Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনাকারণে বিশ্বঅর্থনীতি স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এতদিন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালোর দিকে থাকলেও এখন সেদিন বাসি হতে বসেছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, আগামীতে অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতিতে পতিত হতে যাচ্ছে। অর্থনীতির প্রায় সকল সূচকই এখন নিম্নমুখী। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটার টান জোরালো হয়েছে, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় কমেছে। এই সঙ্গে মানুষের আয়, কর্মসংস্থান ও মজুরি কমেছে। বেড়েছে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম। গত ১৭ মাসের করোনাকালে বেশির ভাগ সময় দেশে সব কিছু বন্ধ ছিল, দফায় দফায় লকডাউন ছিল। মানুষ বলতে গেলে ঘরে বসে ছিল। যারা সরকারি চাকুরে তারা বাদে বেসরকারি চাকুরে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দোকান-পাট, হোটেল- রেস্তোরাঁর কর্মীসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল কর্মী অবর্ণনীয় পরিস্থিতির শিকার হয়েছে এ সময়। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেকেই পথে বসেছে। অন্তত ২২ লাখ মানুষ কর্ম হারিয়েছে। বিদেশ থেকে এসময়ে দেশে ফিরে এসেছে প্রায় ৫ লাখ কর্মী। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ কর্মবাজারের প্রবেশ করছে। যাদের কয়েক লাখের মাত্র কর্মসংস্থান হয়। করোনাকালে তাও ব্যাহত হয়েছে। বেকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন কয়েক কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বেকার কার্যত পরিবারের বোঝা হয়ে আছে। এই সময়ে দারিদ্র্য বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা ও সহায়তা দিয়েছেন। অনিয়ম-দুর্নীতিতে কিছুটা খেয়ে ফেললেও বহু মানুষ, প্রতিষ্ঠান ও খাত উপকৃত হয়েছে। শিল্পক্ষেত্রে যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে তার বেশির ভাগ পেয়েছে বিশেষ বিশেষ খাত ও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা খুব কমই পেয়েছে, যে কারণে তারা পুঁজি বা অর্থসংকটে পড়েছে। অনেকেই শিল্প, দোকান বা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই অর্থাভাবে হাত গুটিয়ে বসে আছে। এর মধ্যে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ মানুষের কর্ম নেই, হাতে টাকা নেই; এর ওপর অব্যাহতভাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা যে কী ধরনের নাজুক অবস্থা, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

অর্থনীতির বিকাশ ও গণমানুষের আর্থিক সাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগের বিকল্প নেই। বিনিয়োগ একাধারে শিল্পায়ন, উৎপাদন, রফতানি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির নিয়ামক। অথচ, বহুদিন ধরে আমাদের বিনিয়োগে চলছে খরা। দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই বাড়ছে না। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের গুরুত্ব অনস্বীকার্য হলেও এ বিনিয়োগ হতাশাজনক বললে কম বলা হয়। সরকারি বিনিয়োগের একটা প্রবাহ লক্ষ করা গেলেও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ, বেসরকারি বিনিয়োগ অধিকতর কার্যকর ও ফলপ্রসূ। করোনা পূর্বকালে বেসরকারি বিনিয়োগের হার ছিল মাত্র ২২ শতাংশ। এই হার বহুদিন পর্যন্ত স্থিতিশীল ছিল। এতে আমাদের বেসরকারি খাতের বিকাশ ব্যাহত হয়েছে। করোনায় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। সাকূল্য বিনিয়োগ এখন ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগ গতিশীল ও জোরদার না হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোও তাদের হাতে জমা থাকা অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে সংকটের শিকার হয়ে ধুঁকছে। ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ এখন দুই লাখ কোটি টাকার ওপরে। এইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণের পরিমাণও বেড়েছে। সবমিলে ব্যাংকগুলোও গভীর সংকটে পড়েছে। আমাদের অর্থনীতির দুই স্তম্ভ রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের অবস্থাও ভালো নয়। উভয়ক্ষেত্রে অবনমন শুরু হয়েছে। জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আয়ে পতন ঘটেছে ২২ শতাংশ এবং রফতানি আয়ে পতন হয়েছে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। ওদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ও রাজস্ব আয় আহরণের হারও পড়ে গেছে। শেয়ারবাজারের অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে সেখানে হস্তক্ষেপের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলে অর্থনীতির যে চিত্রটি আমাদের সামনে স্পষ্ট, সেটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অতীতে অর্থনীতির শক্তি ও সক্ষমতা নিয়ে অনেকেই লম্বা লম্বা কথা বলেছেন। উন্নয়নের রোল মডেল হওয়ার গৌরব করছেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থের টান দেখা দিয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এখন প্রায় গতিহীন হওয়ার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

অর্থনীতির এই অশনিসংকেত মোচনে এখনই আমাদের সতর্ক হতে হবে, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে এক সঙ্গে বসে কীভাবে সংকট উত্তরণ করা যায়, সে ব্যাপারে ভাবতে হবে, আলোচনা করতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। নামকাওয়াস্তে ভার্চুয়াল বৈঠক করে লাভ হবে না। সবাইকে একসঙ্গে বসে ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে এটা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য বিষয়ের মতো অর্থনীতির চলমান ও ভবিষ্যসংকট বিষয়েও ওয়াকিবহাল। এতদিন অর্থনীতিকে বিকশিত ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষ্যে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছেন। এখন অর্থনীতির প্রতিকূল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা ব্যাহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কোনোভাবেই তার কাম্য হতে পারে না। আমরা নিশ্চিত যে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিষয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করছেন। সেই চিন্তাভাবনা বাস্তবায়িত কারতে তাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করি, তিনি অবিলম্বে কাক্সিক্ষত উদ্যোগ নেবেন, এইসঙ্গে তার বিজ্ঞ সহকর্মীদের কাজে লাগাবেন। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করা ছাড়া আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠা ও জনগণের প্রত্যাশিত কল্যাণ নিশ্চিত করার অন্য কোনো পথ নেই। যেহেতু করোনাকারণে অর্থনীতির এই হাল, সুতরাং করোনারোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। টিকাদান কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে হবে। প্রয়োজনীয় টিকার সংস্থান করতে হবে। যতদ্রুত সম্ভব দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে, যাতে করোনাপরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে অর্থনৈতিক কার্যক্রম তরান্বিত হয়।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন