পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষের মধ্যেও উন্নয়নের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটা সময় মানুষের মনে উন্নয়নের সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন নেই। প্রত্যেকেই উন্নয়ন করতে চায়, উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে চায়। উন্নয়ন নিয়ে তর্ক-বিতর্কেও লিপ্ত হয়। দেশের উন্নয়ন কিভাবে হচ্ছে, কোথায় কতটুকু হচ্ছে-এসব নিয়ে বিশ্লেষণ করছে। অর্থনীতিবিদরাও উন্নয়নের নানা হিসাব-নিকাষ করে মতামত ব্যক্ত করছেন। এ থেকে বোঝা যায়, দেশ উন্নয়নের দিকে ধাবিত। সরকারের ভাষায় দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। সরকার তা বলবে। বলতে হবে। কোনো সরকারই বলে না দেশে উন্নয়ন হচ্ছে না। এ কথা বিরোধী দল বলে এবং তাকে বলতে হয়। তা নাহলে, তার রাজনীতি থাকে না। বর্তমান সরকার দীর্ঘ এক যুগ ধরে ক্ষমতায়। এই ক্ষমতায় থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া, মানুষের সামনে উন্নয়নের স্বপ্ন তুলে ধরা। কতটা উন্নতি হচ্ছে, তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক থাকতে পারে। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, দেশে উন্নয়ন হয়েছে, সেটা সুষম হোক আর অসম হোক। এই উন্নয়নের দৃশ্যগ্রাহ্যতা রয়েছে। দেশের উন্নয়নের মৌলিক দিক হচ্ছে, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা। মানুষকে দরিদ্রসীমা থেকে তুলে আনা। করোনার আগে এই সীমাটি ছিল ২২ শতাংশের মতো। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি হিসাবে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা প্রায় পৌনে চার কোটি। সংখ্যাটি নেহায়েত কম নয়। সরকার এসব দরিদ্র মানুষকে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সহায়তা করে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, যার দৈনিক আয় ১.৯০ ডলার বা ১৭০ টাকা সে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এ হিসেবে বাংলাদেশে দরিদ্রসীমার নিচে থাকা পৌনে চার কোটি মানুষের কারো আয় ১৭০ টাকা বা কারো এ আয় নেই। এ হিসাব নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল এবং এসব মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে কাজ করছিল। তবে করোনার ধাক্কায় দারিদ্র্যের এ হারটি যে বেড়ে গেছে তা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে তুলে ধরা হয়েছে। কোনো কোনো সংস্থার মতে হারটি প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। এর মধ্যে নিউ পুওর বা নতুন দরিদ্র যুক্ত হয়েছে। এই দরিদ্রের সংখ্যাটি আড়াই কোটির মতো। এরা নিম্নবিত্ত থেকে দরিদ্র হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পূর্বের দরিদ্র আর নতুন দরিদ্র মিলে দেশে এখন দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে ছয় কোটির বেশি মানুষ। পরিসংখ্যানে সবসময় সঠিক তথ্য উঠে আসে না, এ কথা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমবে না বরং বেড়ে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হবে। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো। এ প্রেক্ষিতে, দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাকে দরিদ্রসীমার নিচে রেখে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টি কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক নয়।
দুই.
কাগজে-কলমে বা মুখে মুখে হিসাব দিতে আমাদের জুড়ি নেই। যে কেউ মুখে মুখে বাঘ-ভাল্লুক শিকার করে ফেলতে পারে। রাজা-উজির মারাও হয়ে যেতে পারে। বাস্তবে তা সম্ভব কিনা, এ হিসাব করে না। করোনায় একদিকে কোটি কোটি মানুষের দরিদ্র হওয়া আরেক দিকে মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে হিসাব প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, একেবারে বিপরীত মেরুর দুইটি হিসাব মুখোমুখি হয়ে রয়েছে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার মধ্যে মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি যে যৌক্তিকতার মধ্যে পড়ে না, তা সচেতন মানুষ মাত্রই বোঝে। মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২২২৭ ডলার। এ হিসেবে, বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের আয় বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বাংলাদেশের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষ প্রতি মাসে আয় করে ১৫ হাজার ৭৩৯ টাকা। দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা মানুষের মাসিক আয়ও ১৫ হাজার ৭৩৯ টাকা! যদি তাই হয়, তবে বাংলাদেশে একজনও দরিদ্র মানুষ থাকার কথা নয়। অথচ দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। তাহলে, মাথাপিছু এই আয় বাড়ল কিভাবে? এর জবাবে বলা যায়, দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা সুষমভাবে হচ্ছে না। উন্নয়ন হচ্ছে কেবল ধনীদের। এর ছোঁয়া দরিদ্র মানুষ পাচ্ছে না। ধনীদের উন্নয়ন এবং আয়-রোজগার গড় হিসাব করে দরিদ্রদের আয়ের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। মাথাপিছু হিসাবটি মূলত ধনীদের জন্য। তাদের আয় কত বৃদ্ধি পেয়েছে সেটিই ধরা হচ্ছে। এটা একটা অভাবনীয় বিষয় যে, যেখানে করোনার কারণে কোটি কোটি মানুষ বেকার ও দরিদ্র হয়ে গেছে, সেখানে ধনীদের আয় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ধনীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। এ সংখ্যার মধ্যে শত কোটি টাকার মালিকও রয়েছে। আবার কোটি টাকার নিচে লাখপতিও রয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে, মাথাপিছু আয় কেবল লাখ ও কোটিপতিদেরই বেড়েছে এবং বাড়ছে। তাদের আয় বৃদ্ধিই গড় হিসাবে ভিক্ষুক থেকে শুরু করে বেকার ও শিশুদের উপর গিয়ে পড়ছে। অবশ্য ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে কিছু আয় করলেও বেকার, শিক্ষার্থী কিংবা শিশুদের আয় বলতে কিছু নেই। তাহলে এখন যে উন্নতির কথা বলা হচ্ছে, তা কেবল চূড়ার দিকে বা লাখ ও কোটিপতিদেরই হচ্ছে। এর মূলে কিছু নেই। বলা যায়, মূল ছাড়া কচুরিপানার মতো ভেসে থাকা উন্নতি হচ্ছে। এই ভাসমান উন্নয়ন কতদিনে টেকসই হয় কিংবা মূল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে কিনা, তা এখন দেখার বিষয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের উদ্ধার না করে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। পুরনো এবং নতুন দরিদ্ররা এখন সীমাহীন কষ্টে রয়েছে। অর্থমন্ত্রী শুরুতে নতুন দরিদ্রদের কথা স্বীকার না করলেও পরবর্তীতে বলেছেন, তাদের জন্য কিছু করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সহায়তার কথা শোনা যায়নি। তবে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন শ্রমজীবী মানুষকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে দরিদ্র মানুষের শতকরা হিসাবে খুব একটা হেরফের হবে বলে মনে হয় না। এতে নতুন দরিদ্রদের জন্য কিছু নেই। ফলে নতুন দিরদ্ররা বিশেষ করে যারা এতদিন নিম্নবিত্ত হয়ে জীবনযাপন করছিল এবং উন্নতির স্বপ্ন দেখছিল, তারা এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। উন্নতি দূরে থাক তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে কিনা, তা অনিশ্চিত। তিলে তিলে একটি অবস্থান গড়ে তোলার পর তা পড়ে গেলে উঠে দাঁড় করাতে যে কত কষ্ট, তা যে অবস্থান না হারিয়েছে, সে ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। আমাদের সরকারও তা বুঝতে পারছে না। যে মানুষটি একটু একটু করে শহরে থাকার মতো অবস্থায় পৌঁছেছিল, এক ধাক্কায় তাকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। আর ফিরতে পারবে কিনা কিংবা গ্রামে গিয়ে কিছু করতে পারবে কিনা, তা অনিশ্চিত। এটা নিশ্চিত, অভাব তাদের পিছু ছাড়বে না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সরকারের মধ্যে এমন প্রবণতা বিরাজমান যে, তাদের জন্য কিছু না করলেও চলবে। তারা নিজেরাই কিছু করে নেবে। তবে তারা কি করবে, কিভাবে করবে, কোথায় করবে, তার কোনো ঠিকানা সরকার দিতে পারছে না।
তিন.
পুরনো এবং নতুন দরিদ্রের মাঝে বড় সমস্যা হয়ে রয়েছে তরুণ বেকার। বলা হচ্ছে, এখন দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক তরুণ। এই তরুণদের বেশিরভাগেরই কাজ করার সুযোগ নেই। অথচ আমাদের তরুণদের কর্মস্পৃহা রয়েছে, তাদের উদ্ভাবনী শক্তিও রয়েছে, শুধু প্রয়োগের জায়গাটি নেই। এই নেই বলেই তাদের অনেকে দেশ ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত বিশ্বের দিকে ছুটছে। ভিটামাটি বিক্রি করে, জমি বন্ধক দিয়ে দালালের হাতে সর্বস্ব তুলে দিয়ে উন্নত বিশ্বের স্বপ্নে বিভোর হয়ে সবকিছু তুচ্ছ করে তারা ছুটে চলেছে। দুর্গম জঙ্গল, তপ্ত মরু, গিরি পাড়ি দিয়ে এক দেশ হতে আরেক দেশ হয়ে সমুদ্রপথে ঝাপিয়ে পড়ছে। অনেকে পথিমধ্যে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে কিংবা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। বেঁচে থাকাদের অনেকে মানবপাচারকারির নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনো রকমে সমুদ্র পাড়ি দিতে নৌকায় চড়ে বসলেও তীরে গিয়ে ভিড়তে পারছে না, ডুবে যাচ্ছে। তাদের স্বপ্নের সলিল সমাধি হচ্ছে। কেউ বাঁচলেও ধরা পড়ছে আরেক দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। কেউ কোনো রকমে কাক্সিক্ষত দেশের তীরে গিয়ে উঠলেও ঠিকানা হচ্ছে জেল-হাজত। সর্বস্ব খোয়ানো এসব তরুণের অনেকে দেশে ফিরতে রাজী নয়। মরলে সেখানেই মরবে, এমন দৃঢ়তা নিয়েই থেকে যাচ্ছে। স্থল ও পানি পথে দুর্গম ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে পৌঁছানোর তাদের এই ব্যর্থ চেষ্টা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সংবাদ শিরোনামে দরিদ্র দেশ সোমালিয়া, ইথোপিয়াসহ অন্য দেশের সাথে বাংলাদেশের নামটি চলে আসছে। আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল, নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ন, কারো কাছে হাত পাততে হয় না, এসব স্লোগান ও কথার সাথে এ চিত্রের তখন কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং আমাদের তরুণরা যে সোনালী স্বপ্নে বিভোর হয়ে মরণযাত্রার পথিক হচ্ছে, সেটা এসব স্লোগানে কালিমা মেখে দিচ্ছে। দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। এতই যদি উন্নতি করে থাকি, তাহলে তরুণদের তো ঐ পথে যাওয়ার কথা নয়। দেশেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ স্বাবলম্বী হওয়ার পথ বেছে নেয়ার কথা। এই ব্যবস্থা কি দেশে আছে? বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সরকারি খাতে সবচেয়ে কম কর্মসংস্থান হয় বাংলাদেশে। করোনার এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন নিয়োগ নেই বললেই চলে। বরং ছাঁটাই করা হচ্ছে। অথচ প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। নিয়োগের হার কমে যাওয়ায় এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। অর্থমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগই তরুণ। এদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তার কথা অনুযায়ী, এই বিপুল কর্মপোযোগী তরুণ দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব কর্মপোযোগী বেকারদের নিয়ে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি করা কি সম্ভব? অথচ সরকার কথায় কথায় উন্নয়নের উলম্ফনের কথা বলছে। এই উলম্ফনে কি দরিদ্র ও বেকারদের সম্পৃক্ততা আছে? উন্নয়ন কি তাদের স্পর্শ করতে পারছে? এর জবাব হচ্ছে, উন্নয়ন ঐ সীমিত সংখ্যক ধনী ও অসাধারণ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যতটুকু উন্নয়ন হচ্ছে, তা কেবল তাদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এর ছোঁয়া পাচ্ছে না। এতে তরুণ বেকার শ্রেণী আশাহত ও হতাশ হয়েই নিজেদের উন্নয়ন নিজেরা করার জন্য জীবনবাজি রেখে উন্নত বিশ্বের দিকে ছুটছে। এতে উন্নয়নের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কোটি কোটি অতি দরিদ্র, নতুন দরিদ্র এবং বেকারদের এই বাস্তবতার মধ্যে উন্নয়নের কথা এখন ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। সরকার এদিকটি উপেক্ষা করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের উন্নয়নের বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছে না। কেবল মাথাপিছু আয় ও জিডিপি নামক অর্থনৈতিক সূচকের বৃদ্ধি দেখিয়ে উন্নয়নের কথা বলছে। এটা অনেকটা ‘টিপস অফ আইসবার্গ’ বা হিমশৈলীর চূড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। চূড়াটি কেবল দেখা যাচ্ছে, পানির গভীরে তার বিশাল আকৃতিটি দেখা যাচ্ছে না। আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধনি শ্রেণী এই টিপস অফ আইসবার্গ হয়ে রয়েছে, যাদের দেখিয়ে উন্নতির কথা বলা হচ্ছে। হিমশৈলীর অপ্রকাশিত বিশাল অংশের মতো হয়ে থাকা দরিদ্র মানুষগুলো অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনমানের উন্নতি স্থবির হয়ে রয়েছে। করোনা তাদের একেবারে তলানিতে নিয়ে গেছে। তাদের উঠিয়ে দাঁড় করানোর মতো উদ্যোগ সরকারের মধ্যে আছে বলে মনে হয় না।
চার.
জনসংখ্যার অর্ধেককে দরিদ্র রেখে কখনোই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সবশ্রেণীর মানুষের আনুপাতিক হারে উন্নয়ন। উন্নত বিশ্বসহ প্রত্যেক দেশেই বেকার সমস্যা রয়েছে। তবে তাদের বেকারত্বের সাথে উন্নয়নের সামঞ্জস্য রয়েছে। বেকারদের জন্য ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের দেশের তরুণ ও বেকার শ্রেণী ভাতা চায় না। তারা চায় কর্মসংস্থান। বিশ্বের খুব কম দেশই রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের মতো বিপুল তরুণ শ্রেণী রয়েছে। এই তরুণ দেশের সম্পদ। অথচ এদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তারুণ্যের অপচয় হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই তারুণ্য বেশি দিন থাকবে না। ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদার্পন করবে ২০২৯ সালে। ২০৩৩ সাল থেকে কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। ধীরে ধীরে প্রবীণপ্রধান দেশ হবে ২০৪৭ সালে। এই হিসাবে, বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে গেলে অর্থনীতির কি অবস্থা দাঁড়াবে তা কল্পনা করা যায় না। এখন থেকেই যদি বেকার তরুণদের কাজে না লাগানো যায় তবে দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। সরকারের উচিৎ দেশের বিপুল সংখ্যক দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেয়া। পুরনো এবং নতুন দরিদ্রদের তুলে এনে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা। শিক্ষিত বেকার তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সরকার মুজিববর্ষে যেভাবে গৃহ ও ভূমিহীনদের নতুন ঘর ও জমি দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে, তেমনি নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে একজন শিক্ষিত বেকার বা তরুণকে বেছে বেছে নিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার উদ্যোগ নিতে পারে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচনী প্রতিশ্রæতিতে ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার বিষয়টি বলেছিল। একযুগে এই প্রতিশ্রæতি বাস্তাবয়ন করলে দেশের অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো। এখনো এ প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করা যায়। এতে ঐসব পরিবার কিছুটা হলেও যেমন নির্ভরশীলতা পাবে, তেমনি সরকারের উন্নয়ন ধারায়ও তারা যুক্ত হতে পারবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।