বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গণপরিবহন বন্ধ রেখে রপ্তানীমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ঢাকামুখী কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কিভাবে যাবে ঢাকায় তা নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে বাস টার্মিনালগুলোতে। এনিয়ে ক্ষোভে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সকাল থেকেই ফেসবুকে ঢাকামুখী মানুষের ভোগান্তির অসংখ্য চিত্র ভাসছে। পরিবহন না পেয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ ভ্যানে, কেউ রিকসা-সিএনজি নানান উপায়ে চরম কষ্ট শিকার করে কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধে নেমেছেন।
শনিবার সকাল থেকেই ঢাকামুখী মানুষের স্রোত নামতে দেখা যায়। শুক্রবার রাতে ঘোষণা সোনার পর সকাল থেকেই ঢাকায় পাড়ি জমাতে থাকে তারা। কোন পরিবহন না পেয়ে অনেকে পায়ে হেঁটেই ঢাকা আসছেন।
করোনার উর্ধ্বগতিকালীন শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘দেশের হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে যে সমস্ত করোনা রোগী ভর্তি আছে, ভর্তি হচ্ছে, বা মারা গিয়েছেন তার শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি গ্রামের মানুষ। বর্তমানে গ্রামে এমন কোন বাড়ি খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন যে বাড়িতে ১/২ জন করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ ধারী লোক নেই বা সম্প্রতি ছিলনা।এই সমস্ত বাড়ি থেকে লক্ষ লক্ষ লোক হঠাৎ করে গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় গাদাগাদি ঠাসাঠাসি করে ঢাকায় ফিরছে। আগামী একমাসে ঢাকার পরিণতি কি হতে চলেছে ভাবলেও বোধশক্তি অবশ হয়ে যায়।’’
সুজিত পাল লিখেছেন, ‘‘৫ তারিখের আগে আসার প্রয়োজন নেই, কারো চাকরী যাবে না, সেই প্রেক্ষিতে কারখানার আশেপাশের শ্রমিক দিয়ে ডিউটি শুরু হবে। এই যে নির্দেশনাগুলো তা সরকারী পূর্ববর্তী নির্দেশের ধারাবাহিকতায়ে একটি বিশেষ নির্দেশনা এবং সেটা মানা উচিত। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকিতে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভদ্রলোকের ছদ্ববেশধারী মালিকরা মুখে বলছেন সরকারী নির্দেশনা মেনে আশেপাশের শ্রমিক দিয়ে চালাবেন। অপরদিকে তাদের ফ্যাক্টরীর ইনচার্জ/সুপারভাইজারদের মাধ্যমে চাকরী হারানোর ভয় নামক বিশেষ জাদু দিয়ে শ্রমিকদের উড়ে আসতে বাধ্য করছেন। ফলে আগামীকাল আশেপাশের নয় বরং সকল শ্রমিক দিয়ে ফ্যাক্টরী চলবে, এটা নিশ্চিত। শুধু যারা রাস্তায় রাস্তায় রাত কাটাবে কিংবা সকালে পৌছাতে ব্যর্থ হবে তারাই এবসেন্ট থাকবে। হয়তো সেটা 2-4% এর বেশি নয়।’’
রকন মির্জা সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘‘আপনাদের এই সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত দেশের করোনা বৃদ্ধিরোধ সম্ভব না। গার্মেন্টস মালিকরা আপনাদের মত বোকা না, শ্রমিক ছাড়া ফেক্টরি চালাবে। প্রত্যেক শ্রমিককে নদী সাতার কেটে পার হয়ে হলেও অফিসে থাকতে হবে। কঠোর লকডাউন দিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারলেন না, তাহলে কি দরকার ছিলো এই সব নাটক করার। লকডাউন দিয়ে বাস বন্ধ রাখলেন কিন্তু ফেরি চালু রাখলেন। আর তাতে কি হল ফেরি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পার হল বাজারের মত করে, এটাই আপনাদের লকডাউন!!! একটা সিদ্ধান্ত দিলেন ৫ তারিখ, তা পরিবর্তন করে দিলেন ১ তারিখ। এইগুলো পরিপক্কতার ব্যাপক ঘাটতির বহিঃপ্রকাশ। সব জ্বালা যন্ত্রনা শুধুমাত্র শ্রমিকদের।’’
ইঞ্জি. সাইফ সবুজ চরম ক্ষোভ থেকে লিখেছেন, ‘‘শিল্পকারখানা খোলা কাল থেকে। খুলতেই হত। কিছু করার নাই । কথা হচ্ছে খুলতে যখন হবেই তখন কোন রকম পরিকল্পনা বা রোড-ম্যাপ ছাড়া এত অগোছালোভাবে প্রতিবার কাজগুলো কেন হচ্ছে ? কোন রকম যানবাহনের ব্যাবস্থা না করে গরু-ছাগলের মত ঢাকায় ফেরত আসতে কেন বারবার এই গরীব মানুষগুলোকে বাধ্য করা হচ্ছে? এই যে, জন্তু-জানোয়ারের মত মানুষগুলো ফেরীতে গাদাগাদি করে ঢাকা আসছে এতে করে কি করোনা বাড়ছে না কমছে ? মানে ইচ্ছা হলো, এসি রুমের মধ্যে বসে, ঠাণ্ডা কোল্ড ড্রিংকসে চুমুক দিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এরপর ছাগলের বাচ্চাগুলো জাহান্নামে যাক, আমার কি আসে যায় ? আমার তো আর কষ্ট হচ্ছে না । এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তো আর আসতে হচ্ছে না। কি এক অদ্ভুত অমানবিকতা। প্রতিবার একই কাহিনী দেখতে হচ্ছে। .. ইগ্নোর করতে যেয়েও পারি না।’’
আশিক আহমেদ ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘আগস্টের ১ তারিখ থেকে শিল্প কারখানা খুলেছেন, এদিকে লঞ্চ-ট্রেন-বাস বন্ধ, শ্রমিকরা তাহলে উড়ে আসবে?আবার ছোট ছোট যানবাহন সিএনজি অটোরিকশা মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন, এই আপনাদের রাষ্ট্র পরিচালনা? ধিক্কার জানাই আপনাদের_যত্তসব ফাউল জনভোগান্তি সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্তের জন্য।’’
তুহিন লিখেছেন, ‘‘১ তারিখ খোলা রাখার আগে চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিল কতজন শ্রমিক কারখানার আশেপাশে আছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলে দিয়েছেন আসেপাশের লোক দিয়ে কারখানা চালু হবে, আরে ভাই আশেপাশে শ্রমিক আছে কয়জন, সবাইতো লকডাউন শিথিল করার পর সবাই বাড়ি চলে গেছে, এরকম ডিসিশন দেখলে ঘৃন্না লাগে। আমরা বাঙ্গালী, সরকার জানে আমরা অনেক অন্যায় অত্যাচার সইতে পারি, তাই আমাদের উপর এ রকম অমানবিক নির্যাতন করে।’’
তবে মোঃ সায়েদুর লিখেছেন, ‘‘সরকার তো এ ভাইবোন দের বাড়িতে বেড়াতে যেতে বলেনি, তারা গ্রাম টা কে করোনা বিস্তার করে এখন শহর কেও অসুবিধার মধ্যে ফেলবে। আর সরকার ও এই অসুবিধার দায় এড়াতে পারেনা!! সরকারকে পূর্ব থেকেই কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিৎ ছিল। দায়সারাভাবে পালিত কর্মসূচির পরিনাম সবার জন্য অশুভকর। গার্মেন্টস সেক্টর একটি রপ্তানি মুখিশিল্প সুতরাং এটা খুলতেই হবে নয়তো বিদেশি ক্রেতাগন অন্য দেশে পাড়ি জমাবে সেটা আমাদের দেশের জন্য বিপদের কারন। সরকার করোনা বিস্তার রোধ করতে চাইলে প্রতিটি গার্মেন্স কর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রীর আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।