মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাধা সত্ত্বেও নিজের উপর আস্থা হারাননি জ্যোতি রেড্ডি। জীবনের রেখাচিত্র নিজের হাতে এঁকেছেন। সে কারণেই দিনে ৫ রুপি উপার্জন করা জ্যোতি আজ কোটিপতি। দিনে দু’বেলা খাবার জোটাতে যাকে ভাবতে হত, তার সম্পত্তির পরিমাণ জানলে সকলেই অবাক হবেন!
১৯৭০ সালে তেলঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম জ্যোতির। পাঁচ ভাইবোনের দ্বিতীয় তিনি। ৯ বছর বয়সে তাকে অনাথ-আশ্রমে রেখে এসেছিলেন বাবা। সঙ্গে তার এক বোনও ছিল। দুই মেয়ের যাতে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটে, সেই আশাতেই আশ্রমে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন তাদের বাবা। কিন্তু কিছু দিন পরই জ্যোতির বোন অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাকে মা-বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু জ্যোতি সেখানেই রয়ে যান। অনাথ হওয়ার অভিনয় করে যেতেন তিনি।
ওই আশ্রম থেকেই দশম শ্রেণি পাশ করেন তিনি। তারপর ১৬ বছর বয়সে স্যামি রেড্ডি নামে এক যুবককে তিনি বিয়ে করেন। নিজের বলতে ছোট জমি ছিল স্যামির। সেই জমিতে ফসল ফলিয়েই সংসার চালাতেন। দুই সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন জ্যোতিও। নিজেও মাঠে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। টানা ১০ ঘণ্টা কাজ করে দিনে ৫ টাকা উপার্জন ছিল তার। এর পর নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নেহরু যুব কেন্দ্রের শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দেন। দিনভর ছেলে-মেয়েদের পড়াতেন আর রাতে সেলাই করে উপার্জন করতেন। স্বামী-সন্তান, সংসার সব কিছু সামলে ডক্টর বিআর আম্বেডকর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। এরপর একটি স্কুলে মাসে ৩৯৮ টাকায় শিক্ষক হিসাবে যোগ দিলেন। দু’ঘণ্টা লাগত স্কুলে পৌঁছতে। যাতায়াত মিলিয়ে চার ঘণ্টা। এই চার ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে চাইতেন না তিনি। এই সময় কাজে লাগাতে গাড়িতেই শাড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন। শাড়ি পিছু ২০ রুপি করে লাভও হত তার।
এরপর ১৯৯৫ সালে ২ হাজার ৭৫০ রুপি বেতনে মণ্ডল গার্ল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দেন। এই কাজ করতে করতে ১৯৯৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। এর এক বছর পর আমেরিকা থেকে তার স্বামীর এক চাচাতো বোন দেশে ফেরেন। তার পোশাক, জীবনযাত্রা দেখে মুগ্ধ হতে শুরু করেন তিনি। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। রোজ হায়দরাবাদে গিয়ে কম্পিউটার শিখতেও শুরু করলেন। ২০০১ সালে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমেরিকা পাড়ি দিলেন জ্যোতি। স্বামীর চাচাতো বোনের সঙ্গে সেখানে থাকতে শুরু করলেন। পেট চালানোর জন্য ওই বোনই তাকে ১২ ঘণ্টার একটি কাজ দেখে দিয়েছিলেন। বেতন ছিল ৬০ ডলার। এর বাইরে কখনও বেবিসিটার, কখনও সেলসগার্ল-এর কাজও করতেন বাড়তি উপার্জনের জন্য।
এ ভাবে দেড় বছর কাটানোর পর কনসাল্টিং কোম্পানি খুলে ফেললেন। আমেরিকার ভিসা পেতে সাহায্য করে তার সংস্থা। আমেরিকাতেও এই সংস্থা চালু করেছিলেন তিনি। আমেরিকায় যেতে ভিসা, সেখানে গিয়ে চাকরির খোঁজ, বাসস্থানের খোঁজ—সবই এক ছাদের তলায় নিয়ে এসেছিল তার সংস্থা। প্রথম বছরেই ১ কোটি ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৯ রুপির ব্যবসা করেন। আমেরিকায় কাজ করার স্বপ্ন দেখা মধ্যবিত্ত এবং গরিবদের কাছে এই সংস্থা হয়ে ওঠে সমস্ত সমস্যার সমাধান। খুব তাড়াতাড়ি আরও বেশি অর্থ লাভ করতে শুরু করেন তিনি। এখন ১০০ কর্মী রয়েছে তার অধীনে। হায়দরাবাদে একটি এবং আমেরিকায় চার-চারটি বাড়ি রয়েছে তার। বছরে তার সংস্থার লেনদেন ১১১ কোটি রুপির বেশি। সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।