Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চোক্সী অপহরণে অভিযুক্ত কে এই রহস্যময়ী?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২১, ৪:৪০ পিএম

ভারত থেকে পলাতক মেহুল চোক্সী মামলায় হঠাৎ ভেসে ওঠা নাম বারবারা জারাবিকা আসলে কে? তিনি কি বান্ধবী? না অপহরণকারী? মেহুল যে ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র অ্যান্টিগার নাগরিকত্ব নিয়েছেন, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউনের কথায় বারবারা মেহুলের বান্ধবী। এমনকি ব্রাউনের দাবি, বারবারার সঙ্গে ছুটি কাটাতেই ডমিনিকায় গিয়েছিলেন মেহুল।

যদিও মেহুলের দাবি তাকে অপহরণ করা হয়েছে। আর অপহরণ করিয়েছেন তার এই ‘বান্ধবী’ই। জেরায় মেহুল বলেছেন, তাকে বাড়িতে সকালের নাস্তায় নিমন্ত্রণ করেছিলেন বারবারা। সেখানেই অপহরণ করা হয় তাকে। মেহুলের স্ত্রী প্রীতি চোক্সীরও দাবি, তার স্বামীর অপহরণের নেপথ্যে রয়েছেন বারবারাই। প্রীতি এ-ও বলছেন, বারবারা ভারত সরকারের সঙ্গে যুক্ত। তাকে ব্যবহার করেই অ্যন্টিগার নাগরিক মেহুলকে ক্যারিবিয়ানে দ্বীপপুঞ্জেরই অন্য দ্বীপরাষ্ট্র ডমিনিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। ডমিনিকায় মেহুলের নাগরিকত্ব নেই। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এর ফলে তাকে ডমিনিকা থেকে ভারতে নিয়ে আসা সহজ হবে। যদিও প্রীতি তার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। বলেছেন, নেটমাধ্যমে বা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বারবারার যে ছবি প্রচার করা হচ্ছে, তার সঙ্গে মেহুলের ‘বান্ধবী’র মুখের মিল নেই। প্রীতি বলেছেন, অ্যান্টিগায় মেহুলের বাড়ির পাশেই ছিল ওই মহিলার বাড়ি।

বারবারার পরিচয় নিয়ে প্রথম থেকেই ধোঁয়াশা ছিল। নেটমাধ্যমেও ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম কিংবা লিঙ্কড ইনে তার সম্পর্কে বিশেষ তথ্য নেই। নেই তেমন ছবিও। লিঙ্কড ইনে বারবারার একটি প্রোফাইলে তাকে বুলগেরিয়ার সম্পত্তিতে বিনিয়োগের এজেন্ট বলে দাবি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রিয়েল এস্টেট এবং সেলসে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ক্রেতাদের পরিষেবা দেয়ার ব্যাপারেও বেশ দক্ষ তিনি। পড়াশোনা করেছেন লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস-এ, লেখা ছিল লিঙ্কড ইনের প্রোফাইলেই। তবে সেই প্রোফাইল সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসতেই সেখান থেকে মুছে ফেলা হয় তথ্যটি। সরিয়ে দেয়া হয় প্রোফাইলে দেয়া বারবারার ছবিটিও। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকসও বিষয়টি জানার পর বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বারবারা জারাবিকা নামে কোনও ছাত্রী কখনও তাদের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেননি।

টুইটারেও বারবারার রহস্যময় উপস্থিতি। প্রোফাইল ছবির মুখের অধিকাংশই ঢাকা চুলে। ২০১২ সাল থেকে টুইটারে থাকলেও গত ন’বছরে একটি মাত্র টুইট করেছেন তিনি। সেই টুইটও একটি খবর। মূল্যবান একটি ছবি কিনে তার পর সেটি পুড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে। টুইটারে তার অনুগামী মাত্র ১১ জন। তবে এর মধ্যে ১ জন ছাড়া বাকি সকলেই ভারতীয়। ইনস্টাগ্রামে বারবারার অনুগামী সংখ্যা ১৩০০। তাদেরও অধিকাংশই ভারতীয়। তারও মধ্যে অনেকে আবার গুজরাতের বাসিন্দা। তবে বারবারার এই অনুগামীদের অনেকেই মেহুল পর্ব সামনে আসার পর তাকে ফলো করা শুরু করেছেন বলে অনুমান। ইনস্টায় অবশ্য মাত্র ৭টি ছবি পোস্ট করেছেন বারবারা। বেশির ভাগই সৈকতে এবং স্বল্পবাসে তোলা ছবি। কিছু কিছু ছবিতে ইয়ট কিংবা হেলিকপ্টারেও দেখা গিয়েছে বারবারাকে।

অ্যান্টিগা বা বুলগেরিয়া থেকে পাওয়া ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্য থেকে অবশ্য বারবারা সম্পর্কে কোনও খোঁজ মেলেনি। এমনকি ওই নামে কোনও মহিলার অস্তিত্বই এখনও নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি গোয়েন্দারা। বারবারার নাম সত্যিই বারবারা কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মেহুলের স্ত্রী প্রীতিও। তার আরও প্রশ্ন, ‘মেহুলের অপহরণের পর উধাও হয়ে গিয়েছিলেন বারবারা। যদি তিনি অপহরণ না-ই করে থাকবেন, তবে অ্যান্টিগার পুলিশকে বিষয়টি জানাননি কেন?’

মঙ্গলবার ভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন বারবারা। দাবি করেছেন, মেহুলের সঙ্গে বহু বার একান্তে থাকার সুযোগ হয়েছিল তার। অপহরণ করার হলে অনেক আগেই করতে পারতেন। বাড়িতে ডেকে এনে অপহরণ করার দরকার পড়ত না। বারবারা জানিয়েছেন, মেহুলের নাম যে মেহুল চোক্সী, তিনি যে ভারতে এক বিশাল ব্যাঙ্ক প্রতারণার মামলায় যুক্ত সে ব্যাপারে নাকি জানতেনই না তিনি। মেহুল তাকে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘রাজ’ হিসাবে। ওই সংবাদ সংস্থাকে ফোনে বারবারা এ কথাও জানান যে মেহুলই তাকে নানা ভাবে ঘনিষ্ঠতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এমনকি নানারকম সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথাও বলেছিলেন। বারবারা তাতে সাড়া দেননি। তিনি ওই বন্ধুত্বকে কাজের স্তরেই রাখতে চেয়েছিলেন।

বারবারা জানিয়েছেন, মেহুলের ব্যক্তিত্ব ভাল লেগেছিল তার। তবে মেহুলই মূলত তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল-সহ বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার অ্যাপে নিয়মিত কথা হত তাদের। মেহুলের সঙ্গে সান্ধ্য ভ্রমণ, রাতের খাবার এমনকি কফি খেতেও গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। বারবারা ওই সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মেহুল তাকে একটি হিরার আংটি এবং ব্রেসলেট উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। দিন কয়েক আগে যখন তিনি মেহুলের বিষয়ে জানতে পারেন, তখন ওই আংটি এবং ব্রেসলেট দোকানে নিয়ে গিয়ে পরখ করান তিনি। তাকে জানানো হয়, দু’টিই খুব ভাল জাতের নকল হিরা। বারবারা জানিয়েছেন, তার প্রেমিক রয়েছে জেনেও তাকে চুম্বন করতে চেয়েছিলেন মেহুল। বাধা দেয়ায় তিনি অসন্তুষ্ট হন। অবশ্য এই সব তথ্যই সংবাদ সংস্থাকে ফোনে জানিয়েছেন বারবারা। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করলেও এখনও প্রকাশ্যে আসেননি তিনি। সূত্র: এবিপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ