Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুসলিম শিক্ষার্থীর দারুণ কৃতিত্ব

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ৯:৪৮ এএম

কেমন লাগছে এ+ গ্রেড পেয়ে? উত্তরে রোকশত জানাল, আমি খুব খুশি যে আমি সমস্ত বিষয়ে এ + গ্রেড পেয়েছি। এতটা আমি এটা আশা করিনি। ১২ বছর আগে কর্মসংস্থানের খোঁজে খাতুন এবং তার পরিবার বাংলা ছেড়ে কেরালায় আসে। রোকশতের কথায়, বাংলায় ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। পরে কেরালার স্কুলে ভর্তি হয়। যেহেতু কেরালা পড়াশোনা মালয়ালম ভাষাতে, তাই প্রথমে ভাষা বুঝতে আর পড়তে খুবই আসুবিধা হয়েছিল।

ভাষার গণ্ডি অতিক্রম করে ভারতের কেরালার এসএসএলসি পরীক্ষায় 'এ + গ্রেড' অর্জন করল মুর্শিদাবাদের রোকশত খাতুন। কেরালায় এ বছর এসএসএলসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রায় ৩০ শতাংশ পরীক্ষার্থী এ + গ্রেড অর্জন করেছে। কাজেই দশম শ্রেণির মুল্যায়নে এ+ গ্রেড অর্জন করায় অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কিন্তু এর মধ্যেও রোকশত খাতুনের কৃতিত্ব এক আলাদা মাত্রা পেয়েছে। মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট মেয়ে রোকশত। মালায়ালামসহ সকল বিষয়ে এ + গ্রেড অর্জন করেছে সে । এতেই থেমে থাকেনি, স্থানীয় কোঝিকোড জিএনএসএস-এর এনজিও কোয়ার্টারস স্কুলে ইতিহাসেও সে এ+ গ্রেড পেয়েছে।

পরবর্তী সময়ে বন্ধুদের সাথে যখন থেকে মালয়ালম ভাষাতে কথা বলতে শুরু করে ধীরে ধীরে তার জড়তা কাটতে থাকে। এখন মালয়ালম আর তার কাছে কোনো কঠিন বিষয় নয়। এ ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষিকরা তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। তারাও কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন রোকশতকে শব্দ, ভাষা ইত্যাদি বিষয় শেখাতে। হিন্দি তার প্রথম পছন্দের বিষয়।

“খানে আসার আগে আমাদের অনেক লড়াই করতে হয়েছিল। আমাদের কিছুই ছিল না। আমরা ভাষা জানতাম না এবং স্কুলে কীভাবে বাচ্চাদের ভর্তি করবো সেই বিষয়েও কিছু জানতাম না। খানিক ঋণ পরিশোধ করার জন্য এখানে আসা, এখন অবস্থা আগের থেকে ভালো। গ্রামের দিকে একটা ছোট্ট বাড়িও নিজেরা করতে পেরেছি, বলেন- ঝুমা বিবি, রোকশতের মা।

তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর ধরে, আমরা তাদের বাড়িতে পড়িয়েছি এবং পরে আমাদের এক প্রতিবেশী তাদের স্কুলে ভর্তি করতে সাহায্য করেছিলেন। সেই থেকে আমাদের দুই মেয়েই ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। সেখানকার সমস্ত শিক্ষকই অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ী স্বভাবের।

জিএনএসএস-এর এনজিও কোয়ার্টারের এক শিক্ষক বলেন, রোকশত খুবই মেধাবী ছাত্রী। প্রথমে সে এখানে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছিল। তখন তার বয়স প্রায় সাত বছর। তার বয়স এবং মানসিক ক্ষমতা বিবেচনা করে স্কুল তাকে চতুর্থ শ্রেণিতে উন্নীত করে। পরীক্ষার পরে তার বোনকেও দ্বিগুণ পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। ভবিষ্যতে একজন ব্যাংকার হিসাবে নিজেকে দেখতে চায় রোকশত খাতুন, তার স্কুলেই সে বাণিজ্য বিষয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

রোকশতের কথায়, তার পরিবারের সকল সদস্য এখনো মুর্শিদাবাদেই থাকেন, ছুটি বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে প্রায়ই বাড়িতে আসে সে। তার পরিবারে আছেন মা-বাবা আর বোন। তাদের সঙ্গেই থাকে ছোট্ট রোকশত। তার বোনও একই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী। অত্যন্ত মেধাবী বলে তার বোনেরও যথেষ্ট সুনাম রয়েছে স্কুলে। দুবছর আগে এসএসএলসিতে নয়টি এ + গ্রেড অর্জন করেছিল বোন।

কোঝিকোডের শেভরামবালামের সিএইচ হাউজিং কলোনিতে বর্তমানে খাতুন পরিবারের বাস। তার বাবা একজন শিল্পী, মা স্থানীয় এক বাড়িতে মহিলা কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন। মেয়ের এই সাফল্যে পুরোপুরি খুশি তার মা। তার কথায়, খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে রোকশত, পড়াশোনা নিয়েই দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকে সে, বলেন মা। তিনি আরো বলেন, তার দুই মেয়ে যতদূর পড়াশোনা করতে চায়, তিনি তত দূর পর্যন্ত তাদের পড়াতে চান, তিনি এখনই চান না তার মেয়েরা উপার্জন করুক।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ