Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিচারপতিদের জন্য কোটি টাকার গৃহঋণ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ কোটি টাকা পর্যন্ত সরল সুদে ঋণ পাবেন। এ ঋণ সুবিধা কার্যকর হয়েছে গত ১ জুলাই থেকে। এ বিষয়ে গত ২৭ জুন একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ। এর আগে সরকারি কর্মচারী, অধস্তন আদালতের বিচারক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। এই ঋণকে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা’ নামে অবহিত করা হয়েছে।

নীতিমালায় সুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সবোর্চ্চ ৯ শতাংশ সরল সুদ অর্থাৎ সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা যাবে না। এর মধ্যে ঋণগ্রহিতা ব্যাংক রেটে সমহারে সুদ পরিশোধ করবেন। বর্তমানে ব্যাংক রেটের হার ৪ শতাংশ। সুদের বাকি অর্থ সরকার ভর্তুকি দেবে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন এবং পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিচারপতিগণের এই ঋণ সুবিধা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ হচ্ছে-ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এ ছাড়া সরকার অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে এ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। গৃহ নির্মাণ ঋণের অর্থ বলতে বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য একক ঋণ, জমিসহ বাড়ি ক্রয়ের জন্য একক ঋণ, জমি ক্রয়সহ বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণ, বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য গ্রুপ ভিত্তিক ঋণ এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য ঋণকে বোঝাবে।

ঋণ প্রাপ্তি যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঋণ গ্রহীতাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হবে। গৃহ নির্মাণের জন্য আবেদনের সর্বশেষ সময়সীমা হবে অবসরে যাওয়ার এক বছর আগ পর্যন্ত। রাষ্ট্র প্রদত্ত সুদ ভর্তুকি অবসর গ্রহণের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত প্রাপ্য হবেন। অর্থাৎ কেউ যদি ঋণ নিয়ে অবসরে চলে যান তাহলে তাকে ৯ শতাংশ হারেই সুদ পরিশোধ করতে হবে। একজন আবেদনকারী কেবলমাত্র একবারই এ নীতিমালার আওতায় গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ঋণ প্রাপ্তির শর্তে বলা হয়েছে, এ নীতিমালার আওতায় একজন আবেদনকারী দেশের যে কোনো এলাকায় গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। ঋণ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ভ‚মি ও বাড়ি/ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হতে হবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে আবেদনকারীর একটি ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। ওই হিসাবের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহিতার বেতন/ভাতা/পেনশন এবং গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের ঋণ বিতরণ ও কিস্তি আদায় সংক্রান্ত সমুদয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ প্রদান করা হবে। তবে সরকারি সংস্থা কর্তৃক নির্মাণকৃত ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাট’ এর শর্ত শিথিলযোগ্য। ঋণের মেয়াদকাল ও আদায়পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২০ বছর।

ঋণের কিস্তি ঋণ গ্রহিতার বেতন হিসাব থেকে ঋণের মেয়াদ পর্যন্ত মাসিক ভিত্তিতে কর্তন করা হবে। ঋণগ্রহিতার অবসর গ্রহণের পর সরকার কোনো সুদ ভর্তুকি প্রদান করবে না।

ঋণ গ্রহিতার মৃত্যুবরণ করলে ঋণের অপরিশোধিত কিস্তি তার প্রাপ্য আনুতোষিক হতে জমা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি আনুতোষিক দ্বারা সম্পূর্ণ ঋণ আদায় নিশ্চিত না হয়, তাহলে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে তার উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে ঋণের অপরিশোধিত অংশ আদায়যোগ্য হবে।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগ মিলিয়ে এখন ৯৮ জন বিচারপতি কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৬ জন রয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছেন ৯২ জন বিচারপতি।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিক ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে সরকার। ২০১৮ সালে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এতে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা গৃহ নির্মাণ বাবদ ঋণ প্রদানের সুবিধা রাখা হয়। সরকারি কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালার আওতায় অধস্তুন আদালতের বিচারকেরাও গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থ মন্ত্রণালয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ