নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শুরু আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়টাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য ছিল অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। চেনা কন্ডিশন বিবেচনায় যদিও কেউ কেউ বলছিলেন মিরপুরের মাঠে বাংলাদেশ একটি বা সর্বোচ্চ দু’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে যেতে পারে। সেখানে প্রথম তিনটি ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলেন সাকিব, মুস্তাফিজ, আফিফদের দল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে ৪-১ ব্যবধানে।
এ সিরিজে শেষ ম্যাচে বোলিং পারফরমেন্সের পর সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ‘ডাবল’ পুরো করেছেন। তিনি হলেন প্রথম ক্রিকেটার, যিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০০ রান করেছেন ও ১০০ উইকেট নিয়েছেন। এ সিরিজে জয়ের পাশাপাশি আর যা পেল বাংলাদেশ দল, তা নিচে দেয়া হল।
ফিজের স্বরূপে ফেরা
মুস্তাফিজুর রহমান ক্যারিয়ারের একদম প্রথম সিরিজ থেকেই বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে বৈচিত্র্য এনে দিয়েছিলেন। রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ব্যাটসম্যানদের সেøায়ার কাটারের ফাঁদে ফেলে ব্যাট স্পিড নিয়ে দ্বিধায় ফেলে দিয়েছিলেন তিনি সেই ২০১৫ সালেই। মাঝে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলা ফিজ এই সিরিজ দিয়েই বলতে গেলে ফিরেছেন আগে বিধ্বয়সী রূপে। কখন চালাতে হবে ব্যাট! এই ভাবনায় এখন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলও, তৃতীয় ও চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একটি বলেও চার বা ছয় হজম করেননি মুস্তাফিজ, এই দুই ম্যাচে মোট আট ওভারে দিয়েছেন ১৮ রান।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মুস্তাফিজের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, মুস্তাফিজের এই স্পেলগুলো যেকোনো পাঁচ উইকেট পাওয়া স্পেলের মতোই কার্যকরী। মুস্তাফিজকে বর্ণনা করতে গিয়ে মইজেজ হেনরিক্স ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মুস্তাফিজের কব্জির মোচড় পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারেন এবং একই সাথে কাঁধের ব্যবহার অনেক ভালো। প্রথম দুই ম্যাচে মুস্তাফিজ ৪৬টি সেøা বল করেছেন এবং দুটি বল করেছেন জোরের ওপর।’ হেনরিক্সের ব্যাখ্যায় উঠে আসে এই কন্ডিশনে মুস্তাফিজ পুরো উপযোগিতাই তুলতে পারেন, ‘কারণ তার হাতে বৈচিত্র্য আছে একই সাথে আছে গতি, যখন যা প্রয়োজন হয়।
ফিল্ডিংয়ে উন্নতি
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং নিয়ে অভিযোগ ও সমালোচনা হয় নিয়মিত, বিশেষত সীমিত ওভারের খেলায় ফিল্ডিং দিয়েই বৃত্তের ভেতরে রান থামানো, কঠিন ক্যাচ ধরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো বিষয় যেখানে ঘটে থাকে, সেখানে সহজ ক্যাচ ছেড়ে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও সেটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না-এটা অনেক সময় দেখা গেছে।
চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতেই একটা হাইলাইট হয়ে থাকবে শরিফুল ইসলামের বলে অ্যাস্টন অ্যাগার সোজা ব্যাট চালালে সেটা শামিম হোসেনের দারুণভাবে ডাইভ দিয়ে ধরে ফেলার মুহ‚র্তটি। এই সিরিজে মাথার অনেক ওপরে ওঠা বলগুলোও বাংলাদেশের ফিল্ডাররা মিস করেননি। বৃত্তের ভেতর বল খুব বেশি বেরোতে দেননি, যার ফলে অপ্রয়োজনীয় রান কম হজম করতে হয়েছে। ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে দেখা যায়, চার বা পাঁচ রানের ব্যবধানই ম্যাচের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায় নিয়মিত-সেখানে ফিল্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ম্যাচ হারে বা জয়ে।
সোহানের উইকেটকিপিং
আগে অনেক ম্যাচেই খোলা চোখেই দেখা গেছে বাংলাদেশের উইকেট কিপিংয়ে দুর্বলতা। তবে বিশেষ করে স্পিন বোলিংয়ে উইকেটের ঠিক পেছনেই থাকা ব্যক্তির ভ‚মিকা অনেক বেশি, বোলারের সাথে যোগাযোগ, স্ট্যাম্পিং করার সুযোগ তৈরি করা, যথাযথ রিভিউ সিদ্ধান্তে সহায়তা - এসব ভ‚মিকায় নুরুল হাসান সোহানকে বেশ চটপটে মনে হয়েছে এই সিরিজে।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ১০ রানের জয় পায়। যেখানে ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র এক রান দেন, সেই ওভারে একটি বল ব্যাটের কানায় লেগে পেছনে যেতে পারতো-কিন্তু সোহান ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্তত দু’টি রান বাঁচিয়ে দেন।
এছাড়া স্পিন বোলিংয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে ক্ষিপ্রতা ও ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে যথাযথ জায়গায় ফিল্ডারদের নির্দেশনা দেয়ার কাজেও সোহানের বিচক্ষণতা লক্ষ্য করা গেছে এই সিরিজে।
নতুন স্পিনাররাও প্রমাণীত
মেহেদি হাসান ও নাসুম আহমেদ গত কয়েক সিরিজ ধরেই বাংলাদেশ দলের সাথে আছেন এবং কয়েক ম্যাচ খেলেছেনও। কিন্তু এই সিরিজ জয়ে দুজন সহায়ক ভ‚মিকা পালন করেছেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট এনে দেয়া এবং ওভারপ্রতি বেশ হিসেবি বোলিং করে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছেন।
বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের এই যাত্রায় প্রথম আশাব্যঞ্জক মুহ‚র্তও আসে মেহেদি হাসানের হাত ধরে, যখন প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের একদম প্রথম বলেই অ্যালেক্স ক্যারিকে বোল্ড আউট করে প্যাভিলিয়নে ফেরান তিনি। অভিজ্ঞ স্পিন বোলার অ্যাডাম জাম্পা, অ্যাস্টন অ্যাগার এমনকি সাকিব আল হাসানের চেয়েও সফল ছিলেন মেহেদি আর নাসুম।
আফিফ-শরিফুলের উত্থান
আফিফ হোসেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে পারফর্ম করার পর থেকেই তাকে নিয়ে আলোচনা চলছে ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে। কেউ কেউ ‘পরবর্তী সাকিব’ তকমাও দেন তাকে। আফিফ হোসেন ছোট ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি ছাপও রেখেছেন নিজের সামর্থ্যরে-কিন্তু বড় কোন দলের বিপক্ষে এই প্রথম এভাবে পারফর্ম করলেন।
সাকিব সর্বোচ্চ রান করলেও এই সিরিজে আফিফ হোসেন ব্যাট হাতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, উইকেটে যেখানে রান নেয়া কঠিন আফিফ নামার সাথে সাথেই রান বের করার বেশ সাবলীল চেষ্টা করে থাকেন। মিচেল স্টার্কের বলে একটা কভার ড্রাইভ তো পুরো সিরিজের সেরা শটগুলোর একটি হয়ে আছে। আফিফের আরেকটি দিক-খুব সাবলীলভাবে ছক্কা মারতে পারেন তিনি।
একই সাথে মুস্তাফিজের সাথে জুটি বেঁধে শরিফুল ইসলামও নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ রেখেন এই সিরিজে। সেরা উইকেট শিকারিদের তালিকায় তার নাম আছে, শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শরিফুলের বল থেকে রান নিতে হিমশিম খেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। একই সাথে মুস্তাফিজ যখন একপ্রান্তে রান নেয়া কঠিন করে তুলছিলেন, তখন শরিফুল এর ফায়দা নিয়ে উইকেট আদায়ের কাজটাও করেছেন।
সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়া সিরিজ বেশ কয়েকটি আশাবাদের বীজ রোপণ করেছে বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল সাজানো এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে সবকিছু।
সিরিজের সেরা ৫
ব্যাটসম্যান ম্যাচ/ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
মার্শ ৫/৫ ১৫৬ ৫১ ৩১.২০ ৯৮.৭৩ ০/১
সাকিব ৫/৫ ১১৪ ৩৬ ২২.৮০ ১০০.৮৮ ০/০
আফিফ ৫/৫ ১০৯ ৩৭* ২২.২৫ ১২২.৪৭ ০/০
মাহমুদউল্লাহ ৫/৫ ৯১ ৫২ ১৮.২০ ৯৬.৮০ ০/১
নাঈম ৫/৫ ৯১ ৩০ ১৮.০০ ৮৮.৩৪ ০/০
বোলার ম্যাচ/ইনি. উই. সেরা গড় ইকো. ৪/৫
হ্যাজেলউড ৪/৪ ৮ ৩/২৪ ১৬.৬২ ৫.৪২ ০/০
নাসুম ৫/৫ ৮ ৪/১৯ ১১.৫০ ৫.১১ ১/০
মুস্তাফিজ ৫/৫ ৭ ৩/২৩ ৮.৫৭ ৩.৫২ ০/০
শরিফুল ৪/৪ ৭ ২/১৯ ১১.৮৫ ৬.৩৮ ০/০
সাকিব ৫/৫ ৭ ৪/৯ ১৮.১৪ ৬.৪৫ ১/০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।