Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিজ্ঞাসার জবাব

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মদ ফাতহুল বারী ফাইয়্যাজ রাজামেহার, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : মানব জাতির রিজিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানের স্বরূপ কী, জানতে চাই?
জবাব : “যেই আল্লাহ তোমাদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন এবং তোমাদের ভিতর থেকে কাউকে কারোর চেয়ে উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন। যেন তিনি তোমাদের যা কিছু দান করেছেন তার ভেতর তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন” (সূরা আল আনয়াম : ১৬৫)। “সম্পদ যেন কেবল ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়।” (সূরা হাশর : ০৭)। “যারা স্বর্ণ রৌপ্য, টাকা-পয়সা সঞ্চয় করে রাখে, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না তাদের কঠিন আজাবের সংবাদ দাও”। (সূরা আত তওবা : ৩৪)। “আর তাদের অর্থ সম্পদে অধিকার রয়েছে প্রার্থীদের (সাহায্য প্রার্থী) ও বঞ্চিতদের।” (সূরা যারীয়াত : ১৯)। “আকাশ ম-লী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর।” (সূরা বাকারা : ২৮৪)। “প্রার্থীদের প্রত্যেকের প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী সঞ্চিত করে রেখেছেন।” (সূরা আস সাজদা : ১০)। উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের রিজিক অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সম্পদ রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে আল্লাহর দেয়া বণ্টন নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে প্রত্যেকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। মানব সমাজে মানব প্রকৃতির প্রেক্ষিত প্রত্যেকের উপার্জন ক্ষমতা এক নয়। কেউ অধিক উপার্জন করে, কেউ পরিমিত, কেউ কম, কেউ একবারেই নয়। এই বিচিত্র উপর্জনক্ষম লোকদের মাঝে ইনসাফ পূর্ণ বণ্টন নীতি অবলম্বনপূর্বক প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবস্থা করাই হলো ইসলামী বাষ্ট্রীয় সমাজের প্রধান দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে এ জন্য অর্থাৎ জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রধানত দুটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মানুষের প্রয়োজন নির্ধারণ : মানুষের প্রয়োজন সম্পর্কে ইমাম শাতিবী ও ইমাম গাযালী (রহ.) একটি সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁরা মানুষের প্রয়োজনকে তিনটি ক্রমিক স্তরে বিন্যাস করেছেন। এগুলো হলো : ১. মৌলিক চাহিদা ২. স্বাচ্ছন্দ্যমূলক ৩. সৌন্দর্যমূলক। এখানে রাষ্ট্রকে প্রথম প্রয়োজনটি পূরণে দায়িত্ব নিতে হবে। অবশিষ্ট দুটি স্ব স্ব ব্যক্তি স্বীয় উদ্যোগ পূরণে প্রবৃত্ত হবে। মৌলিক চাহিদার মধ্যে নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত : ১। বিশ্বস ও আদর্শ : ঈমান, দ্বীন ও আদর্শ । ২। জীবন ধারণের জন্য আবশ্যক : অস্ত্র, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, পরিবেশ, যানবাহন, বিশুদ্ধ পানি, অবসর ইত্যাদি। ৩। পারিবারিক প্রয়োজন : পরিবার গঠন ও সংরক্ষণ। ৪। আকল : শিক্ষা ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ। ৫। সম্পত্তি : ন্যূনতম পরিমাণ। ৬। স্বাধীনতা : চিন্তা, বিবেক, অনুশীলন, স্বাধীনতা। সমাজে বসবাসকারী মানুষের অবস্থা মূল্যায়নান্তে প্রত্যেকের উপরোক্ত চাহিদা নিরূপণপূর্বক তা পূরণে কার কী সহযোগিতা প্রয়োজন তা নির্ণয় এবং তদানুযায়ী সহায়তা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি অবলম্বন ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে সমাজে চার শ্রেণির লোকের সন্ধান পায়। (ক) ধনীক শ্রেণি, (খ) পরিমিত উপর্জনক্ষম, (গ) মিসকিন, (ঘ) ফকির। ফকির তাদের বলা হয় যারা উপার্জন দ্বারা প্রয়োজন পূরণ করতে পারে না এবং মিসকিন তাদের বলা হয় যাদের কিছুই নেই, চরম দরিদ্র। সম্পদের ইনসাফ পূর্ণ বণ্টন নীতি অবলম্বন : ইসলাম সম্পদের আল্লাহ প্রদত্ত ট্রান্সফার ম্যাকানিজম অবলম্বন পূর্বক সমাজে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন ও সহায়তা করে : রাষ্ট্র যদি যাকাত, উশর কাফফারা ও সাদাকাহ খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দরিদ্র জনগণের মধ্যে সুষম বণ্টন করে তাহলে সমাজে কোনো অভাবই থাকবে না। তখন রাষ্ট্রের সঙ্গতিবান প্রত্যেকেই যাকাত আদায়ের শ্রেণিভুক্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তদপরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদার শাসন আমলে যাকাত গ্রহণকারী ছিল না। যদিও কোনো ব্যক্তি থেকে থাকে তবে তারা যাকাত গ্রহণে আদৌ আগ্রহী ছিল না। ইসলামী অর্থনীতির সম্পদ ট্রান্সফার ম্যাকানিজম জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো মানব রচিত ব্যবস্থায় এরূপ বৈশিষ্ট্য নেই, বরং এ বৈশিষ্ট্যের বিপরীত তা হলো দিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হওয়া। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় অর্থ সম্পদের মালিক মানুষ যে উপার্জন করে, এই অর্থ কেবল তার প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হবে। তাতে অন্যের কোনো অধিকার নেই। অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে কোনো নীতি-নৈতিকতার বালাই নিষেধ নেই। এতে সমাজের অক্ষম ও অসহায় ব্যক্তিদের প্রয়োজন পূরণের মতো কোনো সম্পদ থাকে না। তাই তাদের জীবনে কোনোই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই। অর্থশালী ব্যক্তিরাই সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থাকায় তারা এসবকে কেবল স্বার্থ উদ্ধারের কাজে ব্যবহার করে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত সব সংগঠন দরিদ্র মানুষের জন্য নিপীড়ন ও জুলুমের হাতিয়ারে পরিণত হয়। দরিদ্র জনগণ বেঁচে থাকার তাগিদে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জুলুমের শিকার হয়। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় অর্থ হস্তান্তর প্রক্রিয়া এমনভাবে প্রণীত ও বিন্যাস্ত যাতে সব অর্থ সম্পদ ধনীদের হাতেই পুঞ্জীভূত হয়।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন খান



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিজ্ঞাসার জবাব

১৭ নভেম্বর, ২০১৬
১০ নভেম্বর, ২০১৬
৩ নভেম্বর, ২০১৬
২৭ অক্টোবর, ২০১৬
২০ অক্টোবর, ২০১৬
৬ অক্টোবর, ২০১৬
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
২৫ আগস্ট, ২০১৬
১৮ আগস্ট, ২০১৬
১১ আগস্ট, ২০১৬
৪ আগস্ট, ২০১৬
২৮ জুলাই, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ