Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইংল্যান্ডের উচ্ছ্বাসে মিশে থাকলো বিতর্কও

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৪ এএম

১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর পেরিয়ে গেছে ৫৫টি বছর! দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার ইউরোয় ফাইনালের দেখা পেয়েছে ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে কাল রাতে ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে খরা কাটিয়েছে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। এই জয়ে উদ্বেলিত ইংল্যান্ডের সাবেক ডিফেন্ডার গ্যারি নেভিল ‘জাতীয় ছুটি’ ঘোষণার অনুরোধ করেছেন। এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রথম ও শেষ পাতাজুড়ে ছিল ইংল্যান্ডের ইউরো ফাইনালে ওঠার খবর, যার বেশির ভাগ শিরোনামেই একটি কথা প্রাধান্য পেয়েছে ‘ফাইনালি!’ অর্থাৎ অবশেষে!
ব্রিটেনের জাতীয় ট্যাবলয়েড ডেইলি মিররের শিরোনাম এক কথায় এটাই- ‘ফাইনালি!’ আরেক সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার এক ধাপ এগিয়ে শিরোনাম করে, ‘এটাই কি সেরা স্বপ্ন?’ ইন্ডিপেন্ডেন্টের শিরোনাম, ‘ইতিহাস-রচয়িতারা’। টাইমসের প্রধান ফুটবল প্রতিবেদক হেনরি উইন্টার সংবাদমাধ্যমটিতে তার প্রতিবেদনে লেখেন, ‘ইংল্যান্ড ফাইনালে- ফাইনাল!- এই শব্দগুলো সবচেয়ে অদ্ভুত, সুন্দর ও বিরল- সেটা লেখা, পড়া ও কল্পনায়।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘৩০ জুলাই, ১৯৬৬ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড বড় একটি শিরোপার জন্য লড়বে। ফাইনালে লড়বে! ৫৫ বছরের যন্ত্রণা কি শেষ হতে চলেছে?’
সাউথগেট ইংল্যান্ড কোচ হয়ে আসার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম তার সমালোচনা করতে কুণ্ঠা করেনি। এবার সেই সাউথগেটেরই হাত ধরে ফাইনালে ওঠার পর কোচের প্রশংসা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। ডেইলি মেইলে প্রতিবেদক মার্টিন স্যামুয়েল লিখেছেন, ‘অজনপ্রিয় এবং হারলে শাস্তি মাথা পেতে নেওয়ার মতো সাহস তার আছে। ইংল্যান্ড জিতেছে। ফাইনালে উঠেছে। তার প্রতি সুবিচার। এই (ফাইনালে ওঠা) ফলটা দিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তকে আগলে রাখা যায়। দল এবং টিম ম্যানেজমেন্ট এটার যোগ্য।’
এখন ফাইনালের অপেক্ষা। ইতালিকে যদি হারিয়ে দেয় ইংল্যান্ড! তাহলে কী হতে পারে- এ নিয়ে টাইমসে লিখেছেন ম্যাট ডিকিনসন, ‘এই উৎসব যদি খুব ভালো লাগে, যা একসময় যন্ত্রণা হয়ে ছিল- এখন ইংল্যান্ড যদি ইউরো ২০২০ জিতে নেয়, তাহলে কী প্রবল উন্মত্ততা সৃষ্টি হবে, ভেবে দেখুন!’
তবে এই উৎসবে কিছুটা কালিমা লেপে দিয়েছে বেশ কিছু বিতর্ক। এর মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত, যা গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্যও। এর পর থেকে- ‘ওটা পেনাল্টি ছিল?’ এই প্রশ্নের ঝড় চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে ড্র ছিল। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে রাহিম স্টার্লিং ডেনমার্কের বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তিও ইংল্যান্ডের পক্ষে পেনাল্টির রায় বহাল রাখে। বেচারা ক্যাসপার স্মাইকেল! পেনাল্টি থেকে হ্যারি কেইনের প্রথম শটটি তিনি রুখে দিলেও ফিরতি বলে ইংল্যান্ড স্ট্রাইকারের শট ফেরাতে পারেননি।
২-১ গোলের হারে ইউরোর ফাইনালে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ হয় ডেনমার্কের। পেনাল্টির এ সিদ্ধান্তে খেপেছেন ডেনমার্কের কোচ কেসপার হিউলমান্দ। গোটা ম্যাচে ইংল্যান্ডের সঙ্গে টক্কর দিয়েছে ডেনিশরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য এভাবে নির্ধারিত হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি হিউলমান্দ, ‘ম্যাচ এভাবে নির্ধারিত হবে সেটার জন্য খুব হতাশ লাগছে... এটা এমন পেনাল্টি যা পেনাল্টি হওয়া উচিত নয়। সে কারণে বিরক্ত লাগছে।’
ডেনমার্কের লেফট উইংব্যাক জোয়াকিম মেয়লে ও উইঙ্গার ম্যাথিয়াস ইয়েনসেনের সঙ্গে স্টার্লিংয়ের কোনো শারীরিক স্পর্শ হয়েছিল কি না, ভিডিও রিপ্লে বারবার দেখেও অনেকে নিশ্চিত হতে পারেননি। হিউলমান্দ সরাসরি বলেন, ‘ম্যাচ হারা এক জিনিস, যেটা হতেই পারে। কিন্তু এভাবে হারটা ভীষণ হতাশার। এটা হজম না করে কেমন লাগছে তা নিয়ে বলা খুব কঠিন। তিক্ততা নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে।’
বিতর্ক আরও আছে। স্টার্লিং বল নিয়ে বক্সে ঢোকার সময় অতিরিক্ত একটি বল তার ডান পাশে পড়ে ছিল। মানে, মাঠের ভেতর অতিরিক্ত আরও একটি বল ছিল। কিন্তু রেফারি খেলা থামাননি। এর কয়েক সেকেন্ড পরই পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। মাঠে অতিরিক্ত একটি বল নিয়ে প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হয়েছে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটকেও। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘মাঠে অতিরিক্ত একটা বল দেখেছি। জানি না ওটা কীভাবে ঢুকল, এবং কী করা যেত। কিন্তু আমি দেখেছি যেখানে ওটা ঘটলেও গোল বাতিল হয়নি। পেনাল্টি কীভাবে হলো সেটা দেখিনি। তবে অনেকেই এ নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছেন।’
১৯৯২ ইউরোর রূপকথা নতুন করে লেখার পথে ছিল ডেনমার্ক। সেবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার দলের ম‚ল তারকা ক্রিস্টিয়ান এরিকেসেন ডেনমার্কের প্রথম ম্যাচে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়লেও দুর্দান্ত খেলে সেমিফাইনালে উঠে এসেছিল তারা। কিন্তু বিতর্কিত সেই পেনাল্টি ভেঙেছে ডেনিশদের। সেই সঙ্গে একটি প্রশ্নও তুলেছে—যা টুইটারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো আলবিসেলেস্তে’র কর্ণধার ও আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের প্রতিবেদক, ‘এটা পেনাল্টি হয় না কিন্তু খেলাটা তো ওয়েম্বলিতে।’ প্রচ্ছন্ন খোঁচাটার মানে নির্বোধও বোঝে। ঘরের মাঠে বিড়ালও যে বাঘ!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ