Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা

সোনালী আঁশ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

পাট ও পেঁয়াজের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পাট কাটা-ধোয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে পাট চাষিরা। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণিরা। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর পাটের উৎপাদন ও দাম নিয়ে সঙ্কায় রয়েছেন পাট চাষিরা। এ অবস্থায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন সালথার কৃষকরা।
পাট উৎপাদন মৌসুমের মাঝামাঝিতে আগাম অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলার অনেক এলাকায় কৃষি জমির নিচু অংশে পানি জমে যায়, পাটের গোড়া পঁচে যাবে এই ভয়ে অনেকেই অপরিপক্ক পাট কেঁটে পঁচানোর জন্য জাগ দিয়েছেন। আবার পরিপক্ক হওয়ার পর উঁচু জমির পাট কেঁটে নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের জমিতে পাট পঁচানোর জন্য জাগ দেওয়া হয়েছে, তবে সেখানেও পর্যাপ্ত পানির সমস্যা রয়েছে অনেক।
কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির কারণে পানি নিয়ে শঙ্কা কমেছে। তবে আগাম অতিবৃষ্টি ও মৌসুমের শুরুতে শ্রমিক সঙ্কটে গতবছরের চেয়ে চাষ বেশি হলেও উৎপাদন তুলনামূলক কম হয়েছে। গত মৌসুমের শুরুতে দাম স্বাভাবিক থাকলেও শেষের দিকে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। চলতি মৌসুমের শুরুতে দাম সন্তোষজনক থাকলেও বর্তমানে নিম্নমুখী। বর্তমান দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাষিরা। অনেকেই লকডাউনের কারণে দাম কমেছে বলে মতামত দেন।
উপজেলার বেশ কয়েকজন পাট চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, আগাম অতিবৃষ্টির কারণে নিচু জমির পাট গাছ বড় হওয়ার আগেই কেটে ফেলা হয়েছে। আবার পুরো মৌসুমে খাল-বিলে পানি কম সেক্ষেত্রেও সমস্যা। এ কারণে পাট চাষে মোট উৎপাদনে প্রভাব ফেলে, ফলন কম হয়। গত বছরের শেষের দিকে পাটের দাম ভালো পাওয়া গেলেও বর্তমানে দাম নেই। এক শতক জমিতে পাট আবাদ করতে যে টাকা খরচ হয় উৎপাদন করে সেই টাকা আর আয় হয় না। উৎপাদন আয়ের চেয়ে উৎপাদন ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে অনেকেই পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সরকারিভাবে আরও সাহায্য সহযোগিতার কথা বলেন কেউ কেউ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সালথায় মোট আবাদি জমি ১৪ হাজার হেক্টর। প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাটের আঁশ পরিপূর্ণ হওয়ার সময় অতি বৃষ্টির ফলে ক্ষেতে পানি জমে যায়। ফলে এ বছর পাটের চাষ তুলনামূলক কম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার জীবাংশু দাস বলেন, এবার গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ কিছু বেশি হয়েছে। পাটের ফলন ও দাম নিয়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। এলাকার কৃষকরা যাতে স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে এ জন্য আমরা প্রতিনিয়ত পরামর্শ প্রদান করছি। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে পাটকে মুক্ত রাখতে ও পরিমিত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছি। আশা করছি আগামীতে এই সমস্যা আর থাকবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, কৃষক যত্রতত্র বীজ ব্যবহারের ফলে পাটের উৎপাদন কম হচ্ছে। সরকারিভাবে যে রবি-১ পাট বীজ দেওয়া হয়েছে তার উৎপাদন ভালো হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে এই বীজ ব্যবহার ও পাট উৎপাদনে উৎসাহী করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে পাট রফতানি বন্ধ রয়েছে। লকডাউন শিথীল হলে দাম সন্তোষজনক হবে বলে আশা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ