Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

টিকা নিয়ে প্রকৃত সত্য বলুন

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২১, ১২:০৬ এএম

করোনা নিয়ন্ত্রণ এবং এ থেকে রক্ষা পেতে টিকার কোনো বিকল্প না থাকলেও এক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মাধ্যমে দেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। হঠাৎ ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় টিকার এই পুরো কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বাংলাদেশ এক গভীর সংকট এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এ অবস্থায় সরকার চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে জোর তৎপরতা শুরু করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্সের মর্ডানা এবং চীন থেকে সিনোভ্যাক ও সিনোফার্মার মোট ৪৫ লাখ টিকা ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে টিকার মজুদ ৪৫ লাখ ডোজ। চীনে আরও দেড় কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দেয়া আছে। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২৯ লাখ ডোজ বরাদ্দ রয়েছে। বর্তমানে মজুদকৃত টিকা দিয়েই নতুন করে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে তা যে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল, তা বলা বাহুল্য। এই টিকা আসার পাশাপাশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোন কোন দেশ থেকে কত সময়ের মধ্যে কত সংখ্যক টিকা দেশে আসবে এ তথ্য জানিয়েছেন। সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাদের দেয়া তথ্যের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। টিকার সংখ্যা এবং তা কত সময়ের মধ্যে আসবে, এ নিয়ে তাদের বক্তব্যে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই দুই ধরনের বক্তব্যের ফলে টিকার সঠিক সংখ্যা এবং সময় নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন টুইট করে দেশে প্রায় ২৬ লাখ ডোজ টিকা আসার খবর দিয়েছেন। টিকা আসার খবর তিনি প্রায়ই দিয়ে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে দেশে ৭ কোটি টিকা আসবে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক এ মাসের শুরুর দিকে জানিয়েছিলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে সব মিলিয়ে ১০ কোটি টিকা আসবে। দেখা যাচ্ছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, টিকা নিয়ে এমন বিপরীতমুখী বক্তব্যের মধ্যে কোনটি প্রকৃত সত্য? পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর, নাকি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর? কার বক্তব্য সঠিক বলে ধরা হবে? তারা বলছেন, টিকার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে দেশের মানুষের জীবন-মরণ জড়িত। এখানে সঠিক তথ্য দেয়া উচিৎ। তা নাহলে, টিকা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা এবং দোলাচালের সৃষ্টি হবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর তথ্য যদি ধরা হয়, তাহলে ঐ সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ এবং তা প্রয়োগ কার্যক্রম শেষ হতে এক দশক লেগে যেতে পারে। এত দীর্ঘ সময় ধরে যদি দেশে টিকা কার্যক্রম চলতে থাকে, তাহলে আমাদের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন কার্যক্রম অত্যন্ত ধীর হয়ে পড়বে। আমরা পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে অর্থনীতির এই বিপুল ক্ষতি কোনোভাবেই বহন করতে পারবে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উপমহাদেশে টিকা কার্যক্রমের দিক থেকে আমরা যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছি। পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার মতো দেশ আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে। উন্নত বিশ্ব এখন প্রায় পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। যুক্তরাজ্যে গ্যালারি ভর্তি মানুষ নিয়ে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা চলছে। এ তুলনায় আমরা একেবারেই প্রাথমিক স্তরে রয়ে গেছি। এ অবস্থায় টিকার সংখ্যা এবং তা কবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে মন্ত্রীদের মধ্যে দুই ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। এটা সমন্বয়হীনতারই বহিঃপ্রকাশ। কার দায়িত্ব কে পালন করছে, সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। টিকা কোথা থেকে কবে কত সংখ্যক পাওয়া যাবে, তা সবসময়ই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই দেশের মানুষ শুনে আসছে এবং তারা তা প্রত্যাশা করে। এ দায়িত্ব তার। এর মাঝে যদি অন্য মন্ত্রী ভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেয়, তাহলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়া স্বাভাবিক। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করবে, নাকি যে মন্ত্রী দায়িত্বপ্রাপ্ত নন তার কথা বিশ্বাস করবে? টিকা নিয়ে এ ধরনের বিপরীতধর্মী বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যার যে দায়িত্ব তার সে বিষয়েই বক্তব্য দেয়া সমীচীন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে বিষয়টি দেখা এবং সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়ে সতর্ক করা উচিৎ।

আমরা মনে করি, টিকা নিয়ে দেশের মানুষের সামনে প্রকৃত সত্য তথ্য উপস্থাপন করে বক্তব্য দেয়া হোক। এ বক্তব্য দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেই প্রত্যাশিত। এখন আমাদের দরকার দ্রুত টিকা সংগ্রহ এবং তা প্রয়োগের বিষয়টি ত্বরান্বিত করা। তথ্যগত বিভ্রাট এবং ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এ ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দেখা দেবে। মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছি। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। দারিদ্র্যের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ক্রমাবনতি ঠেকাতে যথাশিঘ্র টিকা সংগ্রহ ও প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। টিকা সংগ্রহের বিষয়টি যেহেতু বেগবান হয়েছে, তাই কোথা থেকে কত সংখ্যক টিকা দেশে আসছে, তার সঠিক হিসাব স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেই জনগণ আশা করে। তিনিই এর প্রকৃত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরবেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন