পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মোকাবিলায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনার দ্রুত বিস্তারের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সঠিক ও সময়োপযোগী বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের এই কমিটির ভূমিকা ও কাজ কী হবে, সে সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেনতা সৃষ্টি, চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শ প্রদান, টিকাগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ ও সহায়তা দেয়ার কাজ করবে। এই কাজগুলো যে খুবই প্রয়োজন ও জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না, এ রকম সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকারের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেনতার মাত্রা অতি কম। অজ্ঞতা ও আর্থিক সামর্থ্যরে অভাবও এজন্য কম দায়ী নয়। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর মানুষের জীবন-জীবীকা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই চাইলেও অনেকের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। এতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উত্তরোত্তর বাড়ছে। ভারত থেকে আসা ভয়াবহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রীতিমত আতংক সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ লকডাউন, তার মধ্যে সম্প্রতিক কঠোর লকডাউনও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে। আশংকার এই প্রেক্ষাপটে ব্যাপক গণসচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণ ও গণটিকাদানের বিকল্প নেই। এই কঠিন করোনাকালেও অর্থনীতি যতটা সম্ভব সচল রাখা, উৎপাদন, বিশেষ করে রফতানিমুখী শিল্পে বহাল রাখার চেষ্টা চালানো হয়েছে, যার ভালো ফল পাওয়া গেছে। রফতানি বেড়েছে। প্রবাসী আয়ও বেড়েছে। এতে অর্থনীতি করোনার প্রচন্ড ধাক্কা অনেকটাই সামালে নিতে পেরেছে। অর্থনীতির গতি, উৎপাদন ও জীবন-জীবীকার সচলতা ধরে রাখতে সফলভাবে করোনা মোকাবিলার প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
করোনা ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে। আগে এর প্রকোপ মূলত শহরাঞ্চলেই সীমিত ছিল। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এই চিত্রের দ্রুত পরিবর্তন করে দিয়েছে। প্রথমে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এখন গ্রাম ও শহরের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। ঢিলেঢালা লকডাউন এক্ষেত্রে বড়রকমে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। লকডাউনে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেকেই বিশেষত কর্মজীবী মানুষ ও তাদের পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। যানবাহন, ট্রেন ও ফেরী-লঞ্চ বন্ধ থাকা তাদের আটকাতে পারেনি। যে যেমনভাবে পেরেছে শহর ছেড়েছে। গত ঈদের সময়ও এটা প্রত্যক্ষ করা গেছে। আবার লকডাউন উঠে গেলে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে এসেছে দলে দলে। এই গণস্থানান্তরে করোনা শহর থেকে যেমন গ্রামে পৌঁছেছে, তেমনি গ্রাম থেকে শহরে উঠে এসেছে। এখন গ্রাম-শহর এক বরাবর। এটা নিঃসন্দেহে এটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। স্বীকার করতেই হবে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসচেতনতা কম এবং চিকিৎসাসুবিধাও অপ্রতুল। করোনার পরীক্ষার সুযোগ ও চিকিৎসাসুবিধা কোনো কোনো এলাকায় এত কম যে, নেই বললেই চলে। ফলে গ্রামের মানুষ করোনা বা তার উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে বড় বড় শহরে বিশেষ করে রাজধানীতে ছুটে আসছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। বেড, আইসিইউ, অক্সিজেন ইত্যাদির প্রকট সংকট সেখানে বিদ্যমান। সফলভাবে করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে ওইসব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসারসুযোগ ও সরঞ্জাম বৃদ্ধির তাকিদ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতেও করোনা চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ জরুরি বলে তারা মনে করেন।
চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করাই উত্তম-এরকম একটি প্রবাদ আছে, যার সত্যতা অনস্বীকার্য। করোনা এমন একটা ভাইরাল ব্যাধি, যার কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক নেই। ইতোমধ্যে এর কয়েকটি টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, যা দিলে মানুষের দেহে করোনাপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা করোনা থেকে রেহাই পাওয়ার বা সুরক্ষা লাভের কতিপয় বিধি নির্ণয় করেছেন, যার মধ্যে ঘন ঘন হাত ধোয়া, হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, গেলে মানুষের সংশ্রব থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়। এইসঙ্গে ব্যাপক আকারে করোনাপরীক্ষা এবং পজিটিভ হলে আইসোলেশনে থাকার কথাও তারা বলেছেন। সবশেষে আছে টিকা। টিকার করোনাপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ৮০ শতাংশের ওপর। দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সঙ্গতকারণেই আমাদের প্রতিরোধের দিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এই গুরুত্বের পটভূমিতে সরকারের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনকে যথোপযুক্ত, কার্যকর ও উত্তম সিদ্ধান্ত হিসাবে অভিহিত করা যায়। কমিটিতে মসজিদের ইমামসহ সমাজের বিভিন্ন স্তর ও পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। আসলে করোনা ও করোনারোধ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে গণসচেনতা বৃদ্ধি ছাড়া উপায় নেই। জনগণ যদি সচেতন হয়, স্বাস্থ্যবিধি মান্য করে এবং টিকাগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয় ও নেয় তবে সহজেই করোনার বিস্তার রুখে দেয়া সম্ভব হতে পারে। আমরা আশা করবো, দ্রুত কমিটি গঠন করা হবে। যেহেতু সমাজের প্রতিনিধিত্বশীলদের সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে, সুতরাং তার নির্দেশনা, পরামর্শ ও সেবা গণসমর্থন ও গণমান্যতা লাভ করবে। পরিশেষে করোনা মোকাবিলায় প্রত্যাশিত সফলতা আসুক, আমরা একান্তভাবে সেটাই কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।