Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাজ্যের এ দ্বৈতনীতি গ্রহণযোগ্য নয়

| প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনা সংক্রমণের হার বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের নাগরিকের যুক্তরাজ্য ভ্রমণের একটি নীতিমালা রয়েছে। ‘ট্রাফিক লাইট’ নামের এই নীতিমালার মধ্যে আছে, কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের কোয়ারেন্টিনমুক্ত ভ্রমণের জন্য সবুজ তালিকা, মাঝারি ঝুঁকির দেশের জন্য অ্যাম্বার তালিকা এবং বেশি ঝুঁকির দেশের জন্য লাল তালিকা। লাল তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে আগতদের হোটেলে ১০ দিন কোয়ারিন্টেনে থাকা বাধ্যতামূলক। এ ভ্রমণ তালিকার নতুন আপডেটে বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে ভারতকে গত রোববার মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ বা অ্যাম্বার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে পাকিস্তানকে লাল তালিকায় রাখার পর গত ১৯ এপ্রিল ভারতকেও যুক্তরাজ্য একই তালিকায় রেখেছিল। নতুন আপডেটে ভারতকে অ্যাম্বার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এবং পাকিস্তানকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করায় ব্রিটিশ এমপিদের অনেকে তাদের সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড ওয়েস্ট আসনের এমপি নাজ শাহ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য তার কোয়ারিন্টেন ট্রাফিক লাইট সিস্টেম পরিচালনার ক্ষেত্রে ‘কুরুচিপূর্ণ আচরণ’ প্রদর্শন করেছে। তিনি যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছেন, গত ৭ দিনে পাকিস্তানে প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন সংক্রমিত হওয়া সত্তে¡ও লাল তালিকায় রাখা হয়েছে। একই সময়ে ভারতে প্রতি ১০ হাজারে ২০ জন সংক্রমিত হলেও অ্যাম্বার তালিকায় উন্নীত করা হয়েছে। তিনি এ সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। বোল্টন দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার এমপি ইয়াসমিন কুরেশি এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘সরকার সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধার পক্ষে পাকিস্তানকে শাস্তি দিতে চাইছে। এটি পাকিস্তানের প্রতি স্পষ্ট বৈষম্য।’ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ব্রিটিশ সরকার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, যাতে দেশটির দ্বৈতনীতি স্পষ্ট।

বিশ্বজুড়ে করোনার যে ভয়ংকর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তার উৎপত্তি ও বিস্তার ভারতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে ১৩৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনার উৎপত্তির কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের তরফ থেকে চীনকে যেভাবে দায়ী করা হয়েছিল, একইভাবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে মোদী সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। এর ফলে দেশটির নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য দেশটিকে লাল তালিকাভুক্ত করে। এখন লাল তালিকা থেকে অ্যাম্বার তালিকায় উন্নীত করেছে। এতেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন তুলেছেন সে দেশেরই কয়েকজন এমপি। তারা ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের সংক্রমণ হার কম থাকা সত্তে¡ও পাকিস্তানকে অ্যাম্বার শ্রেণীতে উত্তীর্ণ না করাকে যুক্তরাজ্য সরকারের বৈষম্যমূলক ও দ্বিমুখী আচরণ হিসেবে অভিহিত করছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, যুক্তরাজ্যের সাথে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা কারো অজানা নয়। আন্তর্জাতিক অনেক ক্ষেত্রে তারা একে অন্যের নীতি অনুসরণ ও সমর্থন করে। এ কথা সকলেরই জানা, উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন এবং মুসলমান শাসকদের হটিয়ে ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করার ক্ষেত্রে তৎকালীন ভারতীয় হিন্দু নীতিনির্ধারকদের সহায়তা ছিল। মুসলমান বিদ্বেষ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে হাত মিলিয়ে পুরো উপমহাদেশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশ বা কলোনিতে পরিণত করেছিল তারা। উভয়ের যৌথ ষড়যন্ত্রে মুসলমানরা চরম বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক আচরণের শিকার হয়। ব্রিটিশ-ভারতের ঐতিহাসিক এই যোগসূত্র এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈরী নীতি এখনও রয়ে গেছে। অন্যদিকে আধুনিক এ যুগেও ব্রিটেনের বর্ণবৈষম্যের নীতি সুবিধিত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সে নীতি তারা অবলম্বন করে চলেছে। যদি তা না হতো তবে ভারতের চেয়ে কম সংক্রমণের হার নিয়েও পাকিস্তান কেন লাল তালিকায় থেকে যাবে? দেখা যাচ্ছে, দেশটিতে ভ্রমণের বিধি-নিষেধের ক্ষেত্রে মুসলমান দেশগুলোই বেশি রয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের বৈষম্যমূলক এ নীতি নিশ্চিতভাবেই মুসলমান দেশগুলোকে অসন্তুষ্ট করবে। পরিবর্তিত বিশ্বায়নের এ যুগে এখন এককভাবে কোনো দেশই কারো ওপর নির্ভরশীল নয়। জনপদ দখল করে শাসন-শোষণ ও অবিচারের সাম্রাজ্যবাদী নীতির দিন এখন আর নেই। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সমতাভিত্তিক সুসম্পর্কই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে। এ বাস্তবতা সকলেরই মান্য করা উচিৎ।

যুক্তরাজ্যের কঠোর বিধি-নিষেধের আওতায় বা তার ট্রাফিক লাইট সিস্টেমে বাংলাদেশ এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি। এটি আশার কথা। তবে এক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেশটির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। দেশটির কোনো ধরনের তালিকায় যাতে আমাদের অন্তর্ভুক্ত হতে না হয়, এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেখানে আমাদের দেশের লাখ লাখ নাগরিক বসবাস করছে। তাদের ভ্রমণ বা যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মুসলমান দেশগুলোর নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের বিধি-নিষেধে যে বৈষম্যমূলক নীতি প্রতিফলিত হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি ও হ্রাসের নিরিখে দেশটি শ্রেণী বিন্যাস করতেই পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ব্রিটিশ এমপিরা যথার্থভাবেই এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদ করেছেন। আমরা আশা করব, ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিতর্কের অবসান ঘটাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাজ্য


আরও
আরও পড়ুন