পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
হেব্রনে দখলীকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত ইব্রাহিমি মসজিদে জুমার নামাজ আদায়কালে মুসলিদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরাইলের সেনারা। মুসলিমদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে তারা স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। এ সময় একজনকে রাস্তার ওপর ছুড়ে ফেলতে দেখা যায়। তারপরই ইসরাইলিরা তাকে লাথি মারতে থাকে। তবে কি নিয়ে এই সহিংসতা তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা। এতে বলা হয়, ওই মসজিদটির পরিচালক শেখ হেফজি আবু স্নেইনা বলেছেন, মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসরাইল একটি অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। যদি তা নির্মিত হয় তাহলে এই মসজিদের ঐতিহ্যক্ষুণ্ণ হবে। এর প্রতিবাদে সেখানে নামাজ আদায় করার জন্য ফিলিস্তিনিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মিনিস্ট্রি অব এন্ডোমেন্টস অ্যান্ড রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স থেকে। মসজিদটির প্রাঙ্গণে একটি রুট তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছে বলে সোমবার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এই রুট স্থাপন হলে পার্কিং এলাকার সঙ্গে মসজিদটি সরাসরি যুক্ত হবে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে পুরো স্থাপনাকে ইসরাইল দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন ফিলিস্তিনিরা। এই মসজিদ চত্বরটি মুসলিম এবং ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। মিনিস্ট্রি অব এন্ডোমেন্টস অ্যান্ড রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স বৃহস্পতিবার হেব্রনের সব মসজিদ বন্ধ ঘোষণা করে। এসব মসজিদে যেসব মুসলিম নামাজ আদায় করেন তাদেরকে ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে ইব্রাহিমি মসজিদে সমবেত হতে বলা হয়। আবু স্নেইনা বলেন, ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে মুসলিমরা এ মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তারা ইব্রাহিমি মসজিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। মসজিদে শুক্রবার নামাজ পড়তে মুসলিমদের ঢল নামে। কিন্তু মসজিদের প্রবেশদ্বারে শক্তি প্রয়োগ করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তারা মসজিদ চত্বরে লোহার বেষ্টনি দিয়ে দেয়। নামাজ আদায়কারী এবং সাংবাদিকদের পরিচয় চেক করে। এক প্রত্যক্ষদর্শী আনাদোলুকে বলেছেন, মসজিদে একজন একজন করে পরীক্ষা করে তবেই প্রবেশ করতে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। ফলে তারা আগে থেকে যে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করেছিল, সেখানে বিপুল পরিমাণ মানুষের ভিড় জমে যায়। এই মসজিদে এমনিতেই নামাজ আদায়কারীদেরকে নিরাপত্তা বিধিনিষেধের মুখোমুখি হতে হয়। তাদেরকে কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হয়। এরপর মসজিদের সিঁড়িতে পা রাখার আগে ইলেকট্রনিক গেট পাড় হতে হয়। এই মসজিদটি ইহুদি এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে পরম শ্রদ্ধার ও পবিত্র স্থান। কারণ, এখানেই রয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সমাধি। ইহুদিরা এই স্থানকে ‘টম্ব অব দ্য প্যাট্রিয়ার্স’, অন্যদিকে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে স্মরণ করে একে ইব্রাহিমি মসজিদ বলে থাকেন মুসলিমরা। ১৯৯৪ সালে এই মসজিদে মুসলিমরা প্রার্থনা করতে গেলে তাদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি করা হয়। তাতে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ১০০ মানুষ। এর ফলে ইব্রাহিমি মসজিদ এলাকাটি ইহুদি এবং মুসলিম প্রার্থনাকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। হেব্রনে বসবাস করেন কমপক্ষে দুই লাখ ফিলিস্তিনি। পাশাপাশি বসবাস করেন কয়েক শত অতি উগ্র জাতীয়তাবাদী ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী। তাদের এই এলাকা সেনাবাহিনী দিয়ে প্রচন্ড রকমভাবে সুরক্ষিত। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখল করে নেয় ইসরাইল। তারপর থেকে সেখানে ডজন ডজন অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে তারা। তাতে বসবাস করেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে এই পশ্চিম তীরকে চায়। আনাদোলু, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।