পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপণীয়তা একই সুত্রে গাঁথা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আড়িপাতার আইনগত বৈধতা বা ‘ল’ফুল ইন্টারসেপশন’র ব্যবহার নিয়েও দেশে-বিদেশে বিতর্ক রয়েছে। সেখানে যদি কোনো প্রাইভেট কোম্পানী কোনো উপযুক্ত আইনগত বৈধতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়াই সাধারণ মানুষের চলাচল ও ব্যক্তিগত গোপণীয় তথ্য হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে, তা নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রাজপথে শত শত ক্লোজ সার্কিটন ক্যামেরা বসানো এবং মানুষের চলাচলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও তথ্য পাচারের বিষয়ে এমন আশঙ্কা ও অভিযোগ উঠেছে। পিপ দ্য প্লেস নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত ক্যামেরাগুলো দিয়ে পুরো ঢাকাশহর এবং আশপাশের শহর ও প্রবেশ পথ দিয়ে যাতায়াতকারি যানবাহন ও পথচারিদের চলাচল লাইভ সম্প্রচারের সুযোগ থাকায় এ নিয়ে পাবলিক সেফটি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা তথা নিরাপত্তা ক্ষুন্নের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, পিপ দ্য প্লেসের উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে এবং মাসিক ও বাৎসরিক নির্দিষ্ট হারে টাকার বিনিময়ে যেকোনো ব্যক্তির জন্য এই অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে পুরো ঢাকা শহরের অধিকাংশ জনবহুল এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ভোগরা বাইপাস, এমনকিস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পর্যন্ত রাজপথে ২ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে তারা নজরদারি সম্প্রসারিত করেছে। পেশাদার অপরাধি, ছিনতাই-অপহরণকারীরা এই অ্যাপ ব্যবহার করে যেকোনো টার্গেটেড ব্যক্তির চলাচলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপণীয়তার জন্য এ ধরনের অ্যাপের ব্যবহার নিরাপত্তাহীনতার মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আড়িপাতা ও নজরদারি ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে সংশয় ও অনিশ্চয়তা রয়েছে। সরকারি বাহিনীর পক্ষ থেকেও ব্যক্তিগত তথ্যফাঁসের মত অভিযোগ বা প্রযুক্তির অপব্যবহারের অনেক নজির রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রাজপথে বসানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থাই নেই। পিপ দ্য প্লেস সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর বা ডিএমপি’ অনুমোদন ছাড়াই শুধুমাত্র স্থানীয় থানার অনুমোদন নিয়ে এসব ক্যামেরা বসিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। এটি অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক ঘটনা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তাদের এই অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই শহরের যানজটসহ কোন রাস্তার কি অবস্থা তা জানার সুযোগের কথা বললেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্যামেরায় রাস্তায় চলাচলকারি গাড়ি ও ব্যক্তির লাইভ স্ট্রিমিং ও স্থিরচিত্র সরাসরি পাওয়ার সুযোগ থাকায় পেশাদার অপরাধিরা এই অ্যাপের মাধ্যমে টার্গেটেড ব্যক্তিদের উপর নজরদারি ও গোপণীয়তা লঙ্ঘণের সুযোগ নিতে পারে। যে কাউকে অনুসরণ করে তার ক্ষতি সাধন করতে পারে।
একান্ত ব্যক্তিগত অডিও-ভিডিও ও ম্যাসেজিংয়ের তথ্য ফাঁসের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপণীয়তা রক্ষা অন্যতম সাংবিধানিক অধিকার। ব্যক্তিগত গোপণীয়তা ক্ষুন্নের অভিযোগে বিটিআরসি মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোকে উচ্চ আদালতের পক্ষ সতর্ক করা হয়েছিল। এখন পিপ দ্য প্লেস অ্যাপ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। নিজেদের বাড়ি, অফিস, কারখানায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও উৎসাহিত করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরণের ক্যামেরার সাহায্যে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ও মামলার অপরাধ শনাক্তকরণে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আবার বেশকিছু ঘটনায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার তথ্য গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগও শোনা গেছে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে ব্যক্তিগত গোপণীয়তা লঙ্ঘণের শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন থাকলেও কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা ও অনুমোদন ছাড়াই বেসরকারি কোম্পানীর হাতে এ ধরণের নজরদারির ব্যবস্থা নাগরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে গণ্য হওয়া স্বাভাবিক। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির যথাযোগ্য ও সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই। তবে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপণীয়তা ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকলে তার অনুমোদন দেয়া সমীচিন নয়। ঢাকার যানজট নিরসনে গুগল অ্যাপ ব্যবহৃত হচ্ছে, ট্রাফিক বিভাগের তরফ থেকেও কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এফএম রেডিও’র পক্ষ থেকে ঢাকা শহরে ট্রাফিক আপডেট দেয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে নজরদারি ব্যবস্থা সহজলভ্য হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপণীয়তা ও নিরাপত্তার শর্ত লঙ্ঘণের কোনো বাণিজ্যিক তৎপরতা চলতে দেয়া যায় না। পিপ দ্য প্লেসসহ এ ধরণের যেকোনো উদ্যোগ নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অনতিবিলম্বে এ ধরনের ক্যামেরা বসানো বন্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।