Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে মুসলিমদের নিপীড়ণকারী ঔপনিবেশিক ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইন’ বাতিল করতে চায় সুপ্রিম কোর্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২১, ৬:৫৩ পিএম

স্বাধীনতার পর থেকে অসংখ্য নির্দোষ মুসলিমকে এই আইনের কারণে জেলের অন্ধকার কুটিরে জীবনের কয়েক যুগ পার করতে হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের কারণে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই সরকার এই আইন ব্যবহার করে তাদের মতের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সব মুসলিম রাজনৈতিক বন্দীদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের তৈরি এই কালাকানুন ব্যবহার করে। তবে এবার এই আইনের বাতিলের পক্ষেই মত দিল সুপ্রিম কোর্ট।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ঔপনিবেশিক আইনের অন্তর্গত। স্বাধীনতা আন্দোলনকে থামিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই আইন তৈরি হয়েছিল। মহাত্মা গাঁধী, বালগঙ্গাধর তিলককেও চুপ করানোর জন্য এই আইন ব্যবহার করেছিল ব্রিটিশরা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর এই আইনের কি আর প্রয়োজন রয়েছে? কেন্দ্রের উদ্দেশে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা মামলার শুনানিতে এই প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি এনভি রমানা।

ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে “ঔপনিবেশিক” হিসাবে বর্ণনা করে সুপ্রিম কোর্ট আজ প্রশ্ন তোলে যে আইনটি “স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও” আদৌ প্রয়োজনীয় কিনা। আইনটি প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যক্রমের জন্য মারাত্মক হুমকি এবং নির্বাহীর কোনও জবাবদিহিতা না থাকায় অপব্যবহারের “বিপুল ক্ষমতা” রয়েছে। আদালত রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে ছুতোরের হাতের করাতের সাথে তুলনা করেছে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ এ এর রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত ধারাটি করাতের সঙ্গে তুলনা করেন, যা কোনো কাঠের টুকরোর পরিবর্তে পুরো বন কাটতে ব্যবহৃত হয়।

বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্ট, এই আইন সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট সংশয় আছে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল বেনুগোপাল আদালতে জানিয়েছেন, সরকার এই আইন জারি রাখার পক্ষে। তবে এর সঙ্গে কিছু নীতিনির্দেশিকা যোগ করা যেতে পারে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ''এই আইন বাতিল করার কোনো দরকার নেই। নীতিনির্দেশিকা জুড়ে দিলেই হবে। যে উদ্দেশ্যে আইন তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণ করতেই তখন তা ব্যবহার করা হবে।''

কিন্তু প্রধান বিচারপতি বলেন, ''যদি কোনো দল তার বিপক্ষ দলের কথা শুনতে না চায়, তাহলে তারা এই আইন ব্যবহার করতে পারে। অন্যদের শাস্তি দিতে পারে।'' তার বক্তব্য, ''আমাদের চিন্তা হলো, এই আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং প্রশাসনের কোনো দায়বদ্ধতা থাকছে না।'' তিনি জানান, ''আমরা কোনো রাজ্য বা কেন্দ্রকে দায়ী করছি না। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার এখনো হচ্ছে। কতজন মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে, অথচ কারো কোনো দায়বদ্ধতা নেই।''

সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই আইন বাতিলের আবেদন করেছেন মেজর জেনারেল এস জি বমবাটকেরে। তার যুক্তি হলো, এই আইন সংবিধান বিরোধী। প্রধান বিচারপতি বলেন, ''আবেদনকারী তার সারা জীবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাই তার এই আবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা যায় না।''

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, সরকারকে আবেদনকারীর তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে সব আবেদনের একসঙ্গে বিচার হবে। পিটিআই, এনডিটিভি



 

Show all comments
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ১৫ জুলাই, ২০২১, ৯:৪৭ পিএম says : 0
    All Colonial rules and laws must be repelled in all independent countries. There is no ifs and buts.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ