পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে আওয়ামী লীগের বাইরে কার্যত অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ‘রাজনীতি’ নেই। বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির রাজনীতি এখন বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। জাতীয় পার্টি সরকারকে খুশি করতে তোষামোদীতে ব্যস্ত। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বাম ও ইসলামী দলগুলো আলোচনায় আসে না। এককভাবে রাজনীতির মাঠে ঝান্ডা উড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটিকে ঘিরে অনেক সুবিধাবাদী মৌমাছির আবির্ভাব ঘটেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যন্ত একই চিত্র। সর্বোত্রই আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কিছু নেই। হঠাৎ আওয়ামী লীগ হয়ে যাওয়া ধান্দাবাজ নেতাদের কেউ মূল দলে কেউ অঙ্গ সংগঠনে ঢুকে গেছেন। যাদের সেটা সম্ভব হয়নি তারা নিজেরাই আওয়ামী লীগের ছাতার নিচে থাকতে ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এই ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতা নেত্রীদের বাড়বাড়ন্তে অনেক নিবেদিতপ্রাণ নেতা পেছনের সারিতে পড়ে গেছেন। হঠাৎ গড়িয়ে উঠা সংগঠনগুলোর নেতানেত্রীদের অপকান্ড আর অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতার বিতর্কিতকান্ডে বারবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী দলটিকে। মো. সাহেদ, হেলেনা জাহাঙ্গীর, পাপিয়া, জি কে শামীম, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, দর্জি মনিররা দলের নেতাকর্মীদের বারবার লজ্জায় ফেলে দিচ্ছেন। এদের অপকান্ডে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই বিব্রত; দলের অভ্যন্তরে মূল নেতারা ভুঁইফোড় সংগঠন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে অসংখ্য বিতর্কিত নেতানেত্রীর মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, যারাই নামের আগে ‘লীগ’ কিংবা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ অথবা জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করছে কেউই অনুমোদিত নয়। এরা ধান্দাবাজ, প্রতারক, সুবিধাবাদী ও ভুঁইফোড়। এরই মধ্যে বিতর্কিত আড়াইশ’ রাজনৈতিক দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোড় সংগঠনের হাইব্রিড নেতাদের চামচামি, পদবাণিজ্য, তদবির বাণিজ্যের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন দলের ত্যাগী নেতারা। প্রভাবশালী অনেক নেতার প্রশ্রয়ে গড়ে উঠা এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের ও অনুপ্রবেশকারী নেতারাই দাপটের সাথে চলছে এবং গাড়ি, বাড়ি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করা ত্যাগী নেতারা ভুঁইফোড়দের আশ্রয়দাতা অনেক প্রভাবশালী নেতাদের চক্ষুশূল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির মাধ্যমে এসব ভুঁইফোড় হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারীদের উত্থান হওয়ায় দলের দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ অনেক দিনের। তবে এবারই প্রথম ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
নানা কর্মকান্ডে আলোচিত-সমালোচিত ‘চাকরিজীবী লীগ’ খুলে বসা হেলেনা জাহাঙ্গীর এবং বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ সভাপতি মনির ওরফে দরজি মনির গ্রেফতারের পর আতঙ্কে রয়েছেন এসব সুযোগ সন্ধানী। অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ নিজের ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভ করে গা-বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলকে বিতর্কিত ও বিব্রতকর অবস্থার মুখে ফেলে দেওয়া এসব অবৈধ সংগঠনের কাউকেই ন্যূনতম ছাড় দেয়া হবে না। বিতর্কিত আড়াইশ’ রাজনৈতিক দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভুঁইফোড় সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গঠনতন্ত্রের বাইরে অননুমোদিত দোকান খুলে অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন শুরু হয়েছে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা যত বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা নেতাই হোন না কেন, এবার কাউকেই আর ছাড় দেওয়া হবে না। এদের পৃষ্ঠপোষকদেরও খোঁজা হচ্ছে। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, দল যখন ক্ষমতায় না থাকে তখন তাদের দেখা মেলে না। ক্ষমতায় এলেই ওরা গড়ে তোলে নিত্যনতুন লীগ। সুবিধাভোগীরা গত এক যুগে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে গড়ে তুলেছে নতুন নতুন সংগঠন। এর মধ্যে ঢাকা নগরীতেই পাঁচ শতাধিক সংগঠন রয়েছে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে। এ ছাড়াও জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে এদের সংগঠন। আওয়ামী লীগের অনুমোদন করা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন থাকার পরও নিত্যনতুন লীগ গড়ে ওঠাকে বিস্ময়কর সুবিধাবাদী অবস্থান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ধান্দাবাজি আর চাঁদাবাজির মতলবেই সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এরা গজিয়ে ওঠে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, দলের সঙ্কটকালে কাউকে পাওয়া যায়নি। ক্ষমতার এক যুগে গজিয়ে ওঠা সুযোগ সন্ধানী ও ভুঁইফোড় এসব সংগঠনের নেতাদের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে মূল দল আওয়ামী লীগকে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ধান্দাবাজদের অপতৎপরতা বন্ধে আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত আটটি সহযোগী ও দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হলো ছাত্রলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ। গঠনতন্ত্রে না থাকলেও মহিলা শ্রমিক লীগ, চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের ‘সায়’ রয়েছে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ, মোটর চালক লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মতো কিছু সংগঠনের কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগ ধারণ করে।
‘লীগ’ নামে যত ভুঁইফোড় সংগঠন : লীগ শব্দ ব্যবহার করে শতাধিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে ‘ওলামা লীগ’ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠনের কর্মকান্ডে সরকারকে বারবার বিব্রত হতে হয়েছে। তবে এ সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কথা বলেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সংগঠনটির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, আওয়ামী প্রচার লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগ, তৃণমূল প্রজন্ম লীগ, সজীব ওয়াজেদ জয় গবেষণা লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট লীগ, বঙ্গবন্ধু সংহতি লীগ, আওয়ামী ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী পরিবার লীগ, কেন্দ্রীয় আল্লাহওয়ালা লীগ, মিডিয়া লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ, অভিভাবক লীগ, ইতিহাস চর্চা লীগ, অধিকার আদায় লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ, বাংলাদেশ জনসেবা লীগ, আওয়ামী শিশু-কিশোর লীগ, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক লীগ, নাপিত লীগ, ফকির লীগ, জননেত্রী লীগ, প্রবীণ লীগ, ডিজিটাল লীগ, নাগরিক লীগ, আওয়ামী হারবাল লীগ, আওয়ামী অনলাইন লীগ, বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ, উন্নয়ন প্রচার লীগ, বিশ্বমাতা উন্নয়ন লীগ, প্রবীণ হিতোষী লীগ, ৪০টি সংগঠনের সমন্বয়ে সম্মিলিত আওয়ামী পরিষদ, উদ্যোক্তা লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি লীগ, আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী তরুণ প্রজন্ম লীগ, তরিকত লীগ, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন লীগ, সেবক লীগ প্রভৃতি।
আরো আছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, আমরা মুজিব সেনা, চেতনায় মুজিব, রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি, জননেত্রী পরিষদ, দেশরতœ পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, আমরা মুজিব হবো প্রভৃতি। এ ছাড়াও ধান্দাবাজির দোকানের মধ্যে রয়েছে- নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী, নৌকার নতুন প্রজন্ম, আমরা নবীন নৌকার প্রজন্ম, আওয়ামী শিশু যুবক সাংস্কৃতিক জোট, ঠিকানা বাংলাদেশ, জনতার প্রত্যাশা ইত্যাদি। এর বাইরে আর কত সংগঠন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দিতে পারেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।