Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

কঠোর লকডাউন ও বিধিনিষেধের মধ্যে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বিপজ্জনক হারে বেড়ে চলেছে। সীমিত নমুনা পরীক্ষায় গড় শনাক্তের হার ৩০ ভাগের মত হলেও দেশের কোথাও কোথাও এ হার ৬০-৭০ ভাগ পর্যন্ত উঠেছে। বিশেষত ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং অবনতির কারণে নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হলে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। এহেন প্রেক্ষাপট সামনে রেখেই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ দেশের মুসলমানদের আবহমান ঐতিহ্য হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে যে যেখানেই থাকি, ঈদের সময়ে বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ উদযাপন করা। ঈদে ঘরে ফেরার সুবিধার্থে আজ ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহন চালু রাখা হবে। এ সময় সব ধরণের গণপরিবহনে ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন রাখার পাশাপাশি যাত্রীসাধারণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে সামাজিক সংক্রমণ অনেকটাই কমিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। করেনাভাইরাস মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব এবং ঘরে অবস্থানকেই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হিসেবে সারাবিশ্বে গৃহিত হয়েছে। সেখানে সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবগুলোও সব মানুষ ঘরে থেকে সংযতভাবে পালন করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবাইকে ভারতের কুম্ভমেলার পরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কোটি মানুষের কুম্ভমেলার পরই ভারতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যখন সংক্রমণ হার সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙ্গে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখন ঈদুল আজহা উপলক্ষে লকডাউন শিথিল করায় সামনের দিনগুলোতে যে বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে, সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ, সচেতনতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকার মধ্য দিয়ের তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়।

কঠোর লকডাউনের সময় রাজপথে সেনাবাহিনীর সদস্যসহ আইনশঙ্খলা বাহিনীর টহল সত্তে¡ও শত শত মানুষকে নানা অজুহাতে রাজপথে নেমে আসতে দেখা গেছে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, সেবাদানকারি বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় বিভিন্ন যানবাহনে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ঢাকায় এসেছে এবং ঢাকা থেকে বর্হিগমন করেছে। ঈদুল আজহার সাথে ধর্মীয় অনুভুতির পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক ঐতিহ্য ও আবেগ জড়িত। একই সঙ্গে ঈদুল আজহার সাথে জড়িত আছে দেশের হাজার হাজার খামারি ও চাষির কোটি কোটি টাকা স্বার্থ। শহরের স্বচ্ছল ও মধ্যবিত্ত মানুষ গ্রামে গিয়ে কোরবানি দেয়। এর সাথে কোটি কোটি গ্রামীন দরিদ্র মানুষের স্বার্থ জড়িত থাকে। এসব নানা কারণেই ঈদের সময় কঠোর লকডাউন নিশ্চিত রাখা খুবই কঠিন বিষয়। সবকিছু বিবেচনায় রেখে ঈদযাত্রার জন্য লকডাউন শিথিল করা হলেও গণপরিবহণের শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা এবং সকলের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে গণসংক্রমণ প্রতিরোধে সকলের দায়িত্বশীল ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে হবে। বাস-ট্রেন ও লঞ্চে স্বল্প সময়ে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের ঝুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যমান লকডাউনে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাসদস্যদের মাঠে থাকার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। সব বাসস্টেশন, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে সাধারণ যাত্রী ও গণপরিবহণ চালক-কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল গরুরহাট একটি সময়োপযোগী ও স্বাস্থ্যবিধি-বান্ধব বাস্তবতা। করোনার কারণে এবার হয়তো গ্রামমুখী মানুষের ঢল আগের চেয়ে কম থাকবে। সংখ্যা আগের চেয়ে অর্ধেক হলেও তা বিশ-তিরিশ লাখের কম নয়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। ঈদের সময় বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার গতানুগতিক প্রবণতা এবার কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। এক আসন ফাঁকা রেখে কমযাত্রি নিয়ে যাতায়াত করলেও ভাড়া আদায়ে যেন স্বেচ্ছাচারিতা ও জবরদস্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন, অযোগ্য-অদক্ষ চালক এবং সড়ক-মহাসড়কের বেহালদশা নিরসনে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। রাতারাতি সড়ক-মহাসড়কে হাজার হাজার ভাঙ্গাচোরা অংশ মেরামত করা সম্ভব নয়। তবে রাস্তার সলিং উঠে যাওয়া স্থান ও খানাখন্দ মেরামতের জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ছাড়াও স্থানীয় পৌরসভা , উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ব্যস্ত মহাসড়কে থ্রিহুইলার ও অযান্ত্রিক পরিবহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। রাস্তার উপর গরু-ছাগলের হাট ও দখলদারমুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঈদে লাখ লাখ মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করা এমনিতেই খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। এবারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিরোধ, দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর পাশাপাশি যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখার কঠিন কাজটি সুসম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন