পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকারণে বিশ্ব অর্থনীতি মহাবিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছে। দরিদ্র থেকে উন্নত কোনো দেশেরই অর্থনীতি ভালো নেই। অর্থনীতির এই মন্দাবস্থা বেকার সমস্যা তীব্র করে তুলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনায় বিশ্বে প্রতি তিনজনের একজন বেকার। বৈশ্বিক মন্দাবস্থার প্রভাব আমাদের উপরও পড়েছে। করোনার প্রভাবে ইতোমধ্যে দরিদ্র সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পুরনো দরিদ্রের সাথে কোটি কোটি নতুন দরিদ্র যুক্ত হয়েছে। কর্মজীবীদের আয় কমেছে। স্বস্তি এতটুকু যে, নতুন দরিদ্র এবং দারিদ্র্যের এই হার বৃদ্ধির মধ্যেও কেউ না খেয়ে থাকছে না। দুবেলা দু’মুঠো খেতে পারছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, করোনা বিভিন্ন খাতে আঘাত করলেও আমাদের কৃষিখাতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এবারের বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া শাক-সবজি, ফলমূল, গবাদি পশু, মৎস্য, পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। রফতানি শিল্পের মধ্যে গার্মেন্ট ও জনশক্তির খাতটি সচল রয়েছে। দেশের অর্থনীতির এসব খাতের শক্ত ভিত্তির কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের অর্থনীতি একেবারে ভেঙ্গে পড়েনি।
দেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অনেক বেকার গ্রামে-গঞ্জে কিছু না কিছু করছে। হয় দুই-চারটা গুরু পালন করছে, নয়তো মৎস্য চাষ, ফল চাষ, হাঁস-মুরগী পালন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফসলি চাষে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে। তাদের এই প্রচেষ্টা কৃষি ও খাদ্য সংকটকে ঠেকিয়ে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের আহবান জানিয়ে বারবার বলেছেন, চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হও। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে, সেটা সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি হোক চাকরির সুযোগ খুব কম। এসব খাতে কর্মসংস্থানের হার অপ্রতুল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে চাকরি করছেন, ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ জন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ রয়েছে এক-দেড় কোটির মতো। অথচ বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাকালে নতুন-পুরনো মিলিয়ে দেশে বেকার রয়েছে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে ২০ লাখ তরুণ। এদের বেশিরভাগই চাকরি পায় না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৪৭ শতাংশ গ্র্যাজুয়েটের চাকরির সুযোগ নেই। বিপুল সংখ্যক তরুণের সিংহভাগকেই বেকার অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। তাদের মধ্যে যারা স্বউদ্যোগে কিছু করার চেষ্টা করছে তারা কৃষি ও বিভিন্ন ধরনের খামারের সাথে যুক্ত হয়ে গবাদিপশু, পোল্ট্রি, মৎস্যপালনসহ ফলফলাদি ও শাক-সবজি চাষ এমনকি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নিজেদের বেকারত্ব ঘুচানোর চেষ্টা করছে, তারা ভালো করছে। নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থান করছে। এর ফলে দেশে গবাদিপশু, মাছ, শাক-সবজি ও ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতাও অর্জিত হয়েছে। এবারের ঈদে কোরবানির চাহিদা মিটিয়েও অনেক গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থেকে গেছে। অনেক খামারি হাটে গরু এনে বিক্রি করতে পারেনি। অনেকে লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছে। অন্যদিকে, বিদেশে এক বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে। আমের বাম্পার ফলনে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকার বেশি আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বহু আগে থেকেই চিংড়ি ও কাঁকড়া রফতানি হয়ে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিয়মিত শাক-সবজি রফতানি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্ট ও জনশক্তির পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্যও রফতানি খাতে পরিণত হচ্ছে। এসবই হচ্ছে, বেকারদের উদ্যোক্তায় পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রশিক্ষণ এবং ঋণ কার্যক্রম ভূমিকা রাখছে। ফলে করোনায় অন্যান্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খাদ্য ও কৃষি খাত তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
দেশের অর্থনীতি চাঙা রাখতে এবং বেকারদের স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। এ খাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া দরকার। খাদ্য বলতে শুধু ধান-চালকে বোঝায় না। গোশত, মাছ, শাক-সবজি, ফলমূলকেও বোঝায়। এসব খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলের অসংখ্য মৎস্য খামার পানিতে ভেসে গেছে। খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খাদ্যের চাহিদা কখনোই শেষ হয় না। এর উৎপাদন একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। আমাদের কৃষক ও বেকার শ্রেণী যেভাবে এ খাতে যুক্ত হয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করে চলেছে, তা ধরে রাখতে সরকারের সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। এতে দেশের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি উদ্বৃত্ত ফসল ও খাদ্য বিদেশেও রফতানি করা যাবে। রাষ্ট্র লাভবান হবে। শুধু গার্মেন্ট ও জনশক্তি রফতানি খাতের মতো একটি-দুটি খাত দিয়ে অর্থনীতিকে বেগবান করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন নতুন রফতানি খাত। এক্ষেত্রে, কৃষি, গবাদিপশু, মৎস্য, পোল্ট্রি এবং এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতকে রফতানি খাতে পরিণত করার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে বদ্ধ পরিকর হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।