Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালেবান : কষ্ট লাঞ্ছনা ও রক্তের সাগর পেরিয়েই আজকের এ বিজয় ও সম্মান

ভাষ্যকার | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিশ্বমিডিয়ায় দু’টি ছবি মধ্য আগষ্ট ২০২১ দেখা গেছে। যার ফটোগ্রাফার একই ব্যক্তি। একটি ছবি ছবি ২০০১ সালের আরেকটি ২০২১ সালের। বহু বছর ব্যবধানে দু’টি ছবি একই ফটো সাংবাদিকের তোলা এবং ছবিটি মোল্লা আবদুল গনি বারাদরের। একটিতে দেখা যাচ্ছে তরুণ তালেবান নেতা বারাদরকে হ্যান্ডকাফ ও রশি লাগিয়ে করাচির কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। মার্কিনীদের বিশ্বস্ত বন্ধু পাকিস্তানের সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের যুগে আফগানিস্তান থেকে করাচিতে আশ্রয় নেওয়া তালেবানের সহ প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদরকে পাক গোয়েন্দারা গ্রেফতার করে জেলে ঢোকায়। কয়েকবছর পর তিনি মুক্তি পেয়ে কাতার রাজনৈতিক অফিসে যোগ দেন। তার সাথেই ওয়াশিংটন ও পেইচিং কর্তৃপক্ষসহ বিশ্ব শক্তিগুলো আলাপ আলোচনা শুরু করে। ২০ বছরের যুদ্ধ শেষ করার পথ ও পদ্ধতি মার্কিনীরা তার সাথে আলোচনা করেই খুঁজে পায়। কাতার শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে হোয়াইট হাউসের প্রতিনিধি যে তালেবান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন এবং তালেবানের সব শর্ত মেনে নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে চুক্তিতে সই করেন। এ তালিবান দলের প্রধান ছিলেন এই রশিতে বাধা লোকটিই। তালেবান সরকারে তার নাম প্রেসিডেন্ট হিসাবে খুব জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। কষ্ট লাঞ্ছনা ও শহীদের রক্ত থেকে অর্জিত আজকের এ বিজয় ও সম্মান।

এক নিমেষে আল্লাহ পাহাড়কে সমতল, মরুভূমিকে সাগর বানাতে পারেন। তার একটি হুকুমে সকাল বেলার রাজা বিকাল বেলা ফকির হতে পারে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘এ সময় আর দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পরিবর্তিত করে দিয়ে থাকি।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৪০)।

আজ যে বাদশাহ কাল সে ফকির হয়ে যায়। সাম্রাজ্যের মালিকদের দর্পচূর্ণ করে ধূলায় মিশিয়ে দিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লার সময় লাগে না। যুগে যুগে তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের দম্ভ অহঙ্কারকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন।

এ সরকারে এমন তালেবান নেতাও অন্তর্ভূক্ত থাকছেন, যাকে বহু বছর মার্কিন নির্যাতনের বিভীষিকাময় গুয়ানতানামো বে কারাগারেও থাকতে হয়েছে। যে কারাগার স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী যোদ্ধা এবং নিজ দেশে ইসলামী সমাজ সংস্কৃতি ও অর্থব্যবস্থা কায়েমের সৈনিকদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক ভয়ঙ্কর নির্যাতনের জন্যই মার্কিনীরা তৈরি করেছিল। অমানবিক শাস্তি ও নির্যাতনের পথ পাড়ি দিয়ে সেখানকার জীবিত মুজাহিদরা আজ আফগানিস্তানের রাষ্ট্র ও সরকারের উচ্চপদে সমাসীন। আমেরিকা ও তার মিত্ররা মাথানত করে দেশে ফিরছে পরাজয়ের গøানি নিয়ে।

দেশীয় রাজাকারদের অবস্থা তো দেখার মতো। মার্কিন বাহিনী তাদের কুকুরগুলোকেও সামরিক বাহিনীর মর্যাদায় বিমানে করে নিরাপদে প্রস্থান করেছে। কিন্তু দালাল সরকারের মন্ত্রী এমপি কর্মকর্তা, দোভাষী ও চাটুকারদের কোনো দায়িত্ব তারা নেয়নি। যারা নানাভাবে কার্গো বিমানে দেশ ছেড়েছে তাদেরকেও আমেরিকায় না নিয়ে নানা দেশে ফেলে রাখার পরিকল্পনা চলছে। উগান্ডায় রাখার সিদ্ধান্ত পাকা হলেও অনেক দেশ এখন পর্যন্ত তাদের জায়গা দিতেই সম্মত হচ্ছে না। কাতারে যে কিছু অবস্থান করছে তাদের মানবেতর জীবনের কথা চিন্তা করলেও কষ্ট হয়। এয়ারপোর্টে হ্যাংগারে হাজারো আফগান দালাল ও ভাগ্যান্বেষী মানবেতর জীবনযাপন করছে। এক হাজার জনের জন্য একটি টয়লেট। একটু পানি আর খাবার শত শত দিনার দিরহাম ও ডলারের বিনিময়ে পেতে হচ্ছে।

আফগানিস্তানের স্টেট ব্যাংকের গভর্নর পালিয়ে গেছেন। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিও দু’তিন দেশে ঘুরে আশ্রয় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ইউএইর আবুধাবিতে মানবিক কারণ দেখিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছেন। মার্কিন তত্ত্বাবধানে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নিজের মার্কিন নাগরিকত্ব সারেন্ডার করায় এখন তার নতুন করে ভিসা পেতে হবে। আগে থেকেই তার পুত্র ও কন্যা আমেরিকায় রাজার হালে বসবাসরত ছিলেন। এখন আশরাফ গনিও সেখানে পৌঁছার জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় রয়েছেন। বলা হয় তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর সময় দুই গাড়ি ও হেলিকপ্টার ভর্তি ক্যাশ ডলার নিয়ে যান। যার একাংশ তিনি স্টেট ব্যাংক থেকে আগেই তুলে নিয়ে বাসায় রাখেন এবং মার্কিনীদের দেওয়া ডলারও ৬ থেকে ৯ মাস সৈন্যদের বেতন না দিয়ে নিজের ঘরে জমা রেখেছিলেন। যদিও আশরাফ গনি মিডিয়াকে বলেছেন, এক কাপড়ে জুতা সেÐেল ছাড়াই পালিয়ে এসেছি। ওরা আমাকে পেলে পিটিয়ে মেরে ফেলত। তার এ কথা যে সত্য নয় তা অন্যসব দায়িত্বশীলের সাথে তালেবানের আচরণ ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এখানে শুধু সম্মানের কথাটি ভেবে দেখা উচিৎ। একজন বিলাসী ও টাকাওয়ালা প্রেসিডেন্টের পরিণাম কেমন হতে পারে। একজন জনসমর্থনহীন ও পরদেশীদের দালাল শাসকের মানসম্মান কতক্ষণ থাকে অপরদিকে জনগণের কাছের মানুষ তালেবান ও এর নেতৃত্বদানকারী মোল্লাদের সম্মান আগে, যুদ্ধরত অবস্থায় এবং এখন কীভাবে মহান উচ্চতায় বহাল রয়েছে। রশিতে বাধা, জেলখাটা, নির্যাতন ভোগ করা, ২০ বছর পাহাড়ে পর্বতে দুঃখ কষ্টের জিন্দেগি পার করা মুক্তিযোদ্ধা তালেবান মুজাহিদদের মর্যাদা আজ কতটুকু উপরে।

এটাই আল্লাহর গায়েবী সাহায্য ও অলৌকিক কারিশমা। পবিত্র কোরআনের আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনি বলুন, ক্ষমতা ও সাম্রাজ্যের মালিক হে আল্লাহ। আপনি যাকে ইচ্ছা করেন, ক্ষমতা ও সাম্রাজ্য দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা ও রাজত্ব কেড়ে নেন। আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দিয়ে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন আবার যাকে ইচ্ছা অসম্মান, লাঞ্ছনা দিয়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। কল্যাণ শুধু আপনারই হাতে। নিঃসন্দেহে আপনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। ( সুরা আলে ইমরান : ২৬)।

কোরআন সুন্নাহ ও বিশ্ব ইতিহাসে বর্ণিত আল্লাহর কুদরত, অলৌকিক সাহায্য ও শক্তির যত কথা মানুষকে উদ্বেলিত করে, এসবের জীবন্ত উদাহরণ আজকের আফগানিস্তান। বিশ্বের ৫০টি দেশের সমর্থন, আফগান দালালদের সহযোগিতা এবং সুপার পাওয়ার জোটের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যয় করেও ২০ বছরের হত্যা জুলুম অমানবিকতা শেষে এরা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এর বস্তুগত যত ব্যাখ্যাই দেওয়া হবে, অসম্পূর্ণ হবে। সত্যি বলতে গেলে মজলুম ছাত্র জনতা মুক্তিযোদ্ধা তালিবানের এ নজিরবিহীন বিজয় এবং রাষ্ট্র ও সরকারে ইসলামী শরীয়া পদ্ধতিকে ঘিরে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ঈমান, ত্যাগ, কোরবানি ও উচ্চ পর্যায়ের আধ্যাত্মিকতার ফসল। আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:১০ এএম says : 0
    মন্তব্য প্রতিবেদন,প্রতিবেদন,এই যে উনারা করে থাকেন ,আমাদের মাথায় কিছু আসে না এরা দেশের চিন্তা ভাবনা করতে ভয় কি জন্য,যেমন দেশে সরকার ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত্ ওদের জীবন কে বরবাদ করে দিতেছে,অথচ এই বেপারে মন্তব্য প্রতিবেদন কিছুই নেই................
    Total Reply(0) Reply
  • Mohi Uddin ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
    এ বিজয় মুসলিম জাহানের। তবে অবশ্যই তালেবানের নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ উদার সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(1) Reply
    • আব্দুল মালেক ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪১ এএম says : 0
      নারীর প্রতি তালিবান রা কবে কথায় বৈষম্য করেছে, রেফেরেঞ্চ সহ উল্লেখ করুন। ইহুদিবাদি বা হিন্দুবাদি মিডিয়ার কথা বিশ্বাস করার কোন কারন নেই।
  • Nahid Hossain ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ বিশ্বের সমস্ত পরাশক্তি পরাজিত করে এখন যে বাহিনী গঠন করেছে তা অবশ্যই প্রসংসার দাবিদার
    Total Reply(0) Reply
  • Safiq Alam ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪৪ এএম says : 0
    Congratulations Afghanistan for victory back..
    Total Reply(0) Reply
  • Tareq Anam ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
    গোটা বিশ্বে একদিন এইভাবে-ই ইসলামের জয় হবে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Md Yakub ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪৭ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লিহ এই বিজয় ইসলামের এই বিজয় তালেবান এর। লজ্জার বিদায় আমেরিকানদের।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Alam ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩২ এএম says : 0
    এভাবেই একদিন বিশ্ব থেকে লেজ গুটিয়ে পালাবে বেঈমানগুলো ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • ওমর ফারুক ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৪ এএম says : 0
    জাযাকাল্লাহ ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Rana ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৯ এএম says : 0
    ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • মেসবাউল ইসলাম ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:৫৮ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহ্'র দরবারে শুকরিয়া। হে আল্লাহ আপনি পৃথিবীর সকল ক্ষমতাবানদেরকে হেদায়েত দান করুন। এই নশ্বর পৃথিবী থেকে সকলেই বিদায় নিয়ে পরপারে চলে যাব, সেখানে যেন নিজের কৃত কর্মের হিসাব দিয়ে আল্লাহ্'র অনুগ্রহ পেতে পারি।
    Total Reply(0) Reply
  • md asad ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:২৮ এএম says : 0
    alhamdulillah allah akbar
    Total Reply(0) Reply
  • Runa Laila ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৫৬ পিএম says : 0
    অসাধারণ লেখনি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালেবান

১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ