পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দেশে মোট সাতটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এ শিক্ষানীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। আর এ নীতির উপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতি জাতীয় শিক্ষাক্রমে প্রতিফলিত হয়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ইসলামী শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শাখা থেকে ইসলামী শিক্ষাকে পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছিল। আর বর্তমানে মানবিক শাখায় ইসলামী শিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ শিক্ষাটি কলেজগুলোতে অবহেলিত অবস্থাতেই পড়ে আছে। এতে কলেজের ইসলামী শিক্ষার শিক্ষকগণ ঐচ্ছিক বিষয়ের একজন গুরুত্বহীন শিক্ষকে পরিণত হয়ে আছেন। অন্যদিকে এ বিষয়ের ছাত্রসংখ্যাও আস্তে আস্তে লোপ পেতে পেতে তলানীতে গিয়ে থেমেছে। অথচ, ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষেও কলেজগুলোতে মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসা-সকল শাখার শিক্ষার্থীগণ ইসলামী শিক্ষাকে আবশ্যিক সাবজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করতো।
আবার প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০-এ ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়গুলোর বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়গুলোর ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত চালু থাকবে। বিষয়গুলোর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এ মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করেই একজন শিক্ষার্থীর গ্রেড নির্ধারিত হবে। এ প্রস্তাবে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’কে গুরুত্বহীন হিসেবে বোর্ড পরীক্ষার বাইরে রাখা হয়েছিল। এর মানে দাঁড়ায়, ‘ইসলামী শিক্ষা’ বিষয়ে গ্রেড উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের পড়ার দরকার হবে না। শিক্ষকদেরও ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণের তেমন কোনো আগ্রহ থাকবে না। কারণ, শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষা ব্যতীত এটি পড়তে কখনোই আর আগ্রহী হবে না। আর শিক্ষকগণও এ বিষয়ে ক্লাস গ্রহণে আর কোনো গুরুত্ব দেবেন না।
অথচ, জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ ছিল যে, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা’। কিন্তু এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষানীতিতে উল্লেখিত শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অমান্য ও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে সম্পূর্ণভাবে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়েছে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো যে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রতিফলনের কোনো ব্যবস্থা ২০২০-এর শিক্ষাক্রমে রাখা হয়নি! আর শিক্ষানীতিতে ঘোষিত শিক্ষার্থীদের নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনের যে কথা বলা হয়েছে, সেটিও জাতীয়ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। অর্থাৎ স্কুল ও কলেজে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বিষয়ে পড়াশুনার আর কোনো সুযোগ নেই।
করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মাত্র কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের এসসসি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে শিক্ষাক্রম ২০২২ প্রকাশ করা হয়েছে। ৩০ মে ২০২২ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির এক যৌথসভায় এ শিক্ষাক্রমের অনুমোদন দেয়া হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৩ সাল থেকে শ্রেণিভিত্তিক নতুন এ শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। মূল্যায়নের ভিত্তি হবে ক্লাসের মাধ্যমে অর্জিত শিখন পদ্ধতি। অবশ্য পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে শিখন কার্যক্রমের পাশাপাশি পরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
নতুন সিলেবাসে এখনকার মতো এসএসসি ও এইসএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচীর ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি বোর্ড পরীক্ষা হবে। এ দুটি পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে নির্ধারিত হবে এইসএসসির চূড়ান্ত ফলাফল। নতুন এ শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো বিভাগ বিভাজন থাকছে না। শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক ও অভিন্ন সিলেবাসে লেখাপড়া করবে। একজন শিক্ষার্থী মানবিক, বিজ্ঞান নাকি কমার্স বিষয়ে পড়বে, এটি নির্ধারিত হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। নতুন এ পদ্ধতিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি সাবজেক্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো: ১. ভাষা ও যোগাযোগ, ২. গণিত ও যুক্তি, ৩. জীবন ও জীবিকা, ৪. সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, ৫. পরিবেশ ও জলবায়ু, ৬. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ৭. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ৮.শারীরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ৯. শিল্প ও সংস্কৃতি এবং ১০. মূল্যবোধ ও নৈতিকতা।
স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, আগামী বছর থেকে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ‘ইসলামী শিক্ষা’ নামে কোনো সাবজেক্ট আর থাকবে না। ফলে কোমলমতি শিশুরা ইসলাম শব্দটার সাথে অপরিচিতই থেকে যাবে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা স্কুলে আর থাকলো না। সরকারিভাবেই স্কুল থেকে এ শিক্ষাটি তুলে দেয়া হলো! স্কুল থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়ার বিষয়টি ধর্মপ্রাণ বাঙালি জনতার কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশের সাধারণ জনগণ এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এ সিদ্ধান্ত জনতার কাছে ইসলাম বিদ্বেষ হিসেবে পরিচিতি পাবে। যার পুরা দায়ভার প্রধানমন্ত্রীর উপর গিয়ে পড়বে, যা সংশ্লিষ্টদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সিলেবাসে উল্লেখিত অন্য কোনো বিষয় নিয়েই মৌলিক কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন হচ্ছে না। যতো পরিবর্তন-পরিবর্ধন আর রকম ফের হচ্ছে শুধু ‘ইসলাম শিক্ষা’ নিয়েই।
মূলত ইসলামী শিক্ষার প্রতি একটি মহলের কুদৃষ্টি সৃষ্টি হয়েছে ২০০১ সাল থেকে। এ সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি মহল ইসলামী শিক্ষাকে ধ্বংসের পাঁয়তারা শুরু করে। দশম শ্রেণির ১০টি সাবজেক্টের কোনোটিতে তারা হাত দেয়নি। তারা হাত দেয় ১০০ নম্বরের ‘ইসলামী শিক্ষা’র প্রতি। তারা ১০০ নম্বরের ইসলামী শিক্ষাকে ৫০ নম্বরে সংকুচিত করার হীন প্রয়াস শুরু করে। দেশের সবাই জানেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ শুধু নির্বাচন পরিচালনা করা। তিন মাসের জন্য ক্ষমতায় থাকা সরকারটির এ বিষয়টি নিয়ে নাক গলানোর কথাই নয়। কিন্তু ওই সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা চরম ইসলাম বিদ্বেষী কিছু ব্যক্তি এ শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১০০ নম্বরের ইসলামী শিক্ষার প্রতি তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। পরবর্তীতে ধর্মীয় জনতার প্রতিবাদের মুখে তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
ইসলামী শিক্ষা নিয়ে এ ষড়যন্ত্র সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। অন্য কোনো শিক্ষা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা ও ষড়যন্ত্র নাই। যত মাথাব্যথা ও ষড়যন্ত্র শুধু ইসলাম ধর্ম আর ‘ইসলামী শিক্ষা’ নিয়ে। ষড়যন্ত্রের এ ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে শুরু হয় স্কুলের ‘ইসলামী শিক্ষা’ নিয়ে নতুন কারসাজি। এ সময় ‘ইসলাম শিক্ষা’ বইয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’। অথচ, হিন্দুধর্ম শিক্ষা ও খ্রিস্টান ধর্ম শিক্ষা বইতে এ রকম কোনো নাম দেয়া হলো না। এখানে প্রচ্ছন্নভাবে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ দুটো নামের মাঝখানে ‘ও’ অব্যয় দ্বারা দুটো ভিন্ন জিনিস বুঝানো হলো। আর উভয়ের মাঝে বিরোধ আছে মর্মে সূক্ষ্ম একটি কারসাজিরও বীজ বপন করা হলো। কারসাজির এ সূত্র ধরে দুষ্টচক্রটির পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল এ শিক্ষাকে পাঠ্যসূচি থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া। চক্রটি তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শতভাগ সফল হলো। বর্তমানে ২০২২ সালের শিক্ষাক্রমে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ নামক বইটি সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে দিলো।
এ আলোচনার প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে পারি, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বাদ দেয়া একটি অযৌক্তিক ব্যাপার। এটা একদিকে জাতীয় শিক্ষানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, অন্যদিকে মুসলিম জীবনের কদর্য এক হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি এটা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। দেশের সংবিধানের শুরুতে আল্লাহতে বিশ্বাসের কথা লেখা আছে। এসব বিবেচনায় এদেশের স্কুল থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ যাওয়াটা একবারেই অযৌক্তিক, বৈপরীত্য ও হাস্যকর একটি ব্যাপার। এটি সংবিধান অবমাননারও শামিল।
গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এদেশের ক্ষমতায় আসীন আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী একজন ধর্মভীরু নারী হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতার দীর্ঘ সময়ে তিনি ইসলাম ও মাদরাসা শিক্ষার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বতন্ত্র একটি আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। দাওরায়ে হাদীছকে মাস্টার্সের মান দিয়ে বাংলাদেশে একটি অসম্ভব সাহসী ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। ইসলামী শিক্ষা প্রসারের নিমিত্তে ইতোমধ্যে তিনি ১০১০টি দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করছেন। তাঁর এ কাজগুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রশংসনীয় হয়েছে। এমতাবস্থায়, শিক্ষাক্রম থেকে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাদ যাওয়াটা একবারেই বেমানান ও বৈপরীত্য একটা বিষয়।
বাংলাদেশের মহান স্থপতি হচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার মুসলিম মানসে ধর্মীয় চেতনা ও গবেষণা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেছিলেন। (পূর্বে স্বায়ত্বশাসিত মাদরাসা বোর্ড ছিল না)। তিনি আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষ অবলম্বন ও সাহায্য প্রেরণ করেছিলেন। ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। মূলত বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন একটি ভঙ্গুর বাংলার অবকাঠামোর উপরে দাঁড়িয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে মুসলিম উম্মাহর জন্য যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসাযোগ্য।
এমতাবস্থায় তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে স্কুল থেকে ‘ইসলাম শিক্ষা’ তুলে দেওয়াটা দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। এটা ‘কারা করছে, কার স্বার্থে করছে এবং কেন করছে’ সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বেকায়দায় ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র বলে দেশবাসী মনে করে। কারণ স্কুলের ধর্ম শিক্ষাটি এদেশের মাটি ও মানুষের শিকড়ের সাথে জড়িত। এ শিক্ষাটি জাতির জাতীয় শিক্ষা হিসেবে পরিচিত। সুতরাং স্কুল থেকে ‘ইসলাম শিক্ষা’ তুলে দেয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কর্তৃপক্ষের ভাবা দরকার, ইসলামী শিক্ষা ও সংষ্কৃতির প্রভাব পৃথিবীতে মোটেই কম নয়; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেকগুণ বেশি। সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ, আর উত্তরের নরওয়ে থেকে দক্ষিণের চিলি-এ বিশাল পৃথিবীর দিকে একটু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলে বুঝা যাবে, যুগ যুগ ধরে মানুষ একটু শান্তি, একটু স্বস্তি আর নির্মল জীবন যাপনের জন্য ইসলাম ধর্মকেই বেছে নিয়েছে। সত্য উদঘটনের জন্য নিরপেক্ষভাবে তারা ইসলামী শিক্ষাকে গবেষণা করে চলেছে। নিবিড়ভাবে তারা ইসলামী সংষ্কৃতির সম্মোহনী শক্তির অনুসন্ধান করে চলেছে। আর বর্তমান বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগেও এই শিক্ষার অনুসন্ধান ক্রমে বেড়েই চলেছে। যুগসন্ধিক্ষণের প্রতিটি স্তরেই কোনো না কোনো জগত বিখ্যাত ব্যক্তি এ শিক্ষার কাছে আত্নসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন। ইসলামী শিক্ষার ছায়াতলে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়ে ধন্য হয়েছেন। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের প্রাণের শিক্ষা হলো সেই ‘ইসলামী শিক্ষা’। সুতরাং ইসলামী শিক্ষার প্রতি অন্ধবিদ্বেষ পোষণ করা কারো জন্যই কাম্য নয়।
বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বেকারত্ব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আয়-বৈষম্য ও পর্নোগ্রাফির বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা। এমতাবস্থায় তাদেরকে ন্যূনতম একটু ধর্মের শিক্ষা প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবি। তাই কোমলমতি শিশুদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই ধর্মকে যে সরানো উচিত হবে না সেটা কর্তৃপক্ষের মনে রাখা প্রয়োজন। আমরা চাই, এ শিক্ষা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ুক! স্কুল এবং কলেজে আগের মতোই ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাধ্যতামূলক থাকুক।
লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, দা’ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।