ে তিনি মুসলিমদের ওপর হামলার বিষয়ে মিডিয়াকে দায়ী করেন পক্ষপাতী এবং সেলেক্টিভ জার্নালিজমের জন্য। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে ২০০ মানুষের ওপর হামলা হয়েছে। তার মধ্যে ১৬০ জনই হিন্দু। সব ধর্মের লোককেই টার্গেট করা হয়েছে। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ