Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৩০ বছর ধরে মসজিদে কোরআনের আয়াত ও হাদিসের ক্যালিগ্রাফি আঁকেন অনীল কুমার!

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ৫:৩২ পিএম

হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও ৩০ বছরে কমপক্ষে ২০০ মসজিদের মেহরাব ও দেয়ালে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের ক্যালিওগ্রাফি এঁকেছেন তিনি। মসজিদ কর্তৃপক্ষ পারিশ্রমিক নেওয়ার জন্য জোর করলেও কখনো কখনো অনীল কুমার চোহান তা ফিরিয়ে দেন। কথায় আছে, ভাষার কোনো ধর্ম নেই। ভারতের হায়দরাবাদের চোহান কাজেকর্মে সেটিই প্রমাণ করেছেন। এ বিষয়ে অনীল কুমার চোহান বলেন, যেকোনো ধর্মের উপাসনালয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করতে আমার ভালো লাগে। ভিন্ন এক প্রশান্তি অনুভব করি। এ জন্য এসব জায়গায় কাজ করে পারিশ্রমিক নেই না। আমার কাছে মসজিদ, মন্দির এবং গির্জার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

মসজিদে ক্যালিগ্রাফির কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে বিরূপ পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে তাকে। অনীল কুমার বলেন, একদিন হায়দরাবাদের এক মসজিদে কাজ করতে গেলে মসজিদ কর্তৃপক্ষের একজন আমি হিন্দু হওয়ায় মসজিদে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলো না। আমি কাজ করবো না–এ কথা না বলে হায়দরাবাদের প্রসিদ্ধ মাদ্রাসা জামিয়া নিজামিয়ায় চলে যাই। তারা আমাকে অজু করে পবিত্রতার সঙ্গে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ফতোয়া দেন। এরপরে ওই মসজিদে গিয়ে কাজ করে দেই। হায়দরাবাদের প্রাচীন অঞ্চল চার মিনারের অদূরেই অনীল কুমারের ছোট একটি দোকান আছে। যেখানে তিনি আরবি, উর্দু, হিন্দি, তেলেগু এবং ইংরেজি ভাষায় সাইনবোর্ড লেখার কাজ করেন। তিনি অনলাইনের মাধ্যমেও হস্তলিপির কাজ পান। যার থেকে মাসে কমপক্ষে ৩৫০ ডলার উপার্জন হয়। অনিল আল-জাজিরাকে বলেন, ‘খুব দরিদ্র পরিবারের ছেলে আমি। ক্লাস টেনে থাকতেই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়। সে সময় পড়াশোনার পাটও চুকেবুকে যায়। ‘ড্রয়িংয়ে ভালো ছিলাম। ভাবলাম সাইনবোর্ডে লেখাকে পেশা হিসেবে নিলে সমস্যা হবে না।’ অনিল জানান, কোরআনের আয়াতের পাশাপাশি হিন্দু দেব-দেবীর ছবিও ৩০টির মতো মন্দিরে এঁকেছেন তিনি। অসংখ্য দরগাহ ও আশ্রমের দেয়ালে তার আঁকা ছবি শোভা পাচ্ছে।

ক্যালিগ্রাফি তার নেশা। কিন্তু কোনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যালিগ্রাফি শেখেননি অনীল। বরং হায়দরাবাদে উর্দু ভাষায় বিভিন্ন দোকানের সাইনবোর্ড পেইন্ট করতে গিয়ে তিনি ক্যালিগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যান। অনীলের ভাষায় আমি একজন গরিব হিন্দু পরিবারের ছেলে। পরিবারকে সাহায্য করতে ১০ম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করতে পারিনি। আমি ভালো আঁকতে পারতাম। তাই আমি সাইনবোর্ড পেইন্টার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা করি। তিনি বলেন, আমি ৩০টি মন্দিরে হিন্দু দেব-দেবীর ছবিও এঁকেছি। অনেক দরগা এবং মঠ-আশ্রমেও ছবি এঁকেছি। ১০০টির বেশি মসজিদে আমি টাকার বিনিময়ে ক্যালিগ্রাফি করেছি। তবে আরও ১০০টি মসজিদে কাজ করেছি বিনা পয়সায়। অনীল বলেন, আমি এসব জায়গার গেলে এক ধরনের আত্মিক টান অনুভব করি। তাই টাকা-পয়সার প্রতি খুব একটা মন টানে না।

তবে উর্দু ভাষা শেখার জন্য কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেননি অনীল। আবার কোনও ধর্মীয় স্কুলেও পড়াশোনা করেননি তিনি। ৩০ বছর আগেও হায়দরাবাদে উর্দুর ব্যাপক প্রচলন ছিল। কারণ, সেখানকার অধিকাংশ মানুষ এবং দোকানদার মুসলিম ছিল। তাই ‍উর্দু শেখা ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না। তাই তিনি এই ভাষার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন অনীল। কিন্তু না বুঝে লিখতে লিখতেই ধীরে ধীরে উর্দুর প্রেমের পড়ে যান অনীল। ধীরে ধীরে উর্দু ভাষার বর্ণমালা শিখে ফেলেন তিনি। অবসরে উর্দু চর্চা করতেন তিনি। এভাবেই এই ভাষা রপ্ত করেন অনীল। অনীল বলেন, ১৯৯০-র দশকে আমার কাছে সবচেয়ে বড় কাজ আসে। তখন আমাকে হায়দরাবাদের আইকনিক নূর মসজিদে কুরআনের আয়াত লেখার কাজ দেয়া হয়। তিনি বলেন, আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। কারণ তারা আমার মেধাকে চিনতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, এজন্য শহরের এলিটরা আমার জন্য তাদের দুয়ার খুলে দিয়েছে। সূত্র : আল জাজিরা



 

Show all comments
  • Dadhack ৩০ জুন, ২০২১, ৯:৫৭ পিএম says : 0
    May Allah accept this man as a muslim InshaAllah. Ameen
    Total Reply(0) Reply
  • Dadhack ৩০ জুন, ২০২১, ৯:৫৭ পিএম says : 0
    May Allah accept this man as a muslim InshaAllah. Ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ