Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গতি হারাচ্ছে এশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে এশিয়ার অর্থনীতি। কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকোচনের মুখোমুখি হয় দেশগুলো। চলতি বছরের শুরু থেকে সেই বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এ অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতিগুলো। তৈরি হয় শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের রেকর্ডও। তবে কভিডের অত্যন্ত সংক্রামক ডেল্টা ধরনের ধাক্কা সেই পুনরুদ্ধারের গতিকে স্তিমিত করে দিয়েছে। পুনরায় খুচরা ব্যবসা ও কারখানা বন্ধ হয়ে শক্তিশালী প্রথমার্ধের পর ক্ষীণ হয়ে গেছে করপোরেট মুনাফা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের দ্রæত বিস্তার ও স্বল্প টিকার হার এশিয়ার, বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর পুনরুদ্ধারের পথে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। যেখানে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অর্থনীতিগুলো মহামারীকে পেছনে ফেলে দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা সংস্থা আইএনজির এশীয়-প্যাসিফিক অঞ্চলের গবেষণা বিভাগের প্রধান রব কর্নেল বলেন, এটা স্পষ্ট যে, এ অঞ্চলের অর্থনীতিগুলো আগের তুলনায় এখন কভিডে বেশি ভুগছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ হলো কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা দেয়ার হারে স্বল্পতা। ২০২০ সালে তীব্র হ্রাসের সঙ্গে তুলনা করে এ অঞ্চলে করপোরেট ও অর্থনৈতিক সূচকগুলো শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের চিত্র ফুটে ওঠে। প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। তবে এবার এ চিত্র পাল্টাতে চলেছে। রেফিনিটিভ ইকনের তথ্যের ভিত্তিতে রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এশিয়ার বৃহৎ সংস্থাগুলোর মুনাফা কমতে পারে। কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলারের বাজার মূলধন থাকা ১ হাজার ৬৯টি সংস্থার মুনাফা কমতে পারে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। টোকিওর মিৎসুবিশি ইউএফজে মরগান স্ট্যানলি সিকিউরিটিজের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ নরিহিরো ফুজিতো বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তৃতীয় প্রান্তিকে মন্দা হবে। তিনি বলেন, নিকট মেয়াদে বিশ্বের প্রধান উৎপাদন অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিগুলোর অগ্রগতি টিকাদান হারের ওপর নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে চীন তার অর্থনীতিকে সহায়তায় অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। জুলাইয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে যানবাহনের বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে। কভিড সংক্রমণের প্রভাব ও বৈশ্বিক চিপ সংকটে দেশটিতে গাড়ি উৎপাদন কমায় টানা তৃতীয় মাসের মতো বিক্রি কমেছে। বিক্রির সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা গত সপ্তাহে জানিয়েছিল, চিপ সংকটের কারণে সেপ্টেম্বরে গাড়ির উৎপাদন আগের পরিকল্পনা থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনবে। যদিও সংস্থাটি তার অর্থবছরের জন্য উৎপাদন ও বিক্রির লক্ষ্যমাত্রায় কোনো পরিবর্তন আনেনি। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কভিডের বিস্তার ও লকডাউন একটি বড় প্রভাবক ছিল বলে জানিয়েছে টয়োটা। এ অঞ্চলের ডেল্টার সংক্রমণ বৃদ্ধি ও লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ পরিষেবা ও উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছে। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা আইএইচএস মার্কিটের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে এ অঞ্চলের কারখানার কার্যক্রম দ্রæতগতিতে সংকুচিত হয়েছে। এ সংকোচনের গতি গত বছরের জুনের পর সর্বোচ্চ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডেল্টার প্রাদুর্ভাব বিশ্বের অনেক বড় নির্মাতাদের সরবরাহ চেইন নিয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো স্বল্প ব্যয়ের দেশগুলোতে তৈরি গাড়ির যন্ত্রাংশ ও চিপের ওপর নির্ভর করে। মিৎসুবিশির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা কোজি ইকেয়া বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের পুনরুত্থান চাহিদা কমিয়ে দেবে, চিপের ঘাটতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে এবং ইস্পাত ও অন্যান্য উপকরণের দাম আরো বাড়িয়ে দেবে। এ সংক্রমণের কারণে আমাদের চারপাশের পরিবেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামে নতুন করে লকডাউন ও সংক্রমণের ঘটনা কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্থগিতে বাধ্য করেছে। সিঙ্গাপুরে আইএইচএস মার্কিটের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রধান রাজিব বিশ্বাস বলেন, সরকার অবশ্যই প্রয়োজনীয় শ্রমিকদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য সরকারগুলো এসব শ্রমিককে টিকা দেয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রয়টার্স।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এশিয়া

১৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ