Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিরোপার আরও কাছে আকাশীরা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৭ এএম

কোপা আমেরিকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকার রোমাঞ্চ জিতে শিরোপার পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। গতকাল ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ ব্যবধানে ড্র থাকায় টাইব্রেকারে ফলাফল নির্ধারণ হয়। টাইব্রেকারে আকাশী জার্সিধারীরা ৩-২ গোলে কলম্বিয়াকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ব্রাজিল। আগামী রোববার রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে ব্রাজিলকে মোকাবেলা করবে আর্জেন্টিনা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায়। ১৪ বছর পর কোপার ফাইনালে ব্রাজিলকে পেল আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দু’দল। ওই ম্যাচে সেলেসাওরা ৩-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তুলেছিল।
শ্বাসরুদ্ধকর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শুরু থেকেই কলম্বিয়াকে চাপে রাখে আর্জেন্টিনা। একের পর এক আক্রমণে লিওনেল মেসিরা ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন কলম্বিয়ার রক্ষণভাগকে। ফলে আর্জেন্টিনা গোলও পায় খুব তাড়াতাড়ি। প্রথমার্ধের গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গিয়েছিলেন মেসিরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কলম্বিয়া গোল শোধ করলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে। যেখানে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বীরত্বে রোমাঞ্চ জিতে নেয় আর্জেন্টাইনরা।
ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা আর্জেন্টিনা এগিয়ে যেতে পারতো ৪ মিনিটে। এসময় বল পায়ে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কলম্বিয়ার ডি বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। বল দেন পেনাল্টি স্পটের কাছে থাকা নিকোলাস গঞ্জালেসকে। তবে তার হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৭ মিনিটে গোল পায় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। জিওভানি লো সোলসোর কাছ থেকে ডি বক্সে বল পান মেসি। কলম্বিয়ান এক ডিফেন্ডার বলে পা ছোঁয়ালেও দ্রুতই তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক খুঁজে নেন লাউতারো মার্টিনেজকে। ইন্টার মিলানের এই ফরোয়ার্ড দারুণ আড়াআড়ি শট বল পাঠান জালে। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা (১-০)। কোপার চলতি আসরে এটি মেসির পঞ্চম অ্যাসিস্ট, টুর্নামেন্টের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। গোল হজম করার পর ঘুরে দাঁড়ায় কলম্বিয়া। ৮ মিনিটে সমতায় ফেরার দারুণ সুযোগও পায় তারা। বাঁ দিক থেকে একটি ক্রস ডি বক্স পেয়ে যান কুয়াদরাদো। তার শট ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রাখেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজ। ৩৬ মিনিটে কর্ণার থেকে পাওয়া বলে প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিল কলম্বিয়া। কিন্তু কুয়ারদোর কর্ণারে পাওয়া বলে মিনার নেওয়া হেড লাগে ক্রসবারে। বিরতির আগে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল আর্জেন্টিনার সামনেও। কিন্তু ম্যাচের ৪৪ মিনিটে মেসির নেওয়া কর্ণারে গঞ্জালেসের হেড ফিরিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক ডেভিড অস্পিনা। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হওয়ায় ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টাইনরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে দু’দলই চেষ্টা করে গোল পেতে। আর্জেন্টিনা বেশ ক’টি সুযোগ নষ্ট করলেও সফল হয় কলম্বিয়া। বিরতিতে তিন পরিবর্তন এনে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় কলম্বিয়া। তারা সমতায় ফিরে ম্যাচের ৬১ মিনিটে। এসময় ফ্রি কিক পায় কলম্বিয়া। নিজেদের অর্ধে পাওয়া ওই ফ্রি কিক দ্রুত শট করেন কারডোনা। আর্জেন্টিনার ডি বক্সের ভেতরে বল পেয়ে দৌড় শুরু করেন লুইস দিয়াস। দারুণ গতিতে ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে শটে গোল করেন তিনি (১-১)। কিছুক্ষণ পর ডি মারিয়াকে মাঠে নামান আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি। খেলার গতিপথও যায় বদলে। একের পর এক আক্রমণ চালায় আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু তাতে মিলছিল না কাক্সিক্ষত গোলের দেখা। এমনকি কলম্বিয়ার গোলরক্ষক অস্পিনাকে ফাঁকি দিয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি তারা।
ম্যাচের ৭৩ লাউতারো মার্টিনেজের অবিশ্বাস্য মিসে এগিয়ে যেতে পারেনি আর্জেন্টিনা। গোল পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডি মারিয়াকে বাধা দিতে চেয়েছিলেন গোলরক্ষক অস্পিনা। বলের নাগাল পাননি তিনি। নিজে শট না নিয়ে ডি মারিয়া খুঁজে নেন মার্টিনেজকে। গোললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বারিওস বরাবর শট নেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড। ফিরতি বলে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ডি মারিয়াও। ৮১ মিনিটে ডি মারিয়ার পাস ডি বক্সে পেয়ে এক ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে শট নেন মেসি। সাইডবারে লেগে ফিরে তার শট। একটুর জন্য ফিরতি বলের নাগাল পাননি লাউতারো মার্টিনেজ। পাল্টা আক্রমণে কলম্বিয়াও আপ্রাণ চেষ্টা করে এগিয়ে যেতে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে একাধিক গোলের দেখা পায়নি কেউ। ফলে ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে। রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে ব্যবধান গড়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার তিনটি শট ঠেকিয়ে দলকে ফাইনালে পৌঁছান তিনি।
শেষ আটে টাইব্রেকারে উরুগুয়েকে হারিয়ে আসা কলম্বিয়া এবার আর পারেনি। শুটআউটে হুয়ান কুয়াদরাদোর প্রথম শটে গোল হলেও দাভিনসন সানচেস ও ইয়েরি মিনার পরের দু’টি শট বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ। মিগুয়েল বোরহার বুলেট গতির শট খুঁজে নেয় জাল। এদউইন কারদোনার শট আবার বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান মার্টিনেজ। সঙ্গে সঙ্গে এক আসর পর ফাইনালে যাওয়ার উচ্ছ¡াসে মাতে আর্জেন্টিনা। টাইব্রেকারে দলের হয়ে প্রথম শটে গোল করেন মেসি। রদ্রিগো দ্য পল মারেন আকাশে। পরের দু’টি শট ঠিকানাতেই পাঠান লেয়ান্দ্রো পারেদেস ও লাউতারো মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার পঞ্চম শট নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ