পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : বাজারে নতুন পাট উঠেছে। এবারও উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। বরাবরের মতো বাজার তদারকি একেবারেই ঢিলেঢালা। সেজন্য বাজার বিশৃঙ্খলা বাড়ছেই। অথচ পাটের আবাদ ও উৎপাদনে আবার সোনালী আঁশের স্বর্ণযুগ ফেরার লক্ষণ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এবার সারাদেশে পাটের ফলনে স্মরণকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। উপযোগী রোদ ও বৃষ্টিসহ সার্বিক আবহাওয়া ছিল পাট আবাদ ও উৎপাদনের অনুকূলে। বিশেষ করে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি এবং মাঝেমধ্যে রোদ রেশনিং পদ্ধতিতে হলে পাটের জন্য হয় খুবই সহায়ক। আবাদ মৌসুম জুড়ে তার পুরোটাই হয়েছে। যার জন্য সরকারী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ পারসেন্ট জমিতে পাট আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। পাট পচানোর জন্যও পর্যাপ্ত পানি পেয়েছেন চাষিরা। যার জন্য পাটের আঁশ ও রং হয়েছে খুবই ভালো। পাটচাষিরা অত্যন্ত খুশী। কিন্তু বাজারে পাট তুললেই হাসি মøান হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিমণ পাট ১৩শ’ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতিমণ পাট আবাদ ও উৎপাদন করে বাজারে তোলা পর্যন্ত ন্যূনতম ১৮শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। জাতীয় কৃষক সংগ্রাম সমিতি যশোরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে স্মারকলিপি দিয়ে পাটের দাম প্রতিমণ সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। জরুরিভাবে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বিশৃঙ্খলারোধ ও উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক ও পাটচাষিরা। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, পাট আবাদ ও উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হলেও স্বর্ণযুগ ফেরার স্বপ্নভঙ্গের আশংকা প্রবল হচ্ছে।
মাঠপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, সরকার এবার বিজেএমসি এজেন্সীর মাধ্যমে পাট ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে। দেশের অধিকাংশ জেলাতে এজেন্সী নেই। তাছাড়া সরাসরি মিলগেটে পাট ক্রয় হচ্ছে তবে বেল পাট। এবার লুজ পাট বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন না চাষি কিংবা ব্যবসায়ী। পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক গোলাম সরোয়ার তালুকদার এই তথ্য দিয়ে বলেন, নতুন নিয়মে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। পাট প্রসেস করে বেল করে মিলগেটে বিক্রি করা সাধারণ চাষিদের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়। পাট বেল করার ব্যবস্থাও সব জেলাতে নেই। একাধিক সূত্র জানায়, নানা কারণে পাটের বাজারে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে গেছে। এর বিপরীতে বাজার তদারকির ব্যবস্থা একেবারেই ঢিলেঢালা। তার মতে, জরুরিভাবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে পাটচাষিরা উপকৃত হবেন। পাটবাজারে ফিরে আসবে শৃঙ্খলা। পাট বিক্রির নতুন নিয়ম ভালো কিন্তু সাধারণ চাষিদের পক্ষে গ্রহণ করা খুবই কঠিন।
সূত্রমতে, প্রতিটি মৌসুমে পাটচাষিরা সোনালী আঁশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনরাত পরিশ্রম করেন পাট উৎপাদন। হারানো অতীত ঐতিহ্য ফেরানোর সরকারী উদ্যোগে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পাটচাষিরা। বিগত দু’টি মৌসুমে চাষীরা লাভবানও হন ঠিকই। পরবর্তীতে পাটে লোকসান হয়েছে অধিকাংশ চাষির। চাষিরা জানান, জমি চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ যেসব খরচ হয় তা ওঠে না। আশাতীত ফলনে মুখে হাসি ফোটে কিন্তু বাজারে পাট উঠালেই হাসি পরিণত হয় দুঃখে। গত মৌসুমে এমনটি হয়েছে, উৎপাদন খরচ উঠাতে পারেননি অনেক চাষি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৭ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ১৩ পারসেন্ট বেড়ে আবাদ হয়েছে ৮লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে। মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে যেভাবে ঝুঁকেছে তাতে সোনালী আঁশের স্বর্ণযুগ ফেরার হাতছানি দিচ্ছে। কিন্তু উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিয়ে নানা ঝামেলা তাদের হতাশ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাটের বাজার তোলার সময়ে তদারকির অভাবে মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট বেড়ে যায়। এসব ব্যাপারে নজরদারি না বাড়ানোর কারণেই আশাতীত ফলন হওয়ার পরও চাষীদের লোকসান গুনতে হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদগণ ও চাষিসহ সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে নজর দেয়া জরুরি। বিশেষ করে বাজার বিশৃঙ্খলা দূর করার উদ্যোগ নেই বললেই চলে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের অমনোযোগী ও দায়িত্বহীনতায় অতীতের মতো নানা অজুহাতে সহজ সরল নিরীহ চাষিকে রীতিমতো প্রতারিত করার সুযোগ পায় পাট সিন্ডিকেটরা। সূত্রমতে, প্রতিটি মৌসুমে কথা দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে রক্ষা হয় না। কোথায় এর গলদ তাও খুঁজে বের করা জরুরি। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও নানামুখী বিশৃঙ্খলার কারণেই পাটের বাজারে মুনাফালোভীদের বরাবরই দাপট চলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সারাদেশের মাঠে মাঠে ছিল এবার পাট আর পাট। যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাট কাটা, পচন, ধোওয়া, শুকানো এবং বাজারে তোলার কাজ চলছে পুরাদমে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৯৫ লক্ষাধিক বেল হতে পারে। তিনি জানান, সোনালী আঁশের আশাতীত ফলনে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও খুশী। সূত্র জানায়, দুই এক জায়গায় ব্যতিক্রম ছাড়া এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাট পচানো ও আঁশ ছড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। এর আগে পাটের স্বর্ণযুগ ফেরানো, বন্ধ জুটমিল চালু, জুটমিল শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের সরকারী আশ্বাসে প্রচ- আশাবাদী হয়ে ওঠে পাট চাষিরা। কিন্তু বাস্তবে তারা হয় প্রচ- হতাশ। এবার যাতে না হয় তার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর রাখার তাগিদ দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিরা জানান, গত দু’টি মৌসুমের আগে আসলেই পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যায়। মূল্যও পান ভালো। স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পাটচাষী, জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও শিল্পোদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু গতবার কৃষক পাট উঠার সময় দাম পাননি। উৎপাদন খরচ ওঠেনি কৃষকের। এবারও সেই একই চিত্র যেন না দেখতে হয়। তাহলে কষ্টের সীমা থাকবে না। সোনালী আঁশের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে কঠিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।