২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
করোনা ভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত জনজীবনে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। এডিস মশাবাহিত এই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে। দেশে এখন প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা শতাধিক। যা করোনার পাশাপাশি হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্ষায় বৃষ্টি ও এডিশ মশার প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য তথ্য বিভাগের ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, সর্বশেষ ২৪ জুলাই, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৫ জন, যাদের ১০২ জনই রাজধানীর। চলতি মাসে তখন পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ১ হাজার ৩০৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বলেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। সেসব তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। এখন ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪১৯ জন, আর অন্য বিভাগে ৩ জন।
বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ওই বছর প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু বিস্তৃত হয়েছিল ৬৪ জেলায়। সে সময় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। যদিও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে আড়াইশরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। সে বছর ১ হাজার ৪০৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু সন্দেহে ১২ জনের মৃত্যুর তথ্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ডেঙ্গুর কারণে ৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের আগে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ২০০০ সালে, ৯৩ জন। ওই বছরই রোগটি প্রথম ভয়াবহ আকার নেয়, আক্রান্ত হয় ৫ হাজার ৫৫১ জন। এরপর ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসে। ২০০৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের নিচে ছিল, মৃতের সংখ্যাও ছিল খুব কম।
২০১৬ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়ালেও পরের বছর তা কমে যায়। এরপর আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে ২০১৮ সালে। সে বছর প্রাদুর্ভাব বেড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নতুন নতুন রেকর্ডের জন্ম দেয়। ওই বছর ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ২৬ জন। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ১৪৮ জনের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য সরকারের কাছে নথিভুক্ত রয়েছে। তার পরের বছর গত ১৯ বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে শুধু অগাস্ট মাসেই শনাক্ত হন ৫২ হাজার ৬৩৬ জন।
★ডেঙ্গু রোগের লক্ষণঃ-
* ডেঙ্গুর সংক্রমণ উপসর্গবিহীন থেকে নানা রকমের উপসর্গযুক্ত হতে পারে, এমনকি তাতে মৃত্যুও ঘটে। সচরাচর দৃষ্ট ডেঙ্গু জ্বর, যাকে প্রায়ই ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু বলা হয়, সেটি একটি তীব্র ধরনের জ্বর যাতে হঠাৎ জ্বর হওয়া ছাড়াও থাকে মাথার সামনে ব্যথা, চক্ষুগোলকে ব্যথা, বমনেচ্ছা, বমি এবং লাল ফুসকুড়ি। প্রায়ই চোখে প্রদাহ এবং মারাত্মক পিঠব্যথা দেখা দেয়। এসব লক্ষণ ৫-৭ দিন স্থায়ী হয় এবং রোগী আরও কিছুদিন ক্লান্তি অনুভব করতে পারে এবং এরপর সেরে ওঠে। বেশির ভাগ সংক্রমণই, বিশেষত ১৫ বছরের কমবয়সী শিশুর ক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ লক্ষণহীন অথবা ন্যূনতম লক্ষণযুক্ত হতে পারে।
* রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বর হলো ডেঙ্গুর একটি মারাত্মক ধরন। মূল লক্ষণগুলি বয়স নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রেই অভিন্ন। রক্তক্ষরণ বা ডেঙ্গুশক সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। এতে থাকে মাথাব্যথা, ক্রমাগত জ্বর, দুর্বলতা এবং অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশীর তীব্র ব্যথা। শ্বাসযন্ত্রের ঊর্ধ্বাংশের সংক্রমণসহ রোগটি হালকাভাবে শুরু হলেও আচমকা শক ও ত্বকের ও দেহের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ বা রক্তপাত শুরু হয়। রক্তে ক্রমাগত অনুচক্রিকা কমতে থাকে। রক্তক্ষরা ডেঙ্গুর জন্য প্রয়োজন উত্তম সেবাশুশ্রুষা ও পর্যবেক্ষণ, কেননা উপরিউক্ত পরিবর্তনগুলি খুব দ্রুত ঘটতে পারে এবং রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে।
* ডেঙ্গু শক সিনড্রম এটি রক্তক্ষরা ডেঙ্গুরই আরেকটি রকমফের, তাতে নিম্ন রক্তচাপ অথবা সুস্পষ্ট শকসহ রক্তসঞ্চালনের বৈকল্য থাকে। দেহের উৎসেচকগুলিতে সাধারণত অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তবে প্রায়ই যকৃতের প্রদাহ হয়ে থাকে। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পেটব্যথা, থেকে থেকে বমি, অস্থিরতা বা অবসন্নতা এবং হঠাৎ জ্বর ছেড়ে ঘামসহ শরীর ঠান্ডা হওয়া ও দেহ সম্পূর্ণ নেতিয়ে পড়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। প্রতি বছর আক্রান্ত প্রায় ৫০ লক্ষ রোগীর মধ্যে অন্তত ৫ লক্ষ রক্তক্ষরা ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং মারা যায় শতকরা প্রায় পাঁচ জন।
★ডেঙ্গু কেনো শীতের পরে?
এই শতাব্দির শুরু থেকেই আমাদের দেশে প্রতি বছর শীতের পর পরই যখন বৃষ্টি হয়, বেড়ে যায় মশার উপদ্রব। বেড়ে যায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। তাই এই করোনাকালে থেমে নেই বৃষ্টি, থেমে নেই মশার প্রজনন। লকডাউন ও অন্যান্য কারনে মশা বা লার্ভানিধন মনে হয় ততটা কার্যকর ভাবে নেয়া হচ্ছে না। তাই ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ খুব বেশী। তবে সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ সারা বছর থাকে না। কারণ ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য দায়ী এডিস মশা জন্মায় পরিস্কার পানিতে। আর এই পরিস্কার পানি পাওয়া যায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পরই। বৃষ্টির পানি কোন স্থানে জমে থাকলে ওখানটাতেই ডিম পাড়ে এই এডিস মশা।
★ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কি?
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। শুধু উত্তম বললেও কম বলা হয়। এটাই বাঁচার ভাল উপায়। করোনার এই নাকাল অবস্থায় কারো ডেঙ্গু হলে অবস্থাটা কি হতে পারে এটা যার হবে সেই বুঝতে পারবে। তাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার প্রজনন বন্ধ করা আর মশা নির্মুলের কোন বিকল্প নাই। পানি জমতে পারে এমন কোন অবস্থাই যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সকল প্রকারের ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার, ভাঙ্গা বোতল, পরিত্যক্ত ফুলের টব ইত্যাদি ইত্যাদি সবই সরিয়ে ফেলতে হবে নিজ উদ্যোগেই। সরকারের একার পক্ষে ১৭ কোটি মানুষের ভাঙ্গা বোতল, গ্লাস, ডাবের খোসা, বালতি, টায়ার খুঁজে বের করা বা সরিয়ে ফেলা সম্ভব না। বাঁচতে হলে যার যার নিজ উদ্যোগেও এগুলোতে অংশগ্রহন করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার বাড়ির পাশের মশা আপনাকেই আক্রমণ করবে।
★ করণীয়ঃ- আক্রান্ত রোগীর জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে বার বার পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে, তাপ কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে থেকে বেশী বেশী পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। শরীর বেশি ঠান্ডা মনে হলে, রক্তচাপ কমে যেতে থাকলে বার বার খাবার স্যালাইন দিতে হবে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু বা শকের রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। তাকে হাসপাতালে রেখে শিরায় স্যালাইন বা রক্ত দিতে হবে, বেশি করে ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ তরল খাবার খেতে দিতে হবে। জ্বর হলেই নিজে নিজে চিকিৎসা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। প্রয়োজনে ডাক্তার পরীক্ষা করে ডেঙ্গু বা করোনা কোনটি হয়েছে, কি চিকিৎসা দিবেন তা ঠিক করবেন।
★ হোমিও চিকিৎসাঃ- অভিজ্ঞ চিকিৎসক গন যেই সব মেডিসিন প্রাথমিক ভাবে ব্যবহার করে থাকেন- একোনাইট, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, রাসটক্স, ইউপেটেরিয়াম পার্ফ, আর্সেনিক এলবাম, কার্বোভেজ, ইপিকাক,সালফার সহ আরো অনেক ঔষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে।
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ইমেইল[email protected]
মেবাইল-০১৮২২৮৬৯৩৮৯।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।