নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
‘যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের, মানুষের সঙ্গে দেখা হয় নাকো তার...’। জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙক্তির সঙ্গে যেন মিলে যায় সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের বায়ো-বাবল জীবনটাও! দুর্দান্ত এক জিম্বাবুয়ে সফর শেষে দেশে ফিরে কোথায় একটু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন! সেটি তো হচ্ছেই না, জিম্বাবুয়ের বায়ো-বাবল থেকে ফিরে দেশে এসেই ঢুকে পড়তে হবে নতুন বায়ো-বাবলে।
মহামারিতে ক্রিকেট মানেই বায়ো-বাবল বা জৈব সুরক্ষাবলয়ের হ্যাপা সইতেই হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আলোচিত ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের বায়ো-বাবল তো আরও কঠিন হতে চলেছে।
একদিকে বায়ো-বাবল, অন্যদিকে টানা ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা। বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের সেই মার্চ থেকে জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছে, হোটেল-মাঠ, মাঠ-হোটেল। এক মাসের ক্লান্তিকর জিম্বাবুয়ে সফর শেষে গতকাল সকালে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ দল। অবশ্য অস্ট্রেলিয়াও একই দিনে বাংলাদেশে এসেছে একই ক্লান্তি নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে মিচেল স্টার্করা বার্বাডোজ থেকে ভাড়া করা বিমানে বিকেল চারটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এরপরই কোয়ারেন্টিন আর বায়ো-বাবল।
আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে দ্রুতই তারা টিম বাসে করে চলে আসেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের জৈব সুরক্ষাবলয়ে। রাজধানীর একই হোটেলে সকালে জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে জৈব সুরক্ষাবলয়ে ঢুকেছে বাংলাদেশ দল। হোটেলে তিন দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে মাঠের অনুশীলনে ফিরবে দুই দল। ৩ আগস্ট শুরু হবে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি।
এবারের টি-টোয়েন্টি সিরিজটা একটু বেশিই আলোচিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কঠিন কোয়ারেন্টিন শর্ত দেওয়ায়। যে শর্তের কারণে বাংলাদেশ পাচ্ছে না মুশফিকুর রহিম-লিটন দাসের মতো খেলোয়াড়দের। অস্ট্রেলিয়া দলের সফরকে ঘিরে মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থার করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। অস্ট্রেলিয়া দলকেও দেওয়া হবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।
অস্ট্রেলিয়া দলের সফরে এবার অন্য দলের সফর থেকে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা দলের সফরে ছিল না। এবারের জৈব সুরক্ষাবলয়ের সঙ্গে আগেরগুলোর পার্থক্য কোথায়? বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী সেটি পরিষ্কার করেছেন, ‘অন্য দলের সফর থেকে এবার অস্ট্রেলিয়া দলের বাংলাদেশ সফরের মধ্যে মোটাদাগে পার্থক্য তিনটি। প্রথমত, অস্ট্রেলিয়া দল বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বাসে করে হোটেলে নিয়ে আসা হবে। দ্বিতীয়টি, এক্সক্লুসিভ হোটেল ব্যবস্থাপনা। আর ম্যাচ অফিশিয়াল, সাপোর্ট স্টাফ, হোটেল ও পরিবহন স্টাফদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন। যা অন্য দলের সফরে ছিল না।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থেকে খেলতে হলে জৈব সুরক্ষবলয়ের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই সুরক্ষাবলয়ে টানা থাকাটা প্রভাব ফেলছে ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। ক্লান্তি-অবসাদ ঘিরে ধরছে খেলোয়াড়দের। সিরিজ চলার সময় কাছের মানুষ কিংবা পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকায় সমস্যাটা আরও প্রকট হচ্ছে। জৈব সুরক্ষাবলয় নিয়ে বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘বলয়ে থাকা খুবই কষ্টের। সবার মানসিক স্থিতি সমান হয় না।’ বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরাও কেউ কেউ মানসিক অবসাদের বিষয়টি সামনে এনেছেন। এমনকি সিরিজ থেকে ছুটি নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ধারাভাষ্যকার অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রসঙ্গ তুলতেই মাহমুদউল্লাহ প্রথমেই বলেছিলেন বায়ো-বাবলের কথা, ‘এবার পরবর্তী বায়ো-বাবল ও সিরিজ খেলার অপেক্ষায়।’
জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকাটা কতটা কঠিন, জিম্বাবুয়ে সফরের আগে বাংলাদেশ দলের তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন জানিয়েছিলেন সে কথা, ‘আগে যেমন ব্যাটিং-বোলিং খারাপ হলে একটু বাইরে ঘুরে মন সতেজ করে আসতাম। এটা এখন সম্ভব নয়। এখন খারাপ খেললেও হোটেল রুমে, ভালো খেললেও সেখানে।’ হোটেলে বায়ো-বাবলে ক্রিকেট-অনুশীলনের বাইরে সময়টা কীভাবে কাটে, এ প্রশ্নে সাইফউদ্দিন হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ‘গেমস খেলে!’
শুধু বায়ো-বাবল নয়, সিরিজ চলার সময় ক্রিকেটারদের ঘন ঘন করোনা টেস্টের যন্ত্রণাও সইতে হয়। জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়ার আগে সৌম্য সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন তিনি কয়েক মাসে ১০০ বারের ওপর পরীক্ষা করিয়েছেন!
ক্রিকেটারদের বায়ো-বাবল জীবন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনার তাবরেজ শামসির টুইট করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা যেন খাঁচাবন্দী সার্কাসের প্রাণী! যাঁরা শুধু অনুশীলনের সময় মুক্তি পায় এবং ম্যাচ খেলে দর্শককে বিনোদন দেয়।’
ঠিকই তো, ঘরের মাঠে সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের ‘খাঁচাবন্দী’ হয়েই খেলতে হবে আরেকটি সিরিজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।