Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসন

বাংলাদেশি পানিসীমায় মাছ শিকার

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের পর বাংলাদেশের পানিসীমা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। পূর্ণ অধিকারে থাকা বিশাল বিস্তৃত এ পানিসীমা বাংলাদেশের জন্য অরক্ষিত না হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ সুযোগে প্রতিবছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের পানিসীমায় ঢুকে লাখ লাখ টন মাছ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। মাছ ধরায় তারা ব্যবহার করছে দ্রুতগামী ট্রলার,অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রপাতি। পক্ষান্তরে মান্ধাতা আমলের ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও ট্রলার নিয়ে দেশীয় জেলেরা তাদের সঙ্গে কোনভাবেই পেরে উঠছে না।
সার্বিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে খুলনা জেলা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভারতের জেলেরা প্রতিনিয়িত আমাদের মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে বাংলাদেশে যখন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, ভারতে তখন এ নিষেধাজ্ঞা থাকে না। ফলে সহজেই ওরা এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। একই সময় মাছ ধরতে না পেরে আমাদের জেলেরা অনাহারে অর্ধাহারে থাকে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে দু’ দেশই লাভবান হতো। তিনি আরও বলেন, গত বছর দুবলার চর এলাকায় ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে হাজার হাজার জেলে খালি হাতে ফিরেছে। কারণ তার আগেই ভারতীয় জেলেরা ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। এবারও সাগরে মাছ নেই। খুলনার পাইকগাছা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর গত ২৪ জুলাই থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ জেলেই মাছ পাচ্ছে না। অথচ দু’ মাস বন্ধ থাকার কারণে এখন জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ার কথা। এতো মাছ কোথায় গেলো বা কারা ধরে নিয়ে গেল, তা আমরা বুঝতে পারছি না। খুলনার রূপসা মৎস্য আড়তের আজিজুল হক বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম। অথচ সাগর-নদীতে ইলিশ তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকগাছা উপজেলার আব্দু সামাদ ও জাহিদুল জানান, সাগরে কোনো ভারতীয় ট্রলারের সামনে পড়লে তারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।
বাংলাদেশের পানিসীমা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে কোস্টগার্ড। কোস্টগার্ডের অফিসিয়াল ওয়েব পেজের সর্বশেষ তথ্যমতে টহল এবং অন্যান্য কাজের জন্য রয়েছে ১৮টি অত্যাধুনিক বোট ও ২৫টি বিভিন্ন ক্লাসের জাহাজ। চোরাচালান, বনজ সম্পদ রক্ষা, বন্দরগুলোর নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভিযানের পাশাপাশি অবৈধ মৎস্য আহরণ বিরোধী অভিযান কোস্টগার্ড পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে বিশাল সমুদ্র সীমা রক্ষায় এ বাহিনীর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কোস্টগার্ড নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। কোস্টগার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মাসে ৭৪ ভারতীয় জেলেকে ৫টি ট্রলারসহ আটক করা হয়। এরমধ্যে গত শনিবার এফবি স্বর্ণতারা নামে একটি ট্রলারসহ ১৩ জেলে, গত বছরের ২ ডিসেম্বর ১৭ জেলেসহ এফ বি মা শিবানী ও ২৩ ডিসেম্বর ১৬ জেলেসহ এফবি মঙ্গল চন্ডি এবং চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ২৮ জেলেসহ শঙ্খদ্বীপ ও স্বর্ণতারা নামে দুটি ট্রলার আটক করে করা হয়। এদিকে বাংলাদেশের পানিসীমায় অনুপ্রবেশ করে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণের সময় ১টি ফিশিং ট্রলারসহ ১৩ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে কোস্ট গার্ডের মোংলা ইউনিট। গতকাল কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেঃ কমান্ডার আমিরুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত শনিবার মধ্যরাতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জাহাজ সোনার বাংলা সমুদ্রে টহলরত অবস্থায় বাংলাদেশের পানিসীমায় একটি বিদেশি মাছ ধরার ট্রলারকে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করতে দেখে।
উক্ত ট্রলার কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কোস্ট গার্ডের টহলরত জাহাজ তাদের ধাওয়া করে মোংলা ফেয়ারওয়ে বয়া থেকে ১৫.৪ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে বাংলাদেশের পানিসীমানা হতে এফবি স্বর্ণতারা নামক ফিশিং ট্রলারসহ ১৩ ভারতীয় জেলেকে আটক করে। জব্দকৃত ট্রলার ও আটককৃত ১৩ জন ভারতীয় জেলেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ