নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে সাউদাম্পটনে মাঠে গড়িয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের ফাইনাল। তবে গতকাল ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে টসই হতে পারেনি নির্ধারিত সময়ে! বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় বৃষ্টি থামলেও অনেক্ষণ অপেক্ষা শেষে রাত পৌনে ৮টায় দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। তবে এই ফাইনালকে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ফাইনাল ভেবে আক্ষেপের কিছু নেই! কেননা, এর আগেও দু’টি টেস্ট ফাইনাল দেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই ফাইনালগুলোর একটি আবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, সেই সময় পাঁচদিনের টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করে তোলার চিন্তা শুরু করে আইসিসি। সেই চিন্তার ফসল হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। যে আসরের ফাইনাল মাঠে গড়িয়েছে ২০২১ সালের ১৮ জুন। টি-টোয়েন্টি ও ওডিআই বিশ্বকাপের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ বা লিগ পদ্ধতিতে নয় বরং দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ভিত্তিতে খেলেছে দলগুলো। সেখান থেকে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া ভারত ও নিউজিল্যান্ড জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৪ বছরের ইতিহাসে আগের দুই আসরের ফাইনালের ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। ১৯০৯ সালে তৎকালীন ইমপেরিয়াল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) প্রতি চার বছর অন্তর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ত্রিদেশীয় টেস্ট টুর্নামেন্টে আয়োজনের পরিকল্পনা করে। বলে রাখা ভালো, এটি কোন বিতর্কিত টুর্নামেন্ট ছিল না। বর্তমান আইসিসি ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ইমপেরিয়াল ক্রিকেট কাউন্সিল নামে পরিচালিত হতো।
টেস্ট টুর্নামেন্টের প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ মাঠে গড়ায় ১৯১২ সালে। তবে সেসময় বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ছয় শীর্ষ অজি ক্রিকেটার এই টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এছাড়া তখনকার দক্ষিণ আফ্রিকা দল তেমন শক্তিশালী ছিল না। ফলে পুরো সিরিজ জুড়ে একক আধিপত্য ছিল আয়োজক ইংল্যান্ডের।
ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট টুর্নামেন্টের কোন ফাইনাল ছিল না। ছয় ম্যাচে চার জয় আর দুই ড্র নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। ওই আসরের মোট নয়টি ম্যাচের মধ্যে প্রথম আটটি ছিল তিনদিনের। ইংল্যান্ড- অস্ট্রেলিয়ার শেষ ম্যাচে কোন সময়সীমা না থাকলেও চারদিনের বেশি গড়ায়নি। অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ক্রিকেটাররা না থাকা, খর্ব শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের একতরফা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার করাণে প্রথম আসরের পরই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টটির মৃত্যু হয়।
১৯৯০ সালে আইসিসি টেস্ট বিশ্বকাপের পরিকল্পনা ভেস্তে গেলে নয় বছর পর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের পরিকল্পনা করে। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা গ্রুপ পর্বে নিজেদের মধ্যে একটি করে ম্যাচ খেলে। কলকাতা, লাহোর ও কলম্বোতে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়। নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে এই আসরের ফাইনালে বাংলাদেশে করার সিদ্ধান্ত নেয় এসিসি।
তখনও টেস্ট স্ট্যাটাস না পাওয়া বাংলাদেশ এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের ফাইনাল আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঐ ফাইনাল দিয়ে স্বাধীনতার পর প্রথম টেস্ট ক্রিকেট ফেরে বাংলাদেশে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ইনিংস ও ১৭৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম শিরোপা জেতে পাকিস্তান।
দুই বছর পর ২০০১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসর আয়োজন করে এসিসি। ততদিনে টেস্ট খেলার মর্যাদা পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। ফলে এই আসরে খেলার বাংলাদেশের সামনে কোন বাঁধা থাকে না। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই সেই আসরের ফাইনাল ভেন্যু হিসেবে ভারত বা শ্রীলঙ্কাকে নির্ধারণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এসিসি পাকিস্তানকে ফাইনাল ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব দিলে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় ভারত।
টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম দল বাংলাদেশ অবশ্য সেই আসরে তেমন কিছু করতে পারেনি। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ইনিংস ও ২৬৪ রানের বড় ব্যবধানে হারে টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ইনিংস ব্যবধানে হারলেও টেস্টের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। দশ উইকেট তুলে নেয়া মুরালির সাথে যৌথভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান আশরাফুল।
গ্রুপ পর্বের খেলা শেষের প্রায় ৬ মাস পর ২০০২ সালের মার্চে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। কুমার সাঙ্গাকারার অনবদ্য ২৩০ রানের উপর ভর করে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে লঙ্কানরা। তারপর অবশ্য আর কোনো এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আসর আয়োজন করেনি এসিসি। ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। মাঠে না গড়ালেও দিন হিসেবে সেই মহাযাত্রা গতকাল ভারত-নিউজিল্যান্ডের দ্বৈরথ দিয়েই সাউদাম্পটনে শুরু হয়ে গেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।