পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মার্কেটে যাওয়া-আসা এবং ভিড়ের ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে ক্রেতারা এখন ঘরে বসেই কাক্সিক্ষত পণ্য অনলাইনে কিনতে পারছে। কখনো আগাম দাম দিয়ে, কখনো পণ্য পাওয়ার পর দাম পরিশোধের মাধ্যমে অনলাইনে বেচাকেনা চলছে। অনলাইনে কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে বহু উদ্যোক্তা এবং কুরিয়ার ও পার্শ্বেল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ খাতে কর্মসংস্থানও হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যামাজন ও আলীবাবাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বলা হয়ে থাকে, এসব প্রতিষ্ঠানই আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। বেশিরভাগ অর্থই এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে গচ্ছিত থাকবে। এতে ব্যাংকিং কার্যক্রম সংকুচিত হওয়ার উপক্রম হতে পারে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও অনলাইন ব্যবসা প্রসার লাভ করছে। বিশেষ করে করোনাকালে নিয়ন্ত্রিত চলাফেরা ও মার্কেট সীমিত হওয়ায় ক্রেতারা অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি বেশি ঝুঁকেছে। এ প্রেক্ষিতে, অনেক বেকার ও গৃহিনীরা ব্যবসার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে ই-ভ্যালি, দারাজ, আলেশা মার্ট, বিক্রয় ডটকমসহ অনেক বড় বড় অনলাইন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়া আরও হাজার হজার অনলাইনশপ রয়েছে। তবে অনলাইনে কেনাবেচার এই বিপুল ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে প্রতারক চক্রও সক্রিয় রয়েছে। তারা প্রতারণার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ছে। এছাড়া প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত অনলাইন শপগুলোর মধ্যে বৈষম্যও সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেনের ক্ষেত্রে কার্ডের ব্যবহার বন্ধ করে দেয় ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। কার্ডে লেনদেন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ই-ভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডটকম বিডি। ই-ভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা বিপুল ছাড় দিয়ে লোকসানে পণ্য বিক্রি করছে। যে কারণে দেশের ই-কমার্স ব্যবসায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ভালো ও সৎ ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ভবিষ্যতে এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
প্রযুক্তির এ যুগে অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এটি একটি অপরিহার্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যানজট এড়িয়ে মার্কেটে যাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে মানুষ এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ছে। ক্রেতারা ঘরে বসে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে বা পণ্য পাওয়ার পর দাম দিয়ে কাক্সিক্ষত পণ্য কিনতে পারছে। অনলাইনে এখন এমন কোনো জিনিস নাই যা কিনতে পাওয়া যায় না। মাছ-গোশত, চাল-ডাল, ফল-ফলাদি, পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য ক্রেতারা কিনতে পারছে। তবে বিপুল এই অনলাইন মার্কেটে প্রতারণাও বিস্তৃত হচ্ছে। ভুয়া পেজ খুলে এবং কম দামে চটকদার জিনিপত্র উপস্থাপন করে আগাম অর্থ নিয়ে তা সরবরাহ না করে প্রতারণা করছে। কিংবা ক্রেতা যে পণ্য অর্ডার করেছে তার পরিবর্তে নিম্নমানের অন্য পণ্য সরবরাহ করছে। অনেক সময় পণ্য অর্ডার দিয়ে সময়মতো না পাওয়া, পছন্দ না হলে ফেরত দিয়ে আগাম পরিশোধ করা অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে পণ্যের কোন পেইজটি অথেনটিক তা শনাক্ত করা ক্রেতাদের পক্ষে দুরুহ হয়ে পড়ছে। এমন অসংখ্য পেইজ রয়েছে যেগুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা জন্য নানা চটকদার অফার দিয়ে থাকে। সরাসরি বিদেশ থেকে পণ্য এনে দেয়ার কথা বলে ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম অর্থ নিয়ে অরিজিনাল পণ্যের পরিবর্তে লোকালি কপি করা বা কাস্টমাইজ পণ্য সরবরাহ করে। এতে ক্রেতা প্রতারণার শিকার হন। এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ফলে ই-কর্মাসে লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নীতিমালার অন্যতম বিষয় হচ্ছে, ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা ঠেকাতে আগে পণ্য বুঝে পেয়ে পরে দাম পরিশোধ করা। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গ্রাহক পণ্য বুঝে পাওয়ার পর ডেলিভারি বার্তা দিলে বিক্রেতা পণ্যের মূল্য পাবে। এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গেটওয়ের মাধ্যমে এ অর্থ লেনদেন হবে। গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, তারা যেন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ বা নগদের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে কেনাকাটা করে। তারা যেন আগাম নগদ অর্থ পরিশোধ না করে। যারা অস্বাভাবিক অফার দেয়, তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে ই-ভ্যালি, আলেশা মার্টসহ অন্য অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে আগে টাকা নেয় পরে পণ্য সরবরাহ করে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ই-ভ্যালির দেনা পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকার চলতি সম্পদ দিয়ে কোনো অবস্থাতেই এই দায় পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এ হিসাব থেকে বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের অর্থ সঞ্চিত করে অন্য কাজে ব্যবহার করছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রিম টাকা নিয়ে যদি এক-দেড় মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় পর পণ্য ডেলিভারি দেয় তাহলে বুঝতে হবে তারা গ্রাহকের টাকা জমিয়ে অন্য কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে। তা নাহলে, লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করার কারণ থাকতে পারে না। তারা বলছেন, দশ হাজার টাকা করে একশ’ বা তার বেশি ক্রেতার কাছ থেকে যদি অগ্রিম টাকা নিয়ে দেরিতে পণ্য সরবরাহ করে তবে ঐ সময়ে গ্রাহকের সঞ্চিত অর্থ তারা অন্য কাজে বিনিয়োগ করে লাভবান হয়। এমনকি সঞ্চিত বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে যদি প্রতিষ্ঠান সটকে পড়ে তাহলে ক্রেতার কিছুই করার থাকবে না। ফলে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় ভোক্তার এই ভোগান্তি রোধে পণ্য বুঝে পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধের নীতিমালা চালু করছে। এতে ভোক্তারা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আমরা চাই, উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতটি দ্রুত প্রসার লাভ করুক। তবে এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। একজন উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান কতটা অরিজিনাল বা অথেনটিক তা নিশ্চিত করার বিধান থাকা অবশ্যক। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। অস্বাভাবিক অফার বা অতি দামী জিনিস স্বল্পমূল্যে পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাদেরকে আগে পণ্য বুঝে পাওয়া পরে দাম পরিশোধ করার নীতি অবলম্বন করতে হবে। আগামী কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে অনলাইনে গরু বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রেও ক্রেতাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে তারা প্রতারণার শিকার না হন। আমরা মনে করি, যেসব বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়া অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সতর্ক থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।