Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেপথ্যে বাইডেন, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের বরফ কি গলছে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২১, ৬:০৫ পিএম

দিল্লিতে বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সউদী আরবের মাটিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেল’ যোগাযোগের সংবাদ প্রকাশ্যে এসেছে এবং একইদিন তাজিকিস্তানে এসসিও (সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন) নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে একই মঞ্চে ভারত-পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা। আগামী রোববার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি রওনা হচ্ছেন ওয়াশিটংনের উদ্দেশে।

এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি অদৃশ্য সুতোর সংযোগ রয়েছে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। যার একটি দিক ধরা রয়েছে ওয়াশিংটনের জো বাইডেন প্রশাসনের হাতে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো এবং আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার নির্বিঘ্নে ঘটাতে যে ভাবে হোক উপমহাদেশে শান্তি বজায় রাখা জরুরি আমেরিকার। আর সেই লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই নীরবে সক্রিয় জো বাইডেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া (যার মধ্যে কাশ্মীরও রয়েছে) যাতে অন্তত একটা পর্যায়ে পৌঁছয়, সে জন্য সচেষ্ট তিনি। কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তান ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠুক, এবং তার রেশ ছড়িয়ে পড়ুক গোটা অঞ্চলে— এটা বাইডেন প্রশাসনের জন্য সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত।

সূত্রের মতে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মোদি সরকারের তরফে জম্মু ও কাশ্মীরে মোবাইল সংযোগ চালু করার সিদ্ধান্তের পিছনেও আমেরিকার চাপ ছিল। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে যখন কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন মোদি, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার কয়েক ঘণ্টা আগে তাজিকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী একটি যৌথ বিবৃতিতে সই করছে ভারত এবং পাকিস্তান, এসসিও-র অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ, মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে এসসিও-ভুক্ত দেশগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে লড়াই করবে।

সূত্রের মতে, ডোভালের নেতৃত্বে গত দু’মাসে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেল’ কথাবার্তা চালু হয়েছে। গত বছর লাগাতার পাকিস্তানের তরফ থেকে ভারত-পাক সীমান্তে সংঘর্ঘ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা এবং রক্তপাতের পরে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কিন্তু সীমান্ত অনেকটাই শান্ত। কাশ্মীর-সহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার বার্তাও এসেছে ইসলামাবাদের তরফে। সামনেই রয়েছে সন্ত্রাসবাদে আর্থিক পুঁজি জোগানের উপর আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থা এফএটিএফ-এর বৈঠক। সেখানে ধূসর তালিকা থেকে নেমে কালো তালিকায় চলে যাওয়ার ভয় পাকিস্তানের উপর রয়েছে। সূত্রের খবর, পাকিস্তানকে এক ধরনের চাপ ও ভারতকে অন্য ধরনের উপহার (কোভিড-সহায়তা) দিয়ে নিজেদের স্বার্থে শান্তি কিনতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র।

অবশ্য এটাও মোদি সরকারকে বিবেচনার মধ্যে রেখে এগোতে হচ্ছে যে, পাকিস্তান-বিরোধিতার মধ্যে বিজেপির জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অন্যতম শিকড় প্রোথিত। একই ভাবে পাকিস্তানকেও (তা সে সামরিক নেতৃত্ব বা ইমরান সরকার) ঘরোয়া রাজনীতিতে কাশ্মীরকে আবেগকে জিইয়ে রাখতেই হয়। তাই ভারত-পাক ‘ব্যাক চ্যানেলের’ পাশাপাশি বাইরে পারস্পরিক সংঘাতের চিত্রনাট্যটিকে বহাল রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, আফগানিস্তানে ভারত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে রয়েছে। আবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচির কথায়, ‘এটা আফগানিস্তানের মানুষের উপর নির্ভর করে কাদের তারা বন্ধু হিসাবে বেছে নেবেন এবং তাদের কতটা জায়গা দেবেন। আমরা আফগানিস্তানে বিদ্যুৎ, বাঁধ, স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক প্রকল্প গড়ছি। গোটা বিশ্ব জানে পাকিস্তান আফগানিস্তানের জন্য কী নিয়ে এসেছে!’ পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান-সহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। পাকিস্তান অবশ্যই সহায়ক আবহাওয়া তৈরি করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য ও পাকাপাকি ব্যবস্থা নিক, যাতে তাদের জমি ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের ঘাঁটি না হয়।’ সূত্র: ফরেন পলিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ