Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিডিসির স্বাস্থ্য নির্দেশনায় পরিবর্তন, যুক্তরাষ্ট্রে ফের মাস্ক পরার নির্দেশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৬ পিএম

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসতর্কতা নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার এক নির্দেশনায় আবার মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। ইনডোরে, বিশেষ করে জনসমাগম হলে মাস্ক পরতে হবে বলে তারা আবার নির্দেশনা দিয়েছে।

সিডিসি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে স্কুলগুলোয় স্বাস্থ্য নির্দেশনা কড়াকড়ি করার পরামর্শ দিয়েছে। স্কুলের অভ্যন্তরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিদর্শনে যাওয়া লোকজনকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। টিকা গ্রহণ করা, না–করানির্বিশেষে সবাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরার জন্য বলা হয়েছে। যেসব এলাকায় ডেলটার সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকায় টিকা গ্রহণ করেছেন বা টিকা গ্রহণ করেননি—এমন সব লোককেই মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যগুলোয় ব্যাপকভাবে ডেলটা ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে। অ্যারিজোনা ও ওয়াইওমিংয়ে নতুন সংক্রমণের হারকে উচ্চমাত্রার বলে চিহ্নিত করেছে সিডিসি। করোনার সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে সংক্রমণের নিম্নহার বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছিল। সিডিসি তখন বলেছিল, টিকা গ্রহণ করা হয়ে গেছে, এমন লোকজনের ঘরে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। ডেলটা ধরনের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসতর্কতায় এখন পরিবর্তন আনা হলো।

গত সপ্তাহান্তে সিডিসি ও হোয়াইট হাউসের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর মঙ্গলবার পরিবর্তিত নির্দেশনার কথা জানান সিডিসির পরিচালক রোচেল ওয়ালেনস্কি। তিনি বলেন, সিদ্ধান্তটি হালকাভাবে নেয়া হয়নি। করোনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লোকজনের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে উল্লেখ করে রোচেল বলেন, সবাই ক্লান্ত হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মানসিক সমস্যার চ্যালেঞ্জও এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বহু সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ বেসামাল হয়ে উঠেছে। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যসতর্কতার পরিবর্তিত নির্দেশ কোনো সুসংবাদ নয়। তা জেনেও এ নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা লোকজনকে জানাতে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র উচ্চমাত্রার প্রত্যাশা ছিল যে ব্যাপক টিকাদানের মধ্য দিয়ে এ গ্রীষ্মেই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। হোয়াইট হাউস ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ লোকজনকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল। কিন্তু তা অর্জিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক লোক এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছেন, মোট জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশের ওপরে টিকা গ্রহণ না করলে করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন হবে। করোনা মহামারি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু থেকেই রাজনীতি হয়েছে। মাস্ক পরা, না-পরা নিয়ে বিতর্ক করেছেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টিকা নিয়েও নানা সংশয় ও অপপ্রচার হয়েছে। ফলে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক এখনো টিকা গ্রহণে রাজি হচ্ছেন না। এ নিয়ে ব্যাপক সামাজিক প্রচার চলছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ভাইরাস মোকাবিলার জন্য যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। গত বসন্তের আগের বাস্তবতা থেকে এখন ভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। লুইজিয়ানা, অ্যালাবামা ও মিজৌরির হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এসব অঙ্গরাজ্যে নিউইয়র্কের মতো হাসপাতাল ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নেই। মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লোকজনের অধিকাংশই ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী। তাঁদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ টিকা নেননি।

সিডিসিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের ঘন ঘন পরিবর্তিত তথ্যও লোকজনের মধ্যে সংশয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। শুরুতে বলা হয়েছে, করোনার রূপান্তরিত ধরনের ক্ষেত্রে ফাইজার ও মডার্নার টিকা কার্যকর। এখন দেখা যাচ্ছে, টিকা গ্রহণ করা লোকজনও করোনার ডেলটা ধরনে সংক্রমিত হচ্ছেন। বলা হচ্ছে, টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ডেলটার সংক্রমণ ঘটলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তিকে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মেগান র‍্যানি বলেছেন, করোনাভাইরাস নানাভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে। সবাই যেমন করে পারছে, তাদের সেরা প্রয়াস নিয়ে এই মহামারি মোকাবিলার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের লোকজনকে মাস্ক পরার নির্দেশনা থেকে সরে আসার জন্য সিডিসির ওপর ব্যাপক চাপ ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, ওই নির্দেশনার পরিণাম ভালো হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মেগান। তিনি বলেন, টিকা গ্রহণ করলেও ডেলটার সংক্রমণ ঘটছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। সূত্র : সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ