Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

আমার দীর্ঘ জীবনে করোনাভাইরাস রোগের নাম কখনো শুনিনি। আমাদের বাল্যবয়সে আশ্বিন-কার্তিক মাসে ম্যালেরিয়া ছিল এক বাধ্যতামূলক অসুখ। ম্যালেরিয়া ছাড়াও ছিল কালাজ্বর, নিউমোনিয়া, ব্রোঙ্কাইটিস প্রভৃতি রোগ। এরপর এক পর্যায়ে এলো যক্ষ্মা রোগের যুগ। তখন বলা হতো: যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা। তখন যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা ছিল না। তারপর এমন দিন এলো যখন বলা হতে লাগলো যক্ষ্মা এখন সারে। এখন যক্ষ্মারও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে।

এরপর নানা রোগ ও তার চিকিৎসা আবিষ্কৃত হওয়ার পর এখন চলছে করোনাভাইরাসের যুগ। এটা এমন এক রোগ, যার কোনো চিকিৎসাই নেই। এটা এমন রোগ, যার কোনো ওষুধ এ যাবৎ আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অবিরাম চেষ্টার পর কিছু টিকা আবিষ্কৃত হয়েছেমাত্র। সব চাইতে বড় কথা, এ রোগ কীভাবে, কোথায় দেখা দেয়, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা সহকারে কিছু বলা যায় না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বের সব চাইতে উন্নত দেশ। সেখানে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করাটা এক রকম অসম্ভব ব্যাপার। অথচ, সেই অসম্ভবই এখন শুধু সম্ভব নয়, কঠিন সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু তাই নয়, ইউরোপ থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে এ অদ্ভুত রোগ বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের দেশেও। বর্তমানে আমাদের প্রিয় জন্মভ‚মিতে করোনা অনেকটা দ্রুতগতিতেই বিস্তার লাভ করে চলেছে।

প্রথম দিকে প্রধানত ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রভৃতি বড় বড় শহরগুলোতে করোনা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু মানুষ ক্রমেই শহরমুখো হয়ে উঠাতে এখন রোগ গ্রামেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।

যারা এতদিন ভেবে এসেছে যে, মানুষ চেষ্টা করলে এবং সঠিক চেষ্টা করা গেলে একদিন না একদিন চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কাছে ধরা দেবে এ রোগের প্রতিষেধক। তারা এখন কিছুটা হলেও হতাশ। এই প্রেক্ষাপটেই মানুষের মনে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো, করোনা প্রতিরোধ কি মানুষের পার্থিব প্রচেষ্টার দ্বারা সম্ভব নয়? এ ক্ষেত্রে হতাশ হলে চলবে না। প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

আমার স্পষ্ট মত, করোনার অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের কোনো প্রচেষ্টাকেই বাদ দেয়া বা অবহেলা ও অবমূল্যায়ন করা চলবে না। সব প্রচেষ্টার পরও যে কাজটি আমাদের অবশ্যই করে যেতে হবে, তা এই যে, সবরকম মানুষের সাধ্যমতো সর্বপ্রকার প্রচেষ্টার পরও বিশ্বস্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা জানাতে হবে, তিনি যেন আমাদের করোনা নামের এই গজব থেকে মুক্তি দেন। মনে রাখতে হবে, মানুষকে সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা এই দুনিয়ায় তার খলিফা তথা প্রতিনিধি বানিয়েছেন। একথা পবিত্র কোরআন শরিফে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বণর্নাও করেছেন। অবশ্য তিনি মানুষকে সকল ক্ষমতা দিয়ে দেননি।

আজ যদি আমরা সমগ্র বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকাই আমরা কী দেখব, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার বিধান মেনে চলছে না। তার ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে এখন এক অদ্ভুত রোগ দেখা দিয়েছে, যার কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা কোনো দেশই খুঁজে পাচ্ছে না।

মানুষ বিশ্বস্রষ্টার বিধান মেনে না চলার কারণেই এই গজব। যদি এ গজব থেকে বাঁচতে হয়, তা হলে প্রথমত, বিশ্বস্রষ্টার বিধান মেনে চলতে হবে। নইলে কোনো দেশ বা জাতিই এ গজব থেকে রক্ষা পাবে না।

মনে রাখতে হবে, বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহতায়ালা কোনো দেশ বা কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের পালনকর্তা নন তিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক। আল্লাহতায়ালা সম্পর্কে এই মহাসত্যকে পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম সুরার প্রথম আয়াতেই তিনি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই আয়াতটা কী? ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’। অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা একমাত্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহতায়ালার। এই আয়াতে তিনি বলেননি যে, তিনি শুধু মুসলমানদের বা শুধু আরবদের রব।

আল্লাহ প্রদত্ত জীবন-বিধানের এই বিশ্বজনীন পরিচয় ভুলে গিয়ে মুসলমানরা নিজেদের একটি সম্প্রদায় হিসেবে ধারণা দেয়ায় দুনিয়ায় তাদের ওপর নেমে এসেছে নানারূপ গজব ও ব্যর্থতা। ইসলামের বিশ্বজনীন রূপ থেকেও বিশ্ববাসী হয়েছে বঞ্চিত। যতদিন পর্যন্ত মুসলমানরা তাদের এই ভুল বুঝে তা সংশোধন করতে সক্ষম না হবে, ততদিন পর্যন্ত তারাও যেমন কৃতকার্য ও কল্যাণ লাভে ব্যর্থ হবে, তেমনি বিশ্ববাসীও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থেকেযাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন