নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে বিধ্বস্ত করে দ্বিতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিলো বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ ৮-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ভুটানকে। প্রথামার্ধে বিজয়ীরা ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিল। লাল-সবুজদের হয়ে সাবিনা তিনটি এবং সিরাত জাহান স্বপ্না, কৃষ্ণা রানী সরকার, ঋতুপর্ণা চাকমা, মাসুরা পারভীন ও তহুরা খাতুন একটি করে গোল করেন। এর আগে ২০১৬ সালে প্রথমবার সাফের ফাইনালে খেলেছিলেন সাবিনারা। ওই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হেরে রানার্সআপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।
টুর্নামেন্টে শেষ চারের প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বে বাংলাদেশ, এমন আত্মবিশ্বাস ছিল লাল-সবুজের মেয়েদের। তবে জয়ের ব্যবধানটা এতো বড় হবে তা হয়তো ভাবেননি কৃষ্ণা রানী সরকার-সিরাত জাহান স্বপ্নারা। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা একচেটিয়া প্রধান্য বিস্তার করে খেলে ভুটানের রক্ষণভাগকে কোনঠাসা করে ফেলে। সাবিনা-কৃষ্ণা-স্বপ্নাদের দাপুটে ফুটবলের সামনে অনেকটাই অসহায় দেখা গেছে ভুটানি ডিফেন্ডারদের। ম্যাচে একবারের জন্য হলেও ভুটানের ফরোয়ার্ডরা বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। ‘ম্যাচের প্রথম সেকেন্ড থেকেই গোল পাওয়ার চেষ্টা করবো’, আগেরদিন অনুশীলনে এসে এমন আশার বানী শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশের তারকা ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। কাল হলোও তাই। ম্যাচের প্রথম আক্রমণ থেকেই গোল আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। ২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে আসা পাস ধরে ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না ভুটানের গোলরক্ষক সঙ্গীতা মংগেরকে কাটিয়ে বল পাঠান জালে, এগিয়ে যায় বাংলাদেশ (১-০)। কিন্তু দুঃসংবাদ হলো ১৩ মিনিটে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের আঘাতে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন ম্যাচের প্রথম গোলদাতা স্বপ্না। কিন্তু তাতেও ব্যাঘাত ঘটেনি লাল-সবুজ মেয়েদের গোল উৎসবে। স্বপ্না মাঠ ছাড়ার পর আরো সাতবার উল্লাসে মাতেন মারিয়া মান্ডরা। ম্যাচের ১৮ মিনিটে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন সাবিনা। এসময় মাঝ মাঠ থেকে মারিয়া মান্ডার পাস ধরে বল নিয়ে এগিয়ে সাবিনা বক্সে ঢুকলে ভুটানের গোলরক্ষক সঙ্গীতা জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তাকে ফাঁকি দিয়ে দারুণ শটে সহজেই গোল করেন সাবিনা (২-০)। বলা যায় পুরো ম্যাচেই ভুটানের রক্ষণভাগকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে বাংলাদেশ। ৩০ মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা পায় কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। ঋতুপর্ণার ক্রস থেকে তারকা ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী দারুণ হেডে গোল করলে স্কোর দাঁড়ায় ৩-০। মিনিট পাঁচেক পর ভুটানের গোলরক্ষক সঙ্গীতার হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বলে টোকা দিয়ে গোল করেন ঋতুপর্ণা চাকমা (৪-০)। এই ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধেও গোলক্ষুধা কমেনি মাসুরা পারভীন-তহুরা খাতুনদের। সমান দক্ষতার সঙ্গে দ্বিতীয়ার্ধেও খেলতে থাকে বাংলাদেশ দল। ফাইনালের ম্যাচের কথা মাথায় রেখেই হয়তো কোচ ছোটন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্ডা, শিউলি আজিম ও কৃষ্ণা রানী সরকারকে তুলে নেন। তাদের বদলে মাঠে নামেন তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়র, নীলুফার ইয়াসমিন ও স্বপ্না রানী। এই চারজন নামার পর খেলায় গতি আরও বেড়ে যায়। বাংলাদেশের একের পর এক আক্রমণে ভেঙে যায় ভুটানের রক্ষণদূর্গ। ফলে দ্বিতীয়ার্ধে আরও চার গোল পায় সাবিনা বাহিনী। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে সানজিদা আক্তারের পাস থেকে বল পেয়ে সাবিনা করেন নিজের দ্বিতীয় ও দলের হয়ে পঞ্চম গোল (৫-০)। তিন মিনিট পর ম্যাচের ষষ্ঠ গোলটি করেন মাসুরা পারভীন (৬-০)। ৮৭ মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড তহুরা গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৭-০। ম্যাচের যোগকরা সময়ে (৯০+৩ মিনিট) নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাবিনা (৮-০)। ফলে শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। চলমান সাফে দুই হ্যাটট্রিকসহ ৮ গোল করে সবাইকে ছাড়িয়ে এককভাবে সোনার বুটের দাবিদার সাবিনা। তার পেছনেই রয়েছেন ৪ গোল করা নেপালের অঞ্জু তামাং, বাংলাদেশের সিরাত জাহান স্বপ্না ও পাকিস্তানের নাদিয়া খান। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ২০ গোল করেছে বাংলাদেশ দল। বিপরীতে একটি গোল হজম করতে হয়নি তাদের। গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপকে ৩-০, পাকিস্তানকে ৬-০ ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ‘এ’ গ্রুপ সেরা হয়েই শেষ চারে নাম লেখায় বাংলাদেশ। আর সেমিতে ভুটানকে ৮-০ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখে। প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে আগামী সোমবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলবে লাল-সবুজের মেয়েরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।