পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী ওলামা লীগসহ ১৩টি ইসলামী সমমনা সংগঠন গতকাল সকালে ১০ দফা দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পল্টনে এসে শেষ হয়। মানববন্ধনে দেশকে শীর্ষ উচ্চতায় পৌঁছানো এবং ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়্যার্ড পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রবল আপত্তি আর তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে কুফরী শিক্ষানীতি এবং হিন্দুত্ব নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসূচি কোনোরূপ সংশোধন না করেই এখন শিক্ষা আইনও চূড়ান্ত করার কাজ দ্রুত চালিয়ে যাচ্ছে, যা মুসলমানদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এ কুফরী শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন মুসলিম জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হলে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় জ্ঞান ও অধিকার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য হারিয়ে নাস্তিক্যবাদী চেতনায় গড়ে উঠবে, যা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ চক্রান্ত।
বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের ধারা ৭-এর (১), (২), ও (৩) অনুযায়ী, সাধারণ বিষয়ের একই পাঠ্যবই মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হলে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত মাদরাসা শিক্ষা তার স্বাতন্ত্র্য হারাবে। স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষার মধ্যে শুধু নামের পার্থক্য ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
বক্তারা বলেন, শিক্ষা আইনের ধারা ৭-এর (১১) অনুযায়ী, সরকার নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে শ্রেণী ও বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করবে এবং তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ নিশ্চিত করবে। এর বাইরে অন্য কোনো পুস্তক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ বিধান লংঘন করলেও শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদিস শরীফসহ ইসলামী মূলধারার বই পড়ানো দ-নীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। তাই অবিলম্বে ইসলামবিদ্বেষী ও ইসলামী শিক্ষা সংকোচনকারী শিক্ষানীতি-২০১০ এবং শিক্ষা আইন-২০১৬ বাতিল করতে হবে। শিক্ষানীতি-২০১০ এবং শিক্ষা আইন-২০১৬ কোনোমতে জাতীয় সংসদে পাস করা যাবে না। নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যসূচি সংস্কার না করে নতুন বই ছাপানো বন্ধ রাখতে হবে।
মানববন্ধনে অন্যান্য উত্থাপিত দাবিসমূহ হচ্ছেÑ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এখন থেকেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন ছুটি দিতে হবে। সারাদেশের স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে পবিত্র আশুরা পালনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আহলে বাইতগণের ফজিলত ও মর্যাদা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নাশকতামুক্ত রাখতে রাজপথে পূজার অনুমতি না দিয়ে মন্দিরের ভেতরে পূজার ব্যবস্থা করা। ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়ার পরও ভারতে মুসলমানরা ঈদ উপলক্ষে জাতীয়ভাবে সব প্রদেশে ছুটি পায় না তাহলে বাংলাদেশে দুর্গাপূজায় কিভাবে ৩ দিন ছুটির দাবি উঠতে পারে। ভারতে মুসলমানদের সংরক্ষিত আসন না থাকলেও বাংলাদেশে কিভাবে সংখ্যালঘুদের ৬০টি সংরক্ষিত আসনের দাবি উঠতে পারে। এসব উদ্ভট দাবি আমলে নেয়া যাবে না। স্টার জলসাসহ বাংলাদেশে সব ভারতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে হবে। নদী দূষণ বন্ধে ভারতীয় হাইকোর্টের নির্দেশে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন নিষিদ্ধ। নদীতে প্রতিমা বিসর্জন নিষিদ্ধে বাংলাদেশেও আইন করা উচিত।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পীরজাদা, পীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান বিপ্লবী জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, (পীর সাহেব, টাঙ্গাইল), সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন আলহাজ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সভাপতি সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ, আলহাজ মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী-সভাপতি বঙ্গবন্ধু ওলামা ফাউন্ডেশন। মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, দপ্তর সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটি, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, মাওলানা আব্দুস সুবহান, ডা: সাইফুদ্দীন মিয়াজি প্রমুখ।
শিক্ষা আইন প্রসঙ্গে বক্তারা আরো বলেন, আইনের ধারা ১৩ অনুযায়ী, ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নির্বাচনের জন্য স্থায়ী বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। তারা শিক্ষক নির্বাচন করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। এ ধারার মাধ্যমে মাদরাসায় আলেম নিয়োগের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এ ধারার মাধ্যমে বেআমল ও দলীয় লোকের নিয়োগ করে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, আইনের ধারা ২০ (খ) (২) অনুযায়ী, দাখিল ও আলিম পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ পরিচিতি এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক হবে। সাধারণ বিষয়ে মাদরাসাগুলোতে ৭টি বিষয়ই বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। এতগুলো বিষয় বাধ্যতামূলক করে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পবিত্র কুরআন মাজিদ, পবিত্র হাদিস শরীফ, আরবী, ফারসি, উর্দু বিষয়ের অন্য বিষয়গুলো পড়ার সুযোগ কমিয়ে দিয়ে মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের চূড়ান্ত আয়োজন করা হয়েছে। এতে আলেম তৈরি না হয়ে ফাসিক-ফুজ্জার বের হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, আইনের ধারা ২২ (৩), (৪), (৫) অনুযায়ী, সরকারের অনুমতি ব্যতীত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা/স্থাপন করা যাবে না। একইভাবে ৪০ নম্বর ধারার (২), (৩), (৪) উপধারায় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এ আইনের প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। এ আইন লংঘনের জন্য তিন লাখ টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
এ আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির দানে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।