পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাসংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই বাড়ছে। গত ১৫ দিনে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এ সময় অধিকাংশ দিন মৃত্যু হয়েছে দু’শ বা তার বেশি। ঢাকার বাইরে করোনাসংক্রমণ আগে থেকেই বাড়ছিল। ঈদুল আজহার ছুটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামে যাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় করোনা রোগী বাড়তে শুরু করেছে। আরো বাড়বে, এমন আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। এক্ষেত্রে উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে করোনাচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বেড, আইসিইউ, অক্সিজেন ইত্যাদির অভাব প্রকট আকারে বিদ্যমান রয়েছে। এমতাবস্থায়, বিভিন্ন জেলা থেকে একনাগাড়ে করোনারোগী আসছে রাজধানীতে। রোগীর চাপে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। এখানেও বেড, আইসিইউ, অক্সিজেনের সঙ্কট রয়েছে। এর মধ্যেই নতুন উপসর্গ হিসেবে ডেঙ্গুর বিস্তার শুরু করেছে। এ নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা ও ভোগান্তির শেষ নেই। বোধহয় একেই বলে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। ডেঙ্গুও প্রাণঘাতি এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মারা গেছে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীর ভর্তি হওয়ার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারা প্রায় সবাই রাজধানীর বাসিন্দা। চলতি মাসের ২৪ দিনে এক হাজার ২০২ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের ৯৯ শতাংশই ঢাকার। ঢাকার হাসপাতালগুলো করোনারোগী সামলাতেই যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন ডেঙ্গুরোগীর ভিড় তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। দেশে গত প্রায় দু’ দশক ধরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। মশানিধন ও নিয়ন্ত্রণই এ রোগ থেকে মুক্ত থাকার উপায়। অথচ, এতদিনেও মশা বা রোগ নির্মূলের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। মশা মারা ও মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের, কীটনাশক আমদানির অনুমোদন দিয়ে থাকে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং চিকিৎসার দায়িত্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের। এদের কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সচেতনতামূলক প্রচারণা ছাড়া এখনো মশানিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশেজ্ঞদের মতে, একসঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গুর চিকিৎসা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
করোনার ব্যাপারে কিছু সুখবর আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক জানিয়েছেন, সরকার ২১ কোটি ভ্যাকসিন আনার চুক্তি করেছে। যথাসময়ে সব ভ্যাকসিন পেলে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তিনি এও জানিয়েছেন, ১৮ বছরের ঊর্ধ্ববয়সী সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এদিকে বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্যাকসিন আসার পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রেশন ও গণভ্যাকসিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সর্বশেষ কোভ্যাকসের আওতায় জাপান থেকে আড়াই লাখ অ্যাস্ট্রজেনেকোর ভ্যাকসিন দেশে এসেছে। আর ভারত থেকে আনা হয়েছে দু’শ টন অক্সিজেন। এ পর্যন্ত যত ভ্যাকসিন এসেছে, তাতে আপাতত ভ্যাকসিনের সঙ্কট নেই। অক্সিজেনের মজুদও বেড়েছে। ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বিশেষজ্ঞ-অভিমত হলো, যেহেতু এখন পর্যন্ত করোনামোকাবিলায় ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প উদ্ভাবিত হয়নি, সুতরাং সকলের ভ্যাকসিন দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। করোনা থেকে আরো নিরাপদ হওয়ার জন্য তৃতীয় ডোজ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এতে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন আরো বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন সংগ্রহ আরো জোরালো করতে হবে। প্রয়োজনে উৎপাদনে যেতে হবে। আশার কথা, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনের তরফে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের অনুমতির অপেক্ষায় আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীন বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। এ নিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ কাজ শুরু করে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, যৌথভাবে হোক কিংবা চীনের এককভাবে হোক, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হওয়া দরকার। এতে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির বিষয়টি যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি প্রয়োজনে উদ্বৃত্ত ভ্যাকসিন অন্য দেশকেও দেয়া সম্ভব হবে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার, করোনামোকাবিলা ও চিকিৎসায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় শুরু থেকেই উদ্যমী ভূমিকা পালন করে আসছে। মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, চিকিৎসকসহ নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীবৃন্দ লাগাতার নিরলস ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ প্রাপ্য। যারা কাজ করেন, তাদের কিছু ভুলত্রুটিও হতে পারে। অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ। করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুচিকিৎসার দিকেও এখন তার নজর দিতে হবে। অন্যান্য রোগব্যাধির চিকিৎসা তো আছেই। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ঈদপরবর্তী করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মহাবিপর্যয় দেখা দিতে পারে। ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চলছে। লকডাউন কার্যকর করতে শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে। মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হলে করোনার বিস্তার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ রাখা সম্ভব হবে। আর ব্যাপক পরীক্ষা ও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই কমে আসবে। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণ, ওষুধপত্র, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে। দরকার হলে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে; প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি ভ্যাকসিন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। নতুন রেজিস্ট্রেশন ও ভ্যাকসিন দেয়া নিয়ে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তার অবসান ঘটাতে হবে। জট-জটিলতা দূর করতে হবে। ভ্যাকসিন কার্যক্রমের যেহেতু বিকল্প নেই, কাজেই তা খুব দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।