Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পায়রা সমুদ্র বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ পেল ৬ আদিবাসী রাখাইন পরিবার

পটুয়াখালীর নবাগত জেলা প্রশাসকের দ্রুত পদক্ষেপ

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৮:৩১ পিএম

২৩৭ বছরের পুরানো পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির মায়া পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের জন্য অধিগৃহীত বাড়ি-ঘর ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ বাবদ ছ‘আনি পাড়ার ৬ রাখাইন পরিবার ক্ষতিপূরণের ৯১ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের কাছ থেকে।আজ বুধবার দুপুরে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন তার কার্যালয়ে এসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রায় ৯১ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।

এ সময় পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিএম সরফরাজ, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আল এমরানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ ৬ রাখাইন পরিবারের মধ্যে মোট ৯১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইয়াংসি মাতুববর পেয়েছেন ১২.৪১ লাখ টাকা, চিংদামো রাখাইন ১৯.৯২ লাখ টাকা, মংমাচিন রাখাইন ২৬.৪৫ লাখ টাকা, লাবঅং মাতুববর ৭.৬৫ লাখ, মংচো রাখাইন ৬.৫১ লাখ ও লাচিংমো পেয়েছেন ১৮.৪৫ লাখ টাকা।

ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ করে ছ‘আনি পাড়ার মাতুব্বর চিংদামো রাখাইন বলেন, তারা তাদের বসতবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন এবং তারা কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের রাখাইন অধ্যুষিত ছোটবালিয়াতলী এলাকায় পুনর্বাসন হতে চান যাতে তারা নিজেদের কৃষ্টি ও ধর্মীয় রীতি-নীতি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারেন।

জেলা প্রশাসক মো:কামাল হোসেন জানান, পায়রা বন্দরের অনুকূলে ছ‘আনি পাড়ার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব রাখাইন পরিবারের যথাযথ পূনর্বাসন করবে।

আপাতত এ ৬ টি পরিবারকে কলাপাড়া উপজেলা শহরের ভাড়া বাড়িতে রাখা হবে এবং পরবর্তীতে তাদের চাহিদা মাফিক পূনর্বাসন সাইট নির্মাণ শেষে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, জেলার কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে ছ‘আনিপাড়া গ্রামটির গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৭৮৪ সালে। তখন কয়েকশো পরিবারের বাস ছিল এখানে। কালের বিবর্তনে এখন মাত্র ৬ টি পরিবার অবশিষ্ট আছে। ১৮ জন পুরুষ, ১০ জন নারী আর ২ জন শিশুসহ মোট বাসিন্দা ৩০ জন। পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন গোটা গ্রামটি অর্থাৎ সাড়ে ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে। গ্রামের রয়েছে একটি রাখাইন মন্দির আর এ মন্দিরের সেবাইত হিসেবে রয়েছে এ ৬ পরিবারের লোকজন।

রাখাইন রীতি অনুযায়ী এসব সেবাইতরা জমির মালিক নয়। এরা পাবেন শুধুমাত্র জমির ওপর স্থাপিত অস্থাবর সম্পত্তি ঘর-বাড়ি, গাছপালা। জেলা প্রশাসন এ ৬ পরিবারের অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য বাবদ ৯১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিশোধ করলো।পটুয়াখালীর নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ২৩ জুন দায়িত্বগ্রহণের পরে ৬ পরিবারের ঘরবাড়ির উপর আপত্তির শুনানি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন ১৫ জুলাই। পরবর্তীতে রাখাইন পরিবারে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা সহ চলমান কঠোর লকডাউন সহ সরকারী ছুটির কারণে কিছুটা দেরী হয়। অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হওয়ার পরেই আজ তিনি ৬ পরিবারের মধ্যে ক্ষতিপূরণের ৯১ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন।

১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইনপাড়া ছিল, বর্তমানে সেখানে যথাক্রমে ২৬টি ও ১৩টি পাড়া টিকে আছে।

উল্লেখ্য সূত্র মতে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরের জন্য সরকার ৬১৩৮ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করে, ইতোমধ্যে ৩০৯১ একর জমি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। উক্ত জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১হাজার ১ কোট ৩৮ লাখ টাকা কর্তৃপক্ষ জমা দিলেও হস্তান্তর করা গেছে ৫৬৯ কোট ৩২ লাখ ৭০হাজার। বাকী টাকা জমির মালিকানা আপত্তি সহ বিভিন্ন ধরনের সৃষ্ট জটিলতার কারণে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি । এছাড়াও পায়রা বন্দরকে ঘিরে সরকারে একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের অধিকাংশ টাকা বিতরণ করা সম্ভব হয়নি সৃষ্ট জটিলতার কারণে। জমিঅধিগ্রহন শেষে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সময়েই শুরু হয়ে যায় একশ্রেনীর অসাধু চক্রের অপতৎপরতা। তারা বিভিন্ন ধরনের আপত্তি তৈরী করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে আসছেন, তাদের সাথে সমঝোতা করলে তারা আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। পটুয়াখালীর নবাগত জেলা প্রশাসক গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অধিগ্রহনকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসিত আশ্রয়ণ “স্বপ্নের ঠিকানায়” ২৫০০ পরিবারের মাঝে সহায়তা প্রদানকালে সভায় ঘোষণা দেন অধিগ্রহণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের আর্থিক অর্থ প্রদানে বাধা কাটাতে আপত্তি নিষ্পত্তি প্রতি সপ্তাহে করা হবে।ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রাপ্তিতে দীর্ঘদিনের চলমান দালাল চক্রের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য অধিগ্রহনকৃত জমির এলাকায় প্রয়োজনে ব্যাংকের সহায়তায় ইএফটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের অর্থ প্রদান করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পটুয়াখালী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ