পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বঙ্গবন্ধু এক সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন না। ছিলেন শুধুই ‘মুজিব ভাই’। কেউ কেউ বলতেন শেখ মুজিব। স্বাধীনতা-পূর্বকালে এই শেখ মুজিবই ছিলেন নিপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর, তাদের পক্ষে তাদের জন্য কথা বলার একমাত্র ভরসা। নির্ভীক চিত্তে, শির উঁচু করে শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে আর কেই-বা বজ্রকন্ঠে প্রতিবাদী ভূমিকায় নামতে পারতেন! আর তাইতো তিনি হয়ে উঠেছিলেন জুলুমবাজ পাকিস্তানি শাসকদের চক্ষুশূল। পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্যের কথা বললেই শাসকরা হুংকার দিয়ে উঠতো,‘এই ব্যাটা রাষ্ট্রদ্রোহী’। শুরু হতো তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। সে চক্রান্ত তাকে থামাতে না পারলেও গতি কমিয়ে দিতে পারতো নিঃসন্দেহে। ষাটের দশকের পুরোটাই তিনি ছিলেন চক্রান্তের শিকার। এ চক্রান্ত করতো শাসকদের সাথে মিলেমিশে এ দেশের কিছু নেতিবাচক মনোবৃত্তির লোক যারা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পজিশনওয়ালাদের পেছনে ছুটতো নিরন্তর। চক্রান্তের সাথে কখনো কখনো যুক্ত হতো ষড়যন্ত্র, যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। উদ্দেশ্য ছিল একটাই- বাঙালিদের মনোবল চূর্ণ করে দিয়ে এবং বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করে পূর্ব পাকিস্তানের ৫৬% বাঙালি নাগরিকের নেতৃত্বশূন্য করে রাজনীতিকে ৪৬% পশ্চিম পাকিস্তানীদের কব্জায় নিয়ে নেওয়া।
যেখানে গুণীজনরা মহান মুক্তিযুদ্ধে দেখেছেন ‘মহাসিন্দুর কল্লোল’ সেখানে আমরা দেখি এক শ্রেণির ‘বাঙালিবিদ্বেষী বাঙালিদের’ যারা স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে লিপ্ত হয় চক্রান্তে-ষড়যন্ত্রে। এ দুয়ের সাথে য্ক্তু হয় এক শ্রেণির বিশ্বাসঘাতক আর ক্ষমতালাভী। গোষ্ঠীভেদে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আর স্বার্থপরতার হয়তো রকমফের ছিল। তবে লক্ষ্য ছিল তাদের এক বা কাছাকাছি। একটা গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয়, যার ছিল বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান। লক্ষ্য, বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রটির স্বাধীন মর্যাদাকে অস্বীকার করা, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামোসহ নানা খাতে পুনর্গঠন-সংস্কারের কাজে ব্যস্ত সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা এবং সময়-সুযোগ মতো দেশটাকে আবার পাকিস্তানি বা তাদের মতোই কারো হাতে তুলে দেওয়া বা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আরেকটা গোষ্ঠী ছিল ডানপন্থী। তারা আগের গোষ্ঠীকে বলতো বামপন্থী। ডানপন্থীরা বামপন্থীদের কর্মকান্ডের সাথে তাদের আদর্শের, বা বলা যায়, লক্ষ্যের মিল খুঁেেজ পায় এবং ওদের অপতৎপরতায় আনন্দে উল্লসিত হয়ে ওঠে। এরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এক স্বার্থান্ধ গোষ্ঠী। এদের ছিল ক্ষমতার লোভ, আর বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের প্রতি প্রতিহিংসা।
হরেক নামে বিভিন্ন গোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তারা আলাদাভাবে, আবার কখনো সংঘবদ্ধভাবে দেশকে অস্থির করে তোলে এবং বঙ্গবন্ধু সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। কেউ নেয় ‘যুক্তফ্রণ্ট’ গঠনের উদ্যোগ, কেউ দেয় ভুখা মিছিলের ডাক, কেউ জানায় সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠনের দাবী, কেউ গঠন করে ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি’, কেউ তুঙ্গে তোলে সরকারবিরোধী প্রপাগান্ডা, কেউ নেমে পড়ে ভারতবিরোধী প্রচারণায়। একটি তথাকথিত বাম গোষ্ঠীতো ‘ইসলামী সমাজতন্ত্র’ কায়েমের লক্ষ্যে শুরু করে দেয় হম্বিতম্বি। এ গোষ্ঠীর নেতা ’৭৩ সালের নির্বাচন-পূর্ব এক জনসভায় প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বলেন, “আর বসিয়া থাকার সময় নাই-এখন বন্দুক নেয়ার সময়। অবাধে নির্বাচন অনুষ্ঠান করিতে গেলে পাল্টা মার দিতে হইবে। ... ইন্দিরা গান্ধী মুজিবের সরকারের আজ্ঞাবহ সরকার বানাইয়া এদেশে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ চালাইতেছে..।” এ সময় ক্ষমতালোভীরা স্বার্থপরতার কাদা গায়ে মেখে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে অনেক দলের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছিল ছোট স্বাধীন দেশটিকে। এক দল ভেঙ্গে আরেক দল তৈরির কারখানা বনে গিয়েছিল দেশটি। কোনো কোনো দল এককভাবে ফন্দিফিকিরে মত্ত হয়। আবার ছোটখাটো রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে (মূলত বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে) আন্দোলন চালিয়েছে, গণভবন জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে এবং আরো অনেক প্রকারের উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনসাধারণকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছে; যদিও তারা সফল হয়নি, বঙ্গবন্ধুপ্রিয় জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। দুঃখের বিষয়, তাদের মুখে কোনো সুপরামর্শ ছিল না; ছিল শুধুই ঝাল, তার সাথে মিশেল ছিল পরশ্রীকাতরতার বিষবাষ্প। ওই ছিলছিলা মনে হয় এখনো যায়নি। বঙ্গবন্ধুকন্যার শাসনামলেও আমরা এরকমটা দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে।
তারা শুধু বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধেই যে বিষোদগার করতো তা নয়; তাদের মধ্যে কেউ কেউ সারা বিশ্বে প্রশংসিত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধেও বিষ ছেড়েছে এই বলে যে, এটি নাকি সমাজতান্ত্রিক নয়। নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা অপবাদ দেওয়ার মতো অবস্থা। জনগণকে বিভ্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোই ছিল উদ্দেশ্য। আবার আরেকটি গোষ্ঠী জাতিসংঘে যাতে বাংলাদেশ প্রবেশই করতে না পারে সেজন্য শুরু করে এক ঘৃণ্য চক্রান্ত। এটি প্রকাশ্যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বিপৎগামীদের হীন প্রচেষ্টা। এর সাথে যুক্ত হয় একটি গোষ্ঠীর দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার অপতৎপরতা। তাদের চক্রান্তের মধ্যে ছিল প্রথমে গ্রামাঞ্চলে ঘাঁটি স্থাপন করে জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলে তাদের আধিপত্য কায়েম করার পর পরবর্তী ধাপে শহরাঞ্চল দখল করা, আর এভাবে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করা। তারা বঙ্গবন্ধুর সরকারের দ্বিতীয় বছরের বিজয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি বানচালের মাধ্যমে দেশব্যাপী অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে মারাত্মক সব গোপন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং পরিকল্পনা মাফিক কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসে বোমা নিক্ষেপ করে, ঢাকা শহরের ভেতরেই ডিনামাইট ব্যবহার করে রেললাইন উড়িয়ে দেয়। একই সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালায়। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির এক বছর যেতে না যেতেই ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে এ গোষ্ঠীটি উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চলে সশস্ত্র কৃষক সংগ্রাম পরিচালনা করে, থানা-বাজার-ব্যংক লুট করে, বিত্তশালী কৃষকদের ধানের গোলা লুট করে এবং আরো নানা রকমের অপতৎপরতার আশ্রয় নেয়। তখনকার পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালে এসব খবর সম্বন্ধে জানা যাবে। আমরা যা দেখেছি তা সোজা কথায় বলতে গেলে বলা যায়, সুদূরপ্রসারি চক্রান্তের মাধ্যমে পাকিস্তানি ভাবধারার এ গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলপূর্র্ণ পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে প্রশাসক হিসেবে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করে। তারা বঙ্গবন্ধুকে এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধু যতদিন বেঁচে ছিলেন তত দিন তারা তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে গিয়েছে।
একটি গোষ্ঠী ছিল তারা প্রকাশ্যে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে, ‘মুক্তিফৌজ’ নাম দিয়ে জঙ্গিগ্রুপ তৈরি করে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা শুরু করে, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ-হত্যা শুরুর মাধ্যমে দেশব্যাপী আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করে। লুটপাট ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্মকান্ড। এ গোষ্ঠীটি পঁচাত্তরের পনের আগস্টের শোকাবহ বর্বর ঘটনাকে সমর্থনপূর্বক স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে যে, তারা আসলে দেশপ্রেমী কেউ ছিল না। তারা ছিল বঙ্গবন্ধুবিরোধী বিদেশীদের ক্রীড়নক। বার বার তারা ‘বিপ্লবী জনগণের রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ঘোষণা এবং দেশব্যাপী মারণাস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে যে, তারা আসলে ছিল ক্ষমতালোভী। স্বাধীনতার পরপরই ‘বৈঞ্জানিক সমাজতন্ত্রী’ নামধারীরা যেরূপ ভয়ঙ্কর অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছিল, তা ছিল আক্ষরিক অর্থেই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র।নতুন রাষ্ট্রে ক্ষমতার ভাগীদার না হতে পেরে মনোকষ্টে ভোগা এসব স্বার্থান্ধরা মরিয়া হয়ে উঠেছিল ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার জন্য। পরিণামে ক্ষমতা না পেলেও অন্যরা অর্থাৎ স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার মতো হীন কর্মকান্ডকে সমর্থন দিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে মর্মে তৃিপ্তবোধ করে উল্লসিত হয়েছে। এ ছাড়াও, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নিজ দলের ভেতরেই ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি মানসিকতার একটি ছদ্মবেশি চক্র। এরা উপরে উপরে ছিল সাধু-সজ্জন আর ভেতরে ভেতরে ছিল বিভীষণ। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সাথে মিলে তারা হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর ভয়ঙ্কর শত্রু। একটি চক্র খুবই পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়; এরা তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্যও মরিয়া হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে এটি ছিল আড়ালে-আবডালে পরিচালিত মারাত্মক ষড়যন্ত্র। তারাই শেষ পর্যন্ত তাদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে ফেলে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দিয়ে দেশটাকে নিয়ে যায় সামরিক শাসনের কবলে।
চক্রান্তকারী গোষ্ঠীদের কর্মকান্ড এবং চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, মূলত ব্যক্তির স্বার্থই হরেক রকমের দেশবিরোধী গোষ্ঠীর চক্রান্তমূলক কর্মকান্ডকে পরিচালিত করেছে; তারা দেশকে কিছু দিতে পারেনি; জনগণও তাদেরকে গ্রহণ করেনি। ক্ষমতা পেতে চেয়েছিল তারা। সঙ্গত কারণেই তা তারা পায়নি। তাই ক্ষেপেছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। দেশপ্রেম নয় বরং স্বার্থপ্রেম তথা আপনপ্রেম ছিল প্রচন্ড। আর তাদের স্বার্থপ্রেমের শিকার হতে হয়েছে দেশের জনগণকে। জনগণ হারিয়েছে তাদের আশাভরসার স্থল বঙ্গবন্ধুকে। মাথার উপর থেকে নির্ভরতার ছায়া সরে যাওয়ায় জনগণ কষ্ট পেয়েছে, দেশ অনেক বছর ধরে পেছন দিকে হেঁটেছে।
চক্রান্তকারী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে যারা ছিল তারা খুব ভালো করেই জানতেন যে, বঙ্গবন্ধুর কী রকম অবদান ছিল স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরে। কিন্তু তারা স্বার্থান্ধ হওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে এক পাশে ঠেলে রেখে নিজের স্বার্থের পূজা করেছে। তারা কী জানতেন না যে, বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটিতে হাজার বছর ধরে যারাই শাসন করেছে তারা কখনো একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ তৈরি করতে পারেননি; পেরেছিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধুই। আসলে আগে তো অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রভাবনা বঙ্গবন্ধু ছাড়া কারো মধ্যে ছিলই না। অথচ অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে একটা দেশের সত্যিকার উন্নয়ন কখনো সাধন করা যায় না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সব সময় দেশকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর এ কারণেই বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন, যা অনেকের গাত্রদাহ ঘটিয়েছিল; কারণ তারা সব সময় মনে করতো সাম্প্রদায়িক দ্ব›দ্ব জিইয়ে রাখতে পারলে লুটপাট করা যায়, জোরজবরদস্তি করে জমি-সম্পদ দখল করা যায়, হীন স্বার্থসিদ্ধির পথ সুগম হয়। বঙ্গবন্ধুবিরোধীরা আরো জানতো যে, তিনিই একমাত্র সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা যিনি নতুন দেশটাকে গড়ে তুলতে পারবেন এবং বিশ্বের আসরে দেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করতে পারবেন। তিনি তা প্রমাণও করে দিয়েছিলেন অল্পসময়ের মধ্যে অনেক দেশের স্বীকৃতি আদায় করে, অভূতপূর্ব কূটনৈতিক দক্ষতায় বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করে, জাতিসংঘে বাংলাদেশকে সদস্যভুক্ত করে, সংবিধান উপহার দিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে জনগণের শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়ে, উচ্চশিক্ষায় কালাকানুন বাতিল করে এবং স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে আইন প্রণয়নপূর্বক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে এবং আরো অনেক কিছুতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এনে। বঙ্গবন্ধুর এতোসব সফলতা বিরোধী গোষ্ঠীর পরশ্রীকাতর মনে আরো বেশি অগ্নিজ্বালা ধরিয়ে দেয়। আর তারই ফলশ্রুতিতে তারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের জাল আরো বেশি করে বিস্তৃত করে দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যা ছিলেন তা-ই ছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর নশ্বর দেহটাকে নিয়ে যেতে পেরেছেন কিন্তু তিনি রয়ে গেছেন এ দেশের জনমানুষের মনে অবিনশ্বর। যে মহান হৃদয়ের মহামানব অক্লান্ত পরিশ্রম করে, জীবন বাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করে, জনগণকে আপন হৃদয়ে ঠাঁই দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ আমাদেরকে দিয়ে গেছেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে নব্যদেশের একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবং তাঁর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকীতে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম আর কামনা করি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক উপাচার্য, বাউবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।